তৃণমূলে ফিরতে রাজীবকে কেন ত্রিপুরা ছুটতে হল, উঠে আসছে যে সব চাঞ্চল্যকর কারণ
অবশেষে বিজেপি থেকে পাত্তাড়ি গুটিয়ে তৃণমূলে ফিরলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই তৃণমূলে ফিরে আসার সোপান তৈরি করে রেখেছিলেন তিনি।
অবশেষে বিজেপি থেকে পাত্তাড়ি গুটিয়ে তৃণমূলে ফিরলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই তৃণমূলে ফিরে আসার সোপান তৈরি করে রেখেছিলেন তিনি। একুশে ভোট উৎসব ফুরনোর পর তাঁর পাঁচ মাস সময় লাগল ঘরওয়াপসি করতে, সাকুল্যে বিজেপিতে তাঁর ইনিংস শেষ ৯ মাসেই। কিন্তু প্রশ্ন সেখানে নয়, প্রশ্ন কেন রাজীবকে তৃণমূলে ফিরতে ছুটতে হল ত্রিপুরায়।
সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন রাজীব
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে ঘরওয়াপসির পরে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় একে একে সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। কেন তিনি বিজেপিতে গিয়েছিলেন, কেন তিনি চাটার্ড ফ্লাইটে করে দিল্লিতে যোগ দিয়েছিলেন, কেন তিনি ফিরে এলেন, কেন তিনি মানিয়ে নিতে পারলেন না, কোথায় ভুল ছিল তাঁর, তাঁর কী করা উচিত ছিল, সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন রাজীব। জবাব দিয়েছেন ত্রিপুরাতে গিয়ে কেন তিনি তৃণমূলে যোগ দিলেন, সেই প্রশ্নেরও।
রাজীবের তৃণমূলে ফেরার পথ সহজ ছিল না
কিন্তু রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে যুক্তি দেখালেন, সেটাই কি সত্যি? নাকি এর মধ্যে রয়েছে আরও গূঢ় কোনও রহস্য বা গূঢ় কোনও কারণ। রাজীবকে নিয়ে জল্পনা বাড়ছিল অনেকদিন ধরেই। তিনি তৃণমূলে ফিরতে পারেন, তাঁর আবহও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই সঙ্গে ছিল বিস্তর বাধাও। তা উপেক্ষা করে রাজীবের তৃণমূলে ফেরার পথ সহজ ছিল না, বরং কণ্টকময়ই ছিল।
ত্রিপুরায় গিয়ে যোগদান, কী যুক্তি রাজীবের
রবিবার আগরতলায় অভিযেকের সভায় তৃণমূলে যোগ দিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় যে যুক্তি দেখালেন, তা একটু অন্যরকম। কেন তিনি ত্রিপুরায় গিয়ে তাঁর পুরনো দলে ফিরলেন। অবধারিত এই প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজীব বলেন, "আমাকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ওঁর হাত ধরেই আমাকে যোগ দেওয়াবেন। তাই এখানে আসা।" সেটা কি কলকাতায় সম্ভব হত না?
কলকাতায় যোগদান কি সম্ভব ছিল না রাজীবের
রাজীবের যুক্তি, তৃণমূল এখন সর্বভারতীয় দল। তাই ত্রিপুরাতে যোগ দিতে আমার আপত্তি থাকবে কেন? তৃণমূল যখন ত্রিপুরায় সংগঠন গড়ে তুলতে বড়সড় পদক্ষেপ নিয়েছে। ত্রিপুরা সংগঠনের কাজে আমারও পুর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি এখানে দলের হয়ে বহু সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেছি। এখনও তাঁদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। তাই এখানে এসে যোগ দিয়ে তাঁদের মনোবল বাড়িয়ে দেওয়ার সূত্রটাও গাঁথা হয়ে গেল।
রাজীবকে নিয়ে আপত্তি ছিল দলের একটা বড় অংশের
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলে ফেরানো নিয়ে আপত্তি ছিল দলের একটা বড় অংশের। বিশেষ করে হাওড়ার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অরূপ রায়রা চান না, রাজীব ফিরে আসুন তৃণমূলে। তাঁর তৃণমূলে ফেরা নিয়ে কর্মীদের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি হবে বলে মনে করছে নেতৃত্বের একাংশ। এবং কর্মীরা যে অসন্তুষ্ট ছিলেন রাজীবকে নিয়ে তার বহিঃপ্রকাশও দেখা গিয়েছে আগে।
রাজীবকে নিয়ে সেই ঝুঁকি এড়াতেই ত্রিপুরায়?
তবে কি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সেই ঝুঁকি এড়াতেই ত্রিপুরায় নিয়ে গিয়ে দলে যোগদান করানো হল? একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার নয় এই যুক্তি। তৃণমূল দুই কূলই বজায় রাখতে চাইছে, তাই রাজীবকে ত্রিপুরায় নিয়ে গিয়ে যোগদান করিয়ে বিজেপিকে ধাক্কা দেওয়াও হল, রাজীবকে দলে অন্তর্ভুক্তও করানো হল আর ঘুরিয়ে অরূপ রায়-কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসন্তোষকেও মান্যতা দেওয়া হল।
রাজীবদেরকে কেন ফেরানোর পরিকল্পনা তৃণমূলের
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে অন্য পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূলের। এখন তৃণমূল ভিনরাজ্যে সংগঠন বিস্তার করতে নেমেছে। তাই যে সমস্ত নেতাদের নিয়ে জেলায় অসন্তোষ রয়েছে, অথচ তাঁদের একটা সংগঠনিক প্রেক্ষাপট রয়েছে, তাঁদেরকে ভিনরাজ্যে ব্যবহার করা হতে পারে দলের সম্প্রসারণে। সেই কাজ করার জন্যই রাজীবদেরকে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা করল তৃণমূল।
রাজীবকে নিয়ে অসন্তোষ দমনের রাস্তা পরিষ্কার
অরূপ রায়-কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের সামনে রাজীবকে ভিনরাজ্যে ব্যবহারের যুক্তি রাখলে, তাঁদের অসন্তোষও সহজে দমন করা যাবে বলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে। আর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তো রাজীবের যোগদানের পর বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেছেন। তিনি রাজীবকে টপ টু বটম করাপটেড বলে আক্রমণ শানিয়েছেন। সরাসরি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন এত দুর্নীতিপরায়ণ নেতাকে কেন ফেরানো হল দলে? তাই তাঁদের অসন্তোষ তো এখন মেটাতে হবে তৃণমূলকে!
রাজীবের যুক্তি অসন্তোষ প্রসঙ্গে
রাজীব অবশ্য বলে দিয়েছেন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আমার রাজনৈতিক অভিভাবক। তাই তাঁর কথায় কিছু মনে করছি না। অবাধ্য হয়েছিলাম, তার জন্য অনুতপ্ত। ভুল স্বীকার করেই পুরনো দলে ফিরে এসেছি। আমাকে গ্রহণ করায় আমি চিরঋণী তৃণমূল পরিবারের কাছে।