জরুরি অবস্থা ফিরল দিদির রাজ্যে, সাংবাদিকদের টুঁটি চেপে ধরার হুমকি
মহাকরণ থেকে নবান্নে সচিবালয় সরিয়ে নিয়ে আসার অন্যতম কারণ ছিল সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা। কারণ মহাকরণে কিছু 'টেকনিক্যাল প্রবলেম' ছিল। নবান্নে সেই অসুবিধা নেই। এখানে ১৪ তলায় মুখ্যমন্ত্রী বসেন। তাই প্রথম থেকেই ১৩ এবং ১৪ তলায় সাংবাদিকদের গতিবিধি নিষিদ্ধ ছিল। জানুয়ারি মাসে রাজ্য সরকারের তরফে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বলা হয়, প্রেস কর্নার ছাড়া আর কোথাও যেতে পারবেন না সাংবাদিকরা। কিন্তু তা খাতাকলমে সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার সরাসরি তা কার্যকর করতে উঠেপড়ে লাগল পুলিশ।
অভিযোগ, গতকাল বিকেলে প্রেস কর্নারে সাদা পোশাকের এক পুলিশ অফিসার এসে ধমক দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "এখন থেকে আর কোথাও যাবেন না। এখানেই বসে থাকবেন। ক্যান্টিনেও যেতে পারবেন না। মন্ত্রী, অফিসারদের সঙ্গে দেখা করতে হলে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইবেন। যদি না পান, চুপ করে বসে থাকবেন। প্রেস কর্নারের বাইরে যদি কাউকে দেখি, ঘাড় ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে ভরে দেব।"
"কোনও আইনে সাংবাদিকদের এভাবে গ্রেফতার করা যায় না", বলছেন প্রাক্তন বিচারপতি
এর পরই সাংবাদিকরা ক্ষোভ জানান। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রেস কর্নারে বসে থাকলে ঠিক যেটুকু খবর সরকার দেবে, সেইটুকু জানতে পারবেন সাংবাদিকরা। অথচ খবরের সন্ধানে এতদিন সচিবালয় চষে বেড়াতেন তাঁরা। এমনকী, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অন্যান্য রাজ্যের সচিবালয়ে সাংবাদিকদের গতিবিধি এভাবে নিয়ন্ত্রিত নয়। সরকারি পরিচয়পত্র থাকলে তাঁরা ঘোরাঘুরি করতেই পারেন। পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে শাসক দলের কেচ্ছা-কাহিনী মিডিয়ায় আসছে, তাতে ভীত হয়েই সাংবাদিকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিণ করতে চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে ধারণা।
পুলিশি হুমকির জেরে হইচই শুরু হতেই সন্ধেবেলা ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন স্বরাষ্ট্র সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "যে অফিসার এটা বলেছেন, তিনি ঠিক বলেননি। সাংবাদিকদের গ্রেফতার করার কোনও প্রশ্নই নেই।"
কিন্তু নবান্নের কর্মীরাই বলছেন যে, ওপর মহলের নির্দেশ ছাড়া এমন কথা কেউ বলবে কী করে! পুলিশের ঘাড়ে তো একটাই মাথা। কর্মীদের একাংশের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এ কথা বলেছে পুলিশ।
কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "কোনও আইনে সাংবাদিকদের এভাবে গ্রেফতার করা যায় না। এ রকম আইন যদি হয়, তা হলে তা হবে সংবিধান-বিরোধী। জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধী সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন। সেটাই তাঁর পতন ডেকে এনেছিল।"
কবি শঙ্খ ঘোষ বলেন, "পুরোপুরি অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। আমি মনে করছি, সাংবাদিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারে হস্তক্ষেপ হচ্ছে।"
পুলিশ সূত্রের খবর, নির্দেশিকা অমান্য করলে সাংবাদিকদের সর্বনিম্ন ছ'মাস থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল হতে পারে। সঙ্গে দিতে হবে জরিমানাও।
কাগজে-কলমে জরুরি অবস্থার কথা বলা না হলেও সরকারের এই নির্দেশ কার্যত সেই কালো দিনগুলিই ফিরিয়ে আনল পশ্চিমবঙ্গে।