নুসরত জাহানের হয়ে একটি জোরালো বার্তাও কি দিতে পারতেন না মমতা? বড় সুযোগ হেলায় হারালেন
তৃণমূল কংগ্রেসের নব্যনির্বাচিত সাংসদ নুসরত জাহান ক্রমেই একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠছেন ভারতীয় রাজনীতিতে।
তৃণমূল কংগ্রেসের নব্যনির্বাচিত সাংসদ নুসরত জাহান ক্রমেই একটি কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠছেন ভারতীয় রাজনীতিতে। কারণটি আর কিছুই নয়: সম্প্রতি এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে বিয়ে করার পরে নুসরতের হিন্দু বধূর সাজে সজ্জিত হওয়া। উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দের দার-উল-উলুমের পক্ষ থেকে নুসরতকে নিশানা করে ফতোয়া জারি করা হয় তাঁর চূড়া, সিঁদুরের সাজের জন্যে। অভিনেত্রী-সাংসদের সাজকে 'অ-ইসলামিক' বলে মৌলবীরা আক্রমণ করেছেন।
নুসরত অবশ্য তাতে দমেননি। তিনি 'ইনক্লুসিভ ইন্ডিয়া'র একজন প্রতিনিধি বলে সমস্ত আক্রমণে প্রতিহত করেছেন। এও বলেছেন যে কট্টরপন্থীদের কথাকে তিনি আমল দিতে রাজি নন কারণ তাতে বিদ্বেষ এবং হিংসাই বাড়বে।
নুসরতের পক্ষে তাঁরই মতো রাজনীতিতে নবাগতা মিমি বললেন শুধু?
আশ্চর্যের বিষয় নুসরাতকে ঘিরে যখন বিতর্কের পারদ চড়ছে, তখন একমাত্র তাঁরই মতো এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রথম সাংসদ নির্বাচিত মিমি ছাড়া আর কেউ কিছু বললেন না তৃণমূলের পক্ষ থেকে। অথচ, অন্যান্য নানা দল এমনকি বিজেপির পক্ষ থেকেও নুসরতকে সমর্থন জোগানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এ যাবৎ এই বিষয়টি নিয়ে কোনও অবস্থান নিতে দেখা গেল না।
অথচ, এটা একটা বড় সুযোগ ছিল তাঁর সামনে, নিজের ভাবমূর্তি বদলানোর। কয়েকদিন আগে বাংলার মুসলমান সমাজের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি চিঠি লেখা হয় তোষণের নীতি থেকে বিরত থাকার জন্যে। আর তার পরেই নুসরতের এই ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র এবং স্বাধীনতার পক্ষে একটি কড়া বিবৃতি দিলেই কিন্তু একটি ইতিবাচক বার্তা যেত, অথচ তিনি তা করার প্রয়োজনই বোধ করলেন না।
এর আগেও নুসরতের তিন তালাকের বিরোধিতাকে নস্যাৎ করেছেন দলনেত্রী
অবশ্য তৃণমূল নেত্রীর এমন আচরণ অস্বাভাবিক নয়। গত মে মাসে নুসরতের নির্বাচনী কেন্দ্র বসিরহাটে মমতা পরোক্ষে তাঁর তিন তালাকের বিরোধিতা অবস্থানকে নস্যাৎ করেন একটি জনসভায়। পরিষ্কার বলেন যে নুসরত"সাবজেক্টটাই জানে না" এবং অভয় দেন যে দলের নীতিতে কোনও পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ, নুসরতের তিন তালাকের বিরোধিতা করার ব্যক্তিগত অবস্থানকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে তাঁর উপরে দলতান্ত্রিক সংকীর্ণ অনুশাসন চাপিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যবেক্ষকদের মতে, বসিরহাটের মতো একটি সংখ্যালঘু ভোটার অধ্যুষিত কেন্দ্রে নুসরতের উদারবাদী অবস্থান নেওয়া মমতার পক্ষে সহজ ছিল না।
নিদেনপক্ষে ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষেই না হয় বলতেন মমতা
কিন্তু সেক্ষেত্রে বিষয়টি সহজ না হলেও পোশাক-অবাক-সাজ-সজ্জার মতো অপেক্ষাকৃত সহজ ব্যাপারেও নুসরতের পক্ষে একটি জোরালো মতামত কেন দিতে পারলেন না মমতা? অন্তত আর কিছু না হোক, ব্যক্তি স্বাধীনতার পক্ষেও? একজন অল্পবয়সী সদ্যবিবাহিতা উদারবাদী মুসলমান মহিলা যিনি নিজের ধর্মীয় পরিচয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন না, তাঁকে সামনে রেখে নিজের দলের কলুষিত ভাবমূর্তি শোধরানোর চেষ্টা করবেন না মুখ্যমন্ত্রী, এই বিজেপির ক্রমবর্ধমান দাপটের দিনেও। তাহলে আর কি সংস্কার মানুষ তাঁর কাছ থেকে আশা করতে পারে?
[আরও পড়ুন: মমতার বাংলাই পেল সবথেকে বেশি বরাদ্দ, সীমান্ত সুরক্ষায় মোদী সরকারের উদ্যোগ]
[আরও পড়ুন:বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে বিরাট জয় পেল কংগ্রেস! লোকসভা নির্বাচনে হারের বদলা পঞ্চায়েতে]