বেলঘড়িয়ার নিখোঁজ যুবকের দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য, গ্রেফতার বন্ধু
বেলঘরিয়া পুলিশ কোয়ার্টারের ভিতরে ডোবা থেকে শনিবার বিকেলে নিখোঁজ এক যুবকের দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য। ঘটনায় যুবক দীপ বারিকের বন্ধু সঞ্জয় বর্মণের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ পরিবারের। ঘটনায় আটক অভিযুক্ত।
বেলঘরিয়া পুলিশ কোয়ার্টারের ভিতরে ডোবা থেকে শনিবার বিকেলে নিখোঁজ এক যুবকের দেহ উদ্ধারে চাঞ্চল্য। ঘটনায় যুবক দীপ বারিকের বন্ধু সঞ্জয় বর্মণের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ পরিবারের। ঘটনায় গ্রেফতার অভিযুক্ত।
বর্ষবরণের রাতে বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিকের জন্য বেরিয়েছিল দীপ বারিক(২৪)। রাতে দক্ষিণেশ্বরের মে দিবস পল্লীর বাড়িতে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথাও হয় সেই রাতে। তবে তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না যুবকের। পয়লা জানুয়ারি পরিবারের তরফ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
দীপ বারিকের মা সোমা বারিকের দাবি, ছেলে ছিল শান্ত প্রকৃতির। বন্ধুদের মধ্যে কোনও ব্যাপার জানতে পারায় ছেলেকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। সোমা বারিক জানিয়েছেন, বর্ষবরণের রাতে তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা হয়। ফিরে আসছে বলে জানায় ছেলে দীপ বারিক। কিন্তু রাতে না ফেরায় খুঁজতে বেরোন দীপের বাবা। রাতে কোনও খোঁজ না পেয়ে ফের সকালে পিকনিকের জায়গায় যান দীপের বাবা দেবকুমার বারিক। সেখানে বাসনপত্র পড়ে ছিল। কিন্তু ছেলের খোঁজ পাননি তিনি। এরপর দেবকুমার বারিক যান, দীপের বন্ধু সঞ্জয় বর্মণের বাড়িতে। সে জানায়, দীপ বমি করে অসুস্থ বোধ করায় তারা গাড়ি ডাকতে যান। ফিরে এসে তারা দীপের খোঁজ পাননি।
৩১ ডিসেম্বরের রাত থেকে নিখোঁজ থাকার ৬ দিন পর ওই যুবকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এদিন তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় বেলঘড়িয়া পুলিশ কোয়ার্টার চত্বরে। অভিযোগের তির ওই কোয়ার্টারেরই বাসিন্দা চেতলা থানায় এস আই পদে কর্মরত কলকাতা পুলিশের কর্মী এস কে বর্মণের ছেলে সঞ্জয় বর্মণের বিরুদ্ধে। মৃত যুবকের বাবা পেশায় রেলকর্মী দেবকুমার বারিকের অভিযোগ, তাঁর একমাত্র ছেলেকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।
দীপ বারিকের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জয় বর্মণ ও দীপ বারিক দুজনই বাল্যবন্ধু। একসঙ্গেই পড়াশোনা করত। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষে তার ছেলে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাবার অভিযোগ, ৩১ ডিসেম্বর পিকনিক করার জন্য তার ছেলেকে ফোন করে ডাকে সঞ্জয়। সেইমতো বেলঘরিয়া পুলিশ কোয়ার্টারে যায় পিকনিক করতে। তারা খবর পেয়েছেন, যেখানে ৩৫ জন যুবক একসঙ্গে মিলে পিকনিক করেছিল।
ঘটনার পরদিন থেকে তারা ছেলের খোঁজে একাধিকবার বেলঘরিয়া পুলিশের দ্বারস্থ হয় দীপের পরিবার। অভিযোগ, পুলিশ প্রথম দিন থেকেই তাঁদের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে। শুধু তাই নয়, প্রথমের দিকে পুলিশ অভিযোগ নিতেও অস্বীকার করে। যদিও পরে পুলিশ অভিযোগ নেয়।
শনিবার বিকেলে বেলঘড়িয়া পুলিশ আবাসনে ফুটবল খেলা হচ্ছিল। বল ডোবায় গিয়ে পড়লে দীপের দেহের হদিশ পাওয়া যায়। উপুড় হয়ে যুবকের দেহ ভাসতে দেখা যায়। বাসিন্দারা খবর দেন পুলিশে। খবর পেয়ে বেলঘড়িয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বাসিন্দারা মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, সঞ্জয় ও তার সঙ্গীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। মৃতদেহের মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, দীপকে খুন করা হয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে, বিস্তারিত জানানো যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে, অপর একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর সকালে চন্দননগরের একটি পার্কে এক গৃহবধূর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল দীপ বারিককে। সেখান থেকেই পিকনিকে যোগ দিয়েছিলেন দীপ। দীপের মৃত্যুতে ওই মহিলা এবং তাঁর পরিবারের ভূমিকাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কেননা, পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলার স্বামীর সঙ্গে ফোনে দীপের কথা কাটাকাটিও হয়।