মঙ্গলে ছিল এক কিলোমিটার গভীর সমুদ্র, সাম্প্রতিক মহাকাশ গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
মঙ্গলে ছিল এক কিলোমিটার গভীর সমুদ্র, সাম্প্রতিক মহাকাশ গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
মঙ্গলে একটা সময়ে বিশাল জলরাশি ছিল। শুধু জলরাশি বললে ঠিক বলা হবে না, মঙ্গলে ছিল বিশাল সমুদ্র। কারণ সেই সমুদ্রের গভীরতা ছিল হাজার ফুটেরও বেশি। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। অর্থাৎ গবেষণার পরে মঙ্গলকে আর রুক্ষ্ম, শুষ্ক গ্রহ বলে মনে করলে চলবে না।
মঙ্গল আদতে লাল গ্রহ। তপ্ত লোহার মতো মঙ্গলের রং। কিন্তু মঙ্গলের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ফলে গরমের লেশমাত্র ভাগও নেই। হিমাঙ্কের তাপমাত্রার থেকে অনেক মঙ্গলের তাপমাত্রা। স্বাভাবিকভাবেই এই গ্রহে যা কিছু জলরাশি তা বরফ হয়ে থাকতে চায়। তার উপর বায়ুমণ্ডল খুব পাতলা এবং খুব ঠান্ডা হওয়ার কারণে বরফ ছাড়া আর কোনও জলের অস্তিত্ব নেই এখানে।
তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় কিন্তু ভিন্ন দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলেও জলরাশি ছিল। ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে মঙ্গল গ্রহে ৩০০ মিটার অর্থাৎ প্রায় হাজার ফুট গভীর সমুদ্র ছিল। এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছিল গত ১৭ নভেম্বর। তারপর থেকেই মঙ্গলে সমুদ্রের অস্বিত্ব নিয়ে চর্চা চলছে।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মঙ্গলে সমুদ্রের উপস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা করেন। সেন্টার ফল স্টার অ্যান্ড প্ল্যানেট ফর্মেশনের প্রফেসর মার্টিন বিজারো একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, মঙ্গল গ্রহে বরফে ভরপুর গ্রহাণু বর্ষণ হয়। এই কাণ্ড গ্রহেৎ বিবর্তনের প্রথম ১০০ মিলিয়ন বছরে ঘটেছিল।
এই গবেষণায় আর একটি আকর্ষণীয় দিক যা উঠে এসেছে, তা হল- গ্রহাণুগুলি জৈব অণু বহন করে, যা জীবনের জন্য জৈবিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বরফের গ্রহাণুগুলি যে কেবল লাল গ্রহে জল পরিবরণ করেছিল, এমনটা নয়, সেই সঙ্গে আবার অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো বায়োলজিক্যাল উপাদানগুলিও বহন করেছিল। ফলে মঙ্গলে জলের সঙ্গে জীবনও ছিল।
সাম্প্রতির এই গবেষণায় বলা হয়েছে, মঙ্গল গ্রহের ওই প্রাচীন মহাসাগরগুলি কমপক্ষে ৩০০ মিটার গভীর ছিল। এক কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত পৌঁছেছিল মহাসাগরগুলি, এমন প্রমাণও মেলে। গবেষকরা বলেন, মঙ্গলে তখন এতটাই জল ছিল যে, পৃথিবীতেও এতটা জল ছিল না। সেই সময়ে পৃথিবীর সঙ্গে অন্য একটি গ্রহের বিশাল সংঘর্ষ হয়েছিল বলেও গবেষণার উঠে আসে। ফলে তখন পৃথিবীতে নেমে এসেছিল বিপর্যয়।
গবেষকরা বলেন, পৃথিবীর সঙ্গে অন্য এক গ্রহের সংঘর্ষের ফলে আর্থ-মুন সিস্টেম গঠিত হয়েছিল। একইসঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত সম্ভাব্য জীবনকে নিশ্চিহ্ন করেছিল সেই সংঘর্ষ। সাম্প্রতিক গবেষণার ফলে বিজ্ঞানীদের কাছে সত্যিই আরও দৃঢ় প্রমাণ চলে এল। প্রমাণ পেলেন গবেষকরা যে, পৃথিবীর থেকে অনেক আগে মঙ্গলে প্রাণের উদ্ভবের পরিবেশ ছিল।
চাঁদের সবথেকে কাছে নাসার ওরিয়ন মহাকাশযান, পৃথিবীতে রওনা হওয়া আগে শেষ ছবি