'নামে কী আসে যায়' কথাটা ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ক্ষেত্রে কী আদৌ প্রযোজ্য! কী রয়েছে কার কপালে!
'নামে কী আসে যায়' কথাটা ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ক্ষেত্রে কতটা প্রযোজ্য!
করোনা ভাইরাসের আবহে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাব পড়েছে ভারত-ভূমে। কার্যত বিপদের মুখে দেশের প্রায় সবকটি সেক্টর। ক্রীড়াক্ষেত্রও যে সেই তালিকার বাইরে নয়, তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তা বলে সমস্যা এতটাও প্রকট নয় যে রাতারাতি পাল্টে ফেলতে হবে নিজস্বতা কিংবা শিঁকড়ের টান বলে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বাংলার ফুটবল প্রেমীদের একাংশ। তাদের প্রশ্ন, 'নামে কী আসে যায়' কথাটা ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ক্ষেত্রে আদৌ প্রযোজ্য হবে তো!
১০০ বছরের দ্বৈরথ
যাদের লড়াই ঘটি ও বাঙালদের একশো বছর ধরে পৃথক করে রেখেছে, সেই নাম ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। এ লড়াইয়ে যেমন ছিল সীমাহীন শত্রুতা, তেমন লুকিয়ে ছিল অদেখা বন্ধুত্ব ও নির্ভরতা। ইলিশ-চিংড়ির সাবেক দ্বন্দ্ব যে বাংলা সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সব আবেগ মিলেমিশে একাকার হত তেকাঠির নিচে, শত্রুসুলভ বন্ধুত্বে। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের নামটাই ছিল বাংলা ও বাঙালির মুলধন।
আচমকাই সময় পরিবর্তন
পরিবর্তনের গন্ধ ভাসছিল বেশ কয়েক বছর ধরেই। সেই বদলে গা ভাসিয়েই ফেলল জাতীয় ক্লাব মোহনবাগান। কার্যত দাপটের সঙ্গে ২০১৯-২০২০ সালের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েও আর একলা চলো নীতি ধরে রাখতে পারলেন না সৃঞ্জয় বসু, দেবাশিস দত্তরা। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন এটিকে-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই ফেলল সবুজ মেরুণ। জার্সি এবং প্রতীকে মোহনবাগানের আধিক্য থাকলেও জাতীয় ক্লাবের নামের আগে জুড়ে গিয়েছে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার দল। এটিকে-মোহনবাগান শিবিরে মেরিনার্সদের শেয়ার মাত্র ২০ শতাংশ।
টান অনুভব করল ইস্টবেঙ্গলও
আই লিগকে হারিয়ে দেশের সেরা ফুটবল লিগের মর্যাদা পেয়েছে আইএসএল। সেই টুর্নামেন্টে মোহবাগানকে অংশ নিতে দেখে শান্ত থাকতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। প্রাক্তন বিনিয়োগকারী কোয়েসের সঙ্গে বিচ্ছেদ পরবর্তী দ্বন্দ্ব এবং নতুন সংস্থার খোঁজ শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান সুপার লিগকে সামনে রেখেই করে যাচ্ছিল লাল-হলুদ। কোনও উপায় না দেখে শেষমেশ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন দেবব্রত (নীতু) সরকাররা। ইতিহাসে প্রথমবার কোনও প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে ফুটবল ক্লাব সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, আইএসএল খেলবে ইস্টবেঙ্গল।
মূল্য চোকাতে হচ্ছে ইস্টবেঙ্গলকে
আইএসএল খেলার জন্য শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইস্টবেঙ্গল। যেখানে লাল-হলুদের শেয়ার মাত্র ২৪ শতাংশ। আর এখানেই মূল্য চোকাতে হচ্ছে নীতু সরকারদের। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে নতুন কোম্পানি গঠন করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শ্রী সিমেন্ট ফাউন্ডেশন নাম দিয়ে সেই কোম্পানির নাম নথিভূক্ত করা হয়েছে সরকারি খাতায়। ওই নামেই আইএসএলের দরপত্র তোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
ইস্টবেঙ্গল কোথায়
বাংলার ফুটবল মহলের একটা অংশের দাবি, শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে ইস্টবেঙ্গল। তা না হলে নতুন কোম্পানি গঠন থেকে নথিভূক্তকরণে লাল-হলুদের উপস্থিতি না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁদের প্রশ্ন, ইস্টবেঙ্গল নামে কোনও দল ভবিষ্যতে আদৌ থাকবে তো! তবু তারই মাঝে স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। সময়ের প্রয়োজনে সমঝোতা এবং আপোসে রাজি হয়ে যাচ্ছেন বহু লাল-হলুদ সমর্থক। আর প্রশ্ন সেখানেই যে 'নামে কী আসে যায়' কথাটা ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ক্ষেত্রে আগামী দিনেও খাটবে তো!