পরিবেশ পরিবর্তনের জের, ঠিক কী কারণে এবছর অক্টোবরে কোনও ঘূর্ণিঝড় হল না জানেন?
সাধারণত বঙ্গপোসাগরে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় সব থেকে বেশি। যদিও এবছর অক্টোবরে কোনও ঘূর্ণিঝড় হয়নি। বঙ্গোপসাগরে শেষ বড় ঘূর্ণিঝড় ছিল মে মাসে। সেবার আম্ফান পুরো দক্ষিণবঙ্গকে তছনছ করে দিয়ে যায়। তবে এবছর অক্টোবরে কেন কোনও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি?
প্রতিবছর গড়ে কটা ঘূর্ণিঝড় হয়?
প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় বিশ্ব জুড়ে। এর মধ্যে প্রতি বছর বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে পাঁচটি করে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় গড়ে। পূর্ব-পশ্চিম দুই উপকূলই এই ঘূর্ণিঝড়ের রোষ সহ্য করে। তবে পূর্ব উপকূলে এই মাত্রা একটু বেশি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গে হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা এবং প্রবলতা অনেকটাই বেশি।
ঋতুচক্রে বদল এসেছে
আসলে নিম্নচাপ সৃষ্টির জেরে যখন প্রতি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় তৈরি হয়, সেটাকেই সাইক্লোন হিসাবে বিবেচিত করা হয় আবহাওয়া দফতরের তরফে। এরই মাঝে ঋতুচক্রে বদল এসেছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ধারাবাহিক বৃদ্ধি, বর্ষার দিন কমে যাওয়ার পাশাপাশি শীত দেরিতে আসা, সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় অসাম্যের মতো একাধিক ঘটনায় তারই প্রতিফলন ধরা পড়েছে বলে মনে করে আবহবিদ মহল।
ঘূর্ণিঝড়ের চক্রেও পরিবর্তন?
এসবের জেরে ঘূর্ণিঝড়ের চক্রেও পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে আবহাওয়াবিদদের মধ্যে। ২০১৯ সালের ওড়িশায় আছড়ে পড়া ফণী এবং তার পরে এবছরের আমফান আসে এপ্রিল-মে মাসে। যদিও ২০১৯ সালের আগে ওড়িশা ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলির নব্বই শতাংশের জন্মকাল ছিল অক্টোবর-নভেম্বর।
আবহাওয়াবিদদের মত
এদিকে আবহাওয়াবিদদের মত, চলতি বছরে স্বাভাবিকের থেকে ঠান্ডা হাওয়া (লা নিনা) বইছে সমুদ্রে। এর ফলে পূর্ব দিকে সরে গিয়েছে যাবতীয় নিম্নচাপ। এর জেরে নিম্নচাপ সৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটে আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরে। এর জেরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়নি। তবে এই ঘটনা কী ঘূর্ণিঝড় চক্রের বদলের ইঙ্গিত? গত ১৫-২০ বছরের তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাবে, মে মাসে সেই অর্থে কোনও সুপার সাইক্লোন হয়নি। ফণী ও আমফান এর ব্যতিক্রম।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত
প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার কারণে এ ধরনের জলবায়ুগত ব্যতিক্রম তৈরি হতে পারে। যে ভাবে দূষণ বাড়ছে, ভূগর্ভ থেকে খনিজ পদার্থ খুড়ে বের করা হচ্ছে, জঙ্গল ধ্বংস করা-সহ পরিবেশের একাধিক পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে, তার ফলে এই ধরনের আবহাওয়াজনিত চক্রের পরিবর্তন হয়েছে বলে মত আবহাওয়াবিদদের।