এক দিন হত ১৯ ঘণ্টায়! পৃথিবী-দিবস দীর্ঘ হওয়ার কারণ খুঁজছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা
এক দিন হত ১৯ ঘণ্টায়! পৃথিবী-দিবস দীর্ঘ হওয়ার কারণ খুঁজছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা
কয়েক বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে এক দিন হত ১৯ ঘণ্টায়। কিন্তু এখন একদিন হচ্ছে ২৪ ঘণ্টায়। কীভাবে এক দিনের দৈর্ঘ্য এতটা সময় বাড়ল। তার কারণ অনুসন্ধানে নেমেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কী এর কারণ? তা ব্যাখ্যা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি ধীর হয়ে যাওয়ার ফলেই তা হয়েছে।
প্রতি শতাব্দীর প্রতিটি দিনের দৈর্ঘ্য বাড়ছে
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চাঁদের প্রভাবে পৃথিবীতে জোয়ারের ফলে যে ভূ-চৌম্বকীয় ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়, তার ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীর হচ্ছে ক্রমশ। এর ফলে প্রতি শতাব্দীর প্রতিটি দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২.৩ মিলিসেকেন্ড বেড়ে যাচ্ছে। কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলছে। ফলে পৃথিবী দিবস এখন বেড়ে গিয়েছে।
একদিনের দৈর্ঘ্য এখন ২৪ ঘণ্টার থেকে বেশি!
কয়েক বিলিয়ন বছর আগে এক পৃথিবী দিবস ছিল ১৯ ঘণ্টার। তা এখন বেড়ে হয়েছে ২৪ ঘণ্টা। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক ঘড়ি পরিমাপ করে দেখেছেন একদিনের দৈর্ঘ্য এখন ২৪ ঘণ্টার থেকে বেশি হচ্ছে। এটি আমাদের টাইম কিপিং চাড়া জিপিএস এবং আধুনিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিভিন্ন প্রযুক্তিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে।
ছোট দিনের একটি রেকর্ড তৈরি হয়েছিল এবছরই
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, ২০২২ সালের জুন মাসে আমরা গত অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে ছোট দিনের একটি রেকর্ড তৈরি করেছি। কিন্তু এই রেকর্ড সত্ত্বেও ২০২০ সালে থেকে অবিচলিত গতি আরও মন্থরতার দিকে চলে গিয়েছে। দিনগুলি ফরে দীর্ঘ হতে শুরু করেছে। তবে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে নেমে তা নিয়ে রহস্য রয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতি শতাব্দীতে প্রতিদিন প্রায় ০.৬ মিলিসেকেন্ড করে ছোট হয়
বিজ্ঞানীদের মতে বিগত ২০ হাজার বছর ধরে অন্য একটি প্রক্রিয়া বিপরীত দিকে কাজ করছে, যার ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন দ্রুততর হয়। যখন বরফ যুগ শেষ হয়, তখন মেরু বরফের শিট গলে ভূ-পৃষ্ঠের চাপ কমে যায়। পৃথিবীর আবরণ ক্রমাগত মেরুগুলির দিকে অগ্রসর হয়। গ্রহের ঘূর্ণনের হার যখন বৃদ্ধি পায়, তখন ভর পৃথিবীর অক্ষের দিকে চলে আসে। এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রতি শতাব্দীতে প্রতিদিন প্রায় ০.৬ মিলিসেকেন্ড করে ছোট হয়।
ভূমিকম্প ১.৮ মাইক্রোসেকেন্ডের দৈর্ঘ্য বাড়িয়েছিল
এছাড়া কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর অভ্যন্তর ও পৃষ্ঠের মধ্যে সংযোগও কার্যকর হয়। বড় ভূমিকম্প দিনের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করতে পারে, যদিও তা হয় সাধারণত খুবই অল্প পরিমাণে। জাপানে ২০১১ সালে ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। তা ১.৮ মাইক্রোসেকেন্ডের দৈর্ঘ্য বাড়িয়েছিল। তারপর স্বল্প সময়ের জন্য আবহাওয়া বা জলবায়ুও পৃথিবীর ঘূর্ণনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
পাক্ষিক ও মাসিক জোয়ারের চক্রগুলি গ্রহের উপর প্রভাব ফেলে
পাক্ষিক ও মাসিক জোয়ারের চক্রগুলি গ্রহের উপর বিস্তর প্রভাব ফেলে। এর ফলে দিনের দৈর্ঘ্য এক মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত পরিবর্তন হয়। ১৮.৬ বছর পর্যন্ত সময়কাল ধরে দিনের দৈর্ঘ্যের রেকর্ডে জোয়ারের পরিবর্তন দেখা হয়েছিল। তাতে পরিবর্ত লক্ষ্যণীয় হয়েছে। বায়ুমণ্ডলের প্রভাব, সমুদ্রের স্রোতের ভূমিকাও এ জন্য দায়ী হতে পারে। যদি এই ধারা চলতেই থাকে, তবে আমাদের একটি লিপ সেকেন্ড অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন হবে।
পাহাড়ের গুহার পাথর থেকে মিলছে ইতিহাস, বলছে দেশের ১০০০ বছরের খরার কথা