রামধনু-রঙের পর্বত, ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন এ এক অন্য জগতের রূপ
রামধনু-রঙের পর্বত, ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন এ এক অন্য জগতের রূপ
সাত রং মিশে তৈরি হয় রামধনু। তা আকাশে যখন দেখা দেয়, কত সুন্দরই না লাগে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে সেই সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। কিন্তু কখনও দেখেছেন কি এমন কোনও পাহাড়, যেখানে রামধনু রংয়ের বিচ্ছুরণে মন ভরে উঠবে নিমেষে। এই পৃথিবীতেই এমনই এক পর্বত রয়েছে, যা রেনবো পর্বত নামেই খ্যাত।
ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম এক রামধনু-রঙা পর্বত
ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র চিনেই রয়েছে এমন এক পর্বত। পর্বতের এই রামধুন কালারে আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য জগতে। মনে হবে, আপনি পৃথিবীতে নন, রয়েছেন অন্য কোনও গ্রহে। এতটাই রংয়ের ছটা সেই পর্বতের। চিনের গানসুতে ঝাং ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওলজিক্যাল পার্কেই রয়েছে এমনই এক রামধনু-রঙা পর্বত।
ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান
ল্যান্ডফর্মের তীব্র রঙিন ঢেউয়ে সত্যিই হারিয়ে যাবেন আপনি। মন চলে যাবে অজানা কোনও জগতে। চিনের ওই রেনবো-পর্বত সমৃদ্ধ ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম 'রেড স্টোন পার্ক' নামেও পরিচিত। এই অসাধারণ পর্বতগুলি চিনের গানসু প্রদেশের ঝাংয়েতে বিদ্যমান। এটি ওই অঞ্চলের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। ইউনেস্কোর তালিকাভুক্ত বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির মধ্যে একটি।
লাল বেলেপাথরের ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বক্র পরব্তে পরিণত
ড্যানক্সিয়া ল্যান্ডফর্ম হল একটি অনন্য পেট্রোগ্রাফিক জিওমরফোলজি যা লালচে বেলেপাথরের সমষ্টি দিয়ে তৈরি, যা ৭০-৯০ মিলিয়ন বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগের বলে ধারণা করা হয়। লাল বেলেপাথরের স্তরগুলি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক শিলার আকার নিয়েছে এবং বক্র পর্বতের একটি সিরিজ তৈরি করেছে।
কিলিয়ান পর্বতমালার উত্তরে চিনের ঝাংয়ের ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম
গানসুর ঝাংয়ে ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওলজিক্যাল পার্কে চিনের রেনবো পর্বত বা রামধনু পর্বতমালা হল লালচে বেলেপাথরের একটি ভূমিরূপ। এই ঝাং ডানসিয়ার অর্থ হল 'গোলাপী মেঘ'। উত্তর-পশ্চিম চিনের গানসু প্রদেশে সাংহাই থেকে প্রায় ৬০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত ওই এলাকা। এই পর্বতগুলি কিলিয়ান পর্বতমালার উত্তরে চিনের ঝাংয়ের ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওলজিক্যাল পার্কের অংশ।
হেরিটেজ তালিকায় ঝাংয়ের ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম অন্তর্ভুক্ত
ঝাংয়ের ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওলজিক্যাল পার্ক এই অঞ্চলের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র এবং এটি ইউনেস্কোর অনন্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটগুলির মধ্যে একটি। ২০১০ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি তাদের হেরিটেজ তালিকায় ঝাংয়ের ডানসিয়া ল্যান্ডফর্মকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।
ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম জিওলজিক্যাল পার্কের উন্নত এলাকা
পার্কের মূল এলাকা লিনজে ড্যানক্সিয়া সিনিক ঝাং শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং লিনজে কাউন্টির আসন থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এটি পার্কের সবচেয়ে উন্নত এবং সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা অংশ। বিঙ্গুও এই অংশের দ্বিতীয় প্রাকৃতিক এলাকা এবং এটি লিইউআন নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত।
নৈসর্গিক এলাকার চেহারা নিয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্যের কারণে
চিনের ঝাংয়ের ডানসিয়া ল্যান্ডফর্ম ওই এলাকাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৪-র ৩ অগাস্ট উদ্বোধন করা হয়েছিল। বিংগুও ৩০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে এবং এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ থেকে ২৫০০ মিটার পর্যন্ত। এটি একটি নৈসর্গিক এলাকার চেহারা নিয়েছে তার নান্দনিক সৌন্দর্যের জন্য। সুনান ড্যানক্সিয়া সিনিক এরিয়া লিঞ্জের দক্ষিণে গাঞ্জুনে অবস্থিত।
চিনের রেনবো পর্বতমালা কীভাবে গঠিত হয়েছিল?
রেনবো পর্বত হল ক্রিটেসিয়াস বেলেপাথর এবং পলিপাথরসমৃদ্ধ পর্বত। যা হিমালয় পর্বত গঠনের আগে চিনে জমা হয়েছিল। খনিজ ও লোহার সঙ্গে পলি ও বালি জমা হয়ে এই পর্বত তৈরি। আর ২৪ মিলিয়ন বছর ধরে ধাপে ধাপে তৈরি হয়েছিল রঙিন পাহাড়। বেলেপাথর এবং খনিজ পদার্থের উজ্জ্বল রঙের স্তরগুলিকে পৃথিবীর নীচে একত্রে চূর্ণ হয়েছিল এবং টেকটোনিক প্লেটগুলি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা পৃষ্ঠের দিকে ঠেলে উঠে পড়ে, যা শিলা স্তরের রঙিন নিদর্শন তৈরি করে।
রেনবো পর্বতে যেভাবে তৈরি হয়েছে রামধনু রঙের পাথর
শিলার স্তরবিন্যাসের ফলে অসংখ্য পাথরের রঙ দেখা দেয়। কারণ লক্ষ লক্ষ বছরের পাললিক শিলাগুলি বেলেপাথরের উপের বিস্তার লাভ করেছে। এভাবে একে অপরের উপরে গঠিত হয়ে এবং একে-অপরের সংমিশ্রণে পরিণত হয়েছে রামধনু রঙের পাথর। বাতাস এবং বৃষ্টি মহাদেশীয় সিলিসিক্লাস্টিক শিলাগুলির উপরিভাগের স্তরগুলিকে সরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন রসায়ন ও খনিজবিদ্যার সাথে অন্তর্নিহিত গঠনগুলি উন্মোচিত করে।
গভীর লাল রঙ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে রেনবোতে
রেনবো পর্বত প্রাকৃতিক স্তম্ভ, গিরিখাত, টাওয়ার, জলপ্রপাত এবং উপত্যকাসমৃদ্ধ। এই পর্বতমালা জুড়ে রঙের আকর্ষণীয় বৈচিত্র্য রয়েছে। গভীর লাল রঙ লোহা-সমৃদ্ধ খনিজ হেমাটাইট দ্বারা সৃষ্ট। শিলা তৈরি হওয়ার সময় জারিত হয়। এটি ঠিক একই প্রক্রিয়া, যা ঘটে একটি ধাতুর টুকরো বৃষ্টিতে পড়ে গেলে। তার চারপাশে মরিচা পড়ে যায় এবং তা লাল স্তর তৈরি করে।
হলুদ-সবুজ-নীল রঙের উৎপত্তি যেভাবে রেনবো পাহাড়ে
হলুদ রঙগুলি সম্ভবত বালি এবং কাদামাটির উপস্থিতির কারণে এবং সবুজ-নীল-ধূসর রঙটি জৈব উদ্ভিদ পদার্থ বা গ্লুকোনাইট নামক খনিজ থেকে এসেছে বলে ভূ-বিজ্ঞানীরা মনে করেন। গ্লুকোনাইটকে সামুদ্রিক ডিপোজিশনাল এনভায়রনমেন্টের একটি ডায়গনিস্টিক খনিজ নির্দেশক বলে মনে করা হয় এবং তা ধীর গতিতে জমা হয়।
চিনের সবচেয়ে সুন্দর ল্যান্ডফর্ম হিসেবে স্বীকৃতি
আর উপসংহারে বলা যায় এই অঞ্চলটি একটি বিশাল হ্রদের তলদেশ ছিল। যেখানে বহু নদী থেকে আসা বিভিন্ন রঙের বালি জমা হয়েছিল। এলাকাটি ঝাং-এর একটি শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্র বা আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। ২০০৫ সালে সংবাদ মাধ্যমের একটি কমিশন এটিকে চিনের সবচেয়ে সুন্দর ল্যান্ডফর্ম এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। ২০০৯ সালে চাইনিজ ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনও চিনের ছয়টি সবচেয়ে সুন্দর ল্যান্ডফর্মের মধ্যে সেরা হিসেবে বেছে নেয়।