মমতার ‘তৃতীয় ফ্রন্ট’ নিয়ে সন্দিহান পিকে, জানিয়ে দিলেন কে হারাতে পারে মোদীর বিজেপিকে
সম্প্রতি তাঁর কংগ্রেস যোগ নিয়ে কম চর্চা হয়নি। শেষপর্যন্ত কংগ্রেসে যোগ দেননি প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু তিনি কংগ্রেসকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেস কংগ্রেসে যোগদান আটকে গিয়ে তৃণমূল-টিআরএস সংযোগেই। এই পরিস্থিতিতে প্রশান্ত কিশোর ফের একবার জানিয়ে দিলেন তৃতীয় ফ্রন্টের কোনও ভবিষ্যৎ নেই।

প্রশান্ত কিশোর সওয়াল করলেন সেকেন্ড ফ্রন্টের পক্ষে
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হোক বা তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও- প্রত্যেকেই চেষ্টা করছেন কংগ্রেসকে ছাড়া বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে তুলতে। সেক্ষেত্রে তাঁদের জোট হবে থার্ড ফ্রন্ট। কেননা এখনও কংগ্রেস ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। আর কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সেকেন্ড ফ্রন্ট। প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ না দিলেও তিনি সওয়াল করলেন সেকেন্ড ফ্রন্টের পক্ষে।

কংগ্রেসের ফ্রন্টে যোগ দিতে হবে বিরোধী দলগুলিকে
ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর সম্প্রতি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে, কোনও তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্ট দেশে নির্বাচনে জিততে সক্ষম হবে। তাঁর মতে, যদি কোনও দল বিজেপিকে পরাজিত করতে চায় তবে তাকে দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসাবে আবির্ভূত হতে হবে। অর্থাৎ কংগ্রেসের ফ্রন্টে যোগ দিতে হবে। তা না হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে হারানো সম্ভব নয়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেসি রাওকে ঘুরিয়ে বার্তা পিকের
প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ না দিলেও প্রকারান্তরে কংগ্রেসের নেতৃত্বে বৃহত্তর জোটকেই সমর্থনের কথা বললেন। তিনি বর্তমানে যে দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস বা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির প্রতিও তিনি সেই বার্তা দিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেসি রাওকে তিনি প্রচ্ছন্নভাবেই জানিয়ে দিলেন বিজেপিকে হারাতে গেলে কংগ্রেসের সঙ্গে সামিল হতে হবে।

কোন পথে এগোলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব, জানালেন পিকে
ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর সম্প্রতি একটি নিউজ চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় ফ্রন্ট হিসাবে আবির্ভূত হতে সাহায্য করছেন কি না। তার উত্তরে প্রশান্ত কিশোর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোন পথে এগোলে বিজেপিকে হারানো সম্ভব।

আদর্শ দ্বিতীয় ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে বিজেপিকে হারাতে
তিনি বলেন, "আমি কখনই বিশ্বাস করি না যে, কোনও তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্ট ভারতে কোনও নির্বাচন জিততে পারে। আমরা যদি বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে প্রথম ফ্রন্ট মনে করি, তাহলে দলটিকে পরাজিত করার জন্য একটি আদর্শ দ্বিতীয় ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে। কোনও দল যদি বিজেপিকে হারাতে চায়, তাহলে তাদের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে।

কংগ্রেসকে দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসাবে বিবেচনা করছেন প্রশান্ত কিশোর
এরপর তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কংগ্রেসকে দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসাবে বিবেচনা করেন কি না। তাঁর উত্তরেও সপাট জবাব দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। তিনি জানিয়েছেন, কংগ্রেস যে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল, তা নিয়ে তাঁর মনে কোনও সংশয় নেই। অর্থাৎ দ্বিতীয় ফ্রন্ট গড়তে হলে কংগ্রেসকে রেখেই গড়তে হবে।

কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া না বাঁধলেও ধারণা থেকে সরছেন না
প্রশান্ত কিশোর এর আগেও বলেছেন, ২০২৪-এর নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে শুধু বিরোধী জোট করলেই হবে না, কংগ্রেসকেও শক্তিশালী হয়ে উঠতে হবে। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে তিনি পুরুজ্জীবনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি নিজে কংগ্রেসের দুয়ারে হাজির হয়ে ভোট কৌশলী হিসেবে কংগ্রেসকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন। শেষপর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া তিনি বাঁধেননি ঠিকই, কিন্তু তাঁর ধারণা থেকে তিনি সরে আসছেন না।

কংগ্রেসকে শক্তিশালী করে সেকেন্ড ফ্রন্টকে সঠিক দিশা দিতে
২০১৪ সালে তিনি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন। ২০২৪ তাঁদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে তিনি দ্বিতীয় ফ্রন্টের হয়ে সওয়াল করেছেন। তিনি বিরোধীদের কংক্রিট জোট চাইছেন। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি চাইছেন কংগ্রেসকে শক্তিশালী করে সেই জোটকে সঠিক দিশা দেখাতে।

পিকের জোট-পরামর্শ ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে দিতে পারে কংগ্রেসকে
প্রশান্ত কিশোর তাঁর প্রস্তাবনায কংগ্রেসের নেতৃত্ব বদলের কথা বলেছেন। আবার কোন রাজ্য কংগ্রেসের চলার পথ কী হবে, কোন রাজ্যে কংগ্রেস একলা চলবে, কোন রাজ্যে জোট করে চললে লাভবান হবে, তার একটা রূপরেখাও প্রস্তুত করে দিয়েছেন। প্রশান্ত কিশোর ২০২৪-এর নির্বাচনে কংগ্রেসকে এমন কিছু দলের সঙ্গে জোট গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা তাঁদের ম্যাজিক ফিগারের দিকে পৌঁছে দিতে পারে।

পুরনো সহযোগীদের এড়িয়ে নতুন জোটসঙ্গীকে অগ্রাধিকার
প্রশান্ত কিশোর কিছু ক্ষেত্রে পুরনো সহযোগীদের এড়িয়ে নতুন জোটসঙ্গী হিসেবে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস, কে চন্দ্রেশখর রাওয়ের টিআরএস, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য, গতবার কংগ্রেস জোটসঙ্গী হিসেবে অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুকে বেছে নিয়েছিল, আদতে তার কোনও লাভ হয়নি। অঙ্কের বিচারে তৃণমূল, টিআরএস ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসকে সঙ্গে নিলে কংগ্রেসের লাভ।

সমস্ত বড় রাজ্য কভারে যাঁদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে হবে
কংগ্রেসের সঙ্গে ডিএমকে, আরজেডি ও জেএমএমের সম্পর্ক ভালো। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ও এনসিপির সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক। আর উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাটে এককভাবে শক্তিশালী কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশ বাদে প্রায় সমস্ত বড় রাজ্যই কভার করতে প্রশান্ত কিশোরের প্রস্তাব দিয়েছেন তৃণমূল, টিআরএস ও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে।
তৃণমূলের পথে 'বিদ্রোহী 'অর্জুন? রাতেই পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে বৈঠকে বসার নির্দেশ নেতৃত্বের