মমতা কেন বেছে নিলেন নন্দীগ্রামকে, একুশের ‘কুরুক্ষেত্রে’র আগে বহু আকাঙ্খিত প্রশ্ন
মমতা কেন বেছে নিলেন নন্দীগ্রামকে, একুশের ‘কুরুক্ষেত্রে’র আগে বহু আকাঙ্খিত প্রশ্ন
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। তার অদ্যাবধি পরে মঞ্চ থেকেই তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি ঘোষণা করেছেন সে কথা। কিন্তু কেন তিনি বেছে নিলেন নন্দীগ্রামকে? ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন এখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগেই নন্দীগ্রামের প্রার্থী হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করে মমতা প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন জনমানসে।
শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে, তাই মমতা নন্দীগ্রামে!
তৃণমূলের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি তৃণমূল ছেড়ে ২০২১-এর নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই সেই শুভেন্দু যাঁকে নন্দীগ্রামের মুক্তিসূর্যের মহানায়ক বলা হয়। আবার নন্দীগ্রামে তিনিই বিধায়ক ছিলেন। ২০১৬-য় তাঁর নামই ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভবানীপুর বড়বোন আর নন্দীগ্রাম মেজবোন, শুধু চমক নয়
এখন শুভেন্দুর ডেরায় নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে শুধু রাজনৈতিক চমকই দিলেন না। বিজেপিকে এবং অবশ্যই শুভেন্দু অধিকারীকে তিনি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিলেন। মমতা ঘোষণা করেন, তিনি নন্দীগ্রাম থেকে এবার ভোটে লড়বেন। ভবানীপুরেও তিনি লড়বেন। ভবানীপুরকে তিনি বড়বোন আর নন্দীগ্রামকে মেজবোন বলে উল্লেখ করেন।
বিজেপির ৩৫-০ করার চ্যালেঞ্জ রোখার নয়া পথ মমতার
কিন্তু ভবানীপুর থেকে নন্দীগ্রামে মমতার প্রার্থী হওয়া নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেন্দুর মোকাবিলা করতে গেলে এটাই করতে হত। কারণ, শুভেন্দু এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠেছেন। তারপর শুভেন্দু ও দিলীপ মিলে অবিভক্ত মেদিনীপুরে ৩৫-০ করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন।
শুভেন্দু-দিলীপের জোড়া ফলাকে নিস্ফলা করতেই সিদ্ধান্ত!
একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন চমকে ভরা সিদ্ধান্তই বিজেপির বিজয়রথ রুখতে পারে। তৃণমূল কর্মীদের আবার জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তিনিই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মুখকে সামনে রেখে চললে শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষের জোড়া ফলাকে সহজেই নিস্ফলা করা যাবে। সেই লক্ষ্যে নিয়েই মমতার বড় ঘোষণা।
মেদিনীপুরেই সঙ্ঘবদ্ধতা আনা, শুভেন্দুকে বিপাকে ফেলা
তারপর অঙ্কও বলছে নন্দীগ্রামে একটা বড় শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। সংখ্যালঘুরা তেমন কেউ শুভেন্দুর সঙ্গে যায়নি। সেই সংখ্যালঘু ভোটকে এককাট্টা করে রাখলে বাকি হিন্দুদের ভোট দু-ভাগ হলে জয়ের পথ সহজ হবে। আর নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়ানো মানে গোটা পূর্ব মেদিনীপুরেই একটা সঙ্ঘবদ্ধতা আসবে, যা শুভেন্দুকে বিপাকে ফেলতে পারে।
নন্দীগ্রাম আসলে মমতার কাছে বিকল্প ‘অপশন’!
রাজনৈতিক মহলের আর একটা অংশ বলছে, নন্দীগ্রাম আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিকল্প 'অপশন'। কেননা ভবানিপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগের মতো নিশ্চিত নন। লোকসভা ভোটে এখানে বিজেপি অনেক মতবুত অবস্থানে ছিল। তাই ভবানীপুরের পাশাপাশি যদি নন্দীগ্রামও রাখা যায়, তবে একটা বিকল্প হাতে রইল, সেই কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মমতা।
শুভেন্দুর ডেরায় মমতা, প্রশান্ত কিশোরের চাল নয় তো!
তবে মমতা যে কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিন না কেন, শুভেন্দুর ডেরায় দাঁড়িয়ে বিরাট রাজনৈতিক চমক দিয়েছেন তিনি। মমতার এই একটা সিদ্ধান্ত বিজেপিকে আবার নতুন করে ভাবাচ্ছে। মমতাও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ২০২১ নির্বাচন জয়ের পরিকল্পনা করছেন। এই সিদ্ধান্তের পিছনে প্রশান্ত কিশোরের মস্তিষ্কও থাকতে পারে বলে একাংশের ধারণা।