ফিরে দেখা ২০১৯: বাংলার সেরা বিতর্ক
ফিরে দেখা ২০১৯: বাংলার সেরা বিতর্ক
রাজনীতির বাংলায় বছরভর বিতর্ক হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাজীব কুমারকে নিয়ে বিতর্ক, কিংবা শোভন-বৈশাখীকে নিয়ে বিতর্কই যেন বাংলার সংবাদ জুড়ে থাকত। যদিও পরবর্তী সময়ে চলে আসে মমতা-রাজ্যপাল বিতর্ক। আর বছরের একেবারে শেষ অংশে এসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিতর্ক যেন সবাইকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
সিএএ বিতর্ক
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। যা নিয়ে বিতর্ক এখন দেশ জুড়ে। বাংলাতেও চলছে এই বিতর্ক। বিজেপি বলছে এই আইনের মাধ্যমে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অন্যদিকে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কিংবা বিরোধী বাম-কংগ্রেস সবাই এর বিরোধিতায় সরব। তাদের অভিযোগ নাগরিকত্ব হরণের চক্রান্ত। যেখানে লাখো মানুষের ভবিষ্যত জড়িয়ে, সেই আইনে আদৌ ঠিক কী আছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির কেউই সাধারণ মানুষকে পুরোপুরি জানাতে উদ্যোগ নেয়নি। রাজনৈতিক দলগুলি যে যার সুবিধা মতো অংশ তুলে ধরে নিজেদের সমর্থনে এনিয়ে প্রচার চালাচ্ছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কেন এই সিএএ বিরোাধী আন্দোলন হিংসার রূপ নিল। প্রসঙ্গ ডিসেম্বরের শুরুতেই সিএএ বিরোধী আন্দোলনে রাজ্যের প্রায় ২২ টি রেলস্টেশনে হামলা চালিয়ে প্রায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়। হামলা চলে বিভিন্ন ট্রেনে। বেশ কিছু সরকারি বাসও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই সময়ে।
মমতা-রাজ্যপাল বিতর্ক
৩০ জুলাই নতুন রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি। এরপর একটি মাস বাদ দিয়েই সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্য সরকারের অন্যতম অসুবিধার কারণ হয়ে উঠেছেন। শুরুটা হয়েছিল যাদবপুরে বাবুল সুপ্রিয়কে উদ্ধারে যাওয়া নিয়ে। এরপর কখনও কার্নিভালে তাঁকে একা ফেলে রাখার অভিযোগ, তো কখনও অপমান করার অভিযোগ। একের পর বিষয়ে রাজ্যের বিরোধিতা করে তিনি খবরের শিরোনামে। বছর শেষে তিনি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে টুইট যুদ্ধে ব্যস্ত।
রাজ্যপাল চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মমতা পেতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে ভাইফোঁটা নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আমল দেননি মুখ্যমন্ত্রী। অন্যদিকে, সিএএ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের বিরোধিতা করেছিলেন রাজ্যপাল।
কোনও না কোনও বিষয় বিয়ে রাজ্যের সঙ্গে রাজ্যপালের বিরোধ লেগেই রয়েছে। যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের বিতর্কে পরিণত হয়েছে।
তিন তালাক বিতর্ক
নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরেই, মুসলিমদের তিনতালাক প্রথাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন পাশ করায় সংসদে। এই আইন ভঙ্গ করলে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তিন তালাক প্রথা অনুযায়ী, তিনবার তালাক শব্দ উচ্চারণ করে বার্তা কিংবা ইমেল পাঠিয়ে মুসলিম স্বামী তাদের স্ত্রীকে তালাক দিতে পারতেন। কিন্তু ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। ফলে সংসদে আইন পাশ করে মুসলিম নারীদের বিতর্ক থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে সরকার, এমনটাই বলছেন অনেকে।
রাজীব কুমারকে নিয়ে বিতর্ক
বছরের শুরুটা হয়েছিল শিলং-এ রাজীব কুমারকে সিবিআই-এর প্রশ্নজালে বিদ্ধ করা নিয়ে। বছরের শেষটা হতে যাচ্ছে তাঁকে তথ্য প্রযুক্তি দফতরের প্রধান সচিব পদে নিয়োগ করার মাধ্যমে। এর মধ্যে বছরের বিভিন্ন সময়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে রাজ্য সরকার বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে সিবিআই-এর তরফ থেকে। মধ্যে একটা দীর্ঘ সময় তিনি অন্তরালে থেকে আদালতে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। পুজোর মুখে তিনি প্রকাশ্যে আসেন।
প্রসঙ্গত সারদাকাণ্ডে তথ্য লোপাটের অভিযোাগ উঠেছিল রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে। কখনও সুপ্রিম কোর্ট তো কখনও হাইকোর্টে যেতে হয়েছে রাজীব কুমারকে। একটা সময়ে রাজীব কুমারের ওপর থেকে হাইকোর্টের আইনি রক্ষাকবচ উঠতেই, তাঁকে হেফাজতে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে সিবিআই। সেই সময় কার্যত গা ঢাকা দেন রাজীব কুমার। পাশাপাশি চালিয়ে যান আইনি লড়াই। কিন্তু কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও সিবিআই তাঁর সন্ধান পায়নি দিনের পর দিন।
শোভন-বৈশাখী বিতর্ক
২০১৯-এ-র শুরুর দিকে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূলে সক্রিয়ভাবে দেখা যায়নি। অগাস্টে তিনি দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি যোগ দেন। সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও তারপর থেকে বিজেপির কোনও কর্মসূচিতেও তাঁকে দেখা যায়নি। আবার তিনি বিজেপি ছাড়ছেন কিংবা ছেড়েছেন একথাও প্রকাশ্যে ঘোষণা করেননি। যদিও ভাইফোঁটায় তিনি গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। সেই সময় স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, তিনি তো আগেই বলেছিলেন শোভনকে ফিরতে হবে মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই। সেই সময়ই জল্পনা তৈরি হয়, এই তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন শোভন। যদিও তা এখনও পর্যন্ত হয়নি। শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মিডিয়ার সামনে সেরকম না দেখা গেলেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ই মিডিয়ার মোকাবিলা করে গিয়েছেন। সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের দুজনকে বিজেপি ব্যবহার করেনি বলে বিতর্ক তোলার চেষ্টা হয়েছে। যদিও বিজেপির তরফে বিতর্কে জন ঢেলে বলা হয়েছে, তাদের কর্মসূচিতে নেতারা অংশ নেন। সেরকমভাবে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না।