পঞ্চায়েত ভোটের ফল বলছে জঙ্গলমহল আর হাসছে না, কিন্তু কেন
২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের ফল বলছে জঙ্গলমহল মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিক থেকে। জেনে নিন কেন।
যতই ভোট লুঠের অভিযোগ থাক, গোটা রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে বাকিদের অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু রাজ্যের পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া এই দুই আদিবাসী প্রধান জেলায় উল্লেখযোগ্য ভাবে খারাপ ফল হয়েছে শাসক দলের। পাশাপাশি উল্কার বেগে উঠে এসেছে বিজেপি। তাহলে কি, আদিবাসীরা তৃণমূলের উপর ক্ষুব্ধ?
সারা রাজ্যে যেখানে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের একেবারে নিচের স্তরে অর্থাত গ্রামপঞ্চায়েতে ৬৬ শতাংশ আসন দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেখানে এই দুই আদিবাসী প্রধান এলাকায় তাদের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েত আসন মাত্র ৪৮ শতাংশ ও ৪৩ শতাংশ। ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ায় বিজেপি পেয়েছে ৪২ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ। সারা রাজ্যে বিজেপির গ্রামপঞ্চায়েতের আসন প্রাপ্তি যেখানে ১৮ শতাংশ, তার পাশে এই সংখ্যা দুটো যথেষ্ট উজ্জ্বল। রাজ্যের ৭০ শতাংশ ভোটদাতাই গ্রামীন ভোটার। কাজেই পঞ্চায়েতে এই দুই জেলার ফল তৃণমূল নেত্রীকে উদ্বিগ্ন করেছে তা বলাই বাহুল্য।
ক্ষমতায় আসার পর এ অঞ্চলের মাওবাদীদের 'সাফ' করে, মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বলে দিয়েছিলেন জঙ্গলমহল হাসছে। সেই হাসিমুখ যেন হঠাতই পাল্টে গেছে। আদিবাসীদের ক্ষোভের দুটি মূল কারণ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমত মাহাতোদের খুশি করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে 'কুর্মি মাহাতো' সম্প্রদায়কে এবিসি থেকে এসটি কোটায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। তিনি কেন্দ্রকে জানান, 'কুর্মি মাহাতোদের ধর্মবিশ্বাস ও সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে আদিবাসী ধর্মবিশ্বাস ও রীতিনীতির মিল রয়েছে।' এতে মাহাতোরা খুশি হলেও আদিবাসী আবেগে আঘাত লেগেছে।
অপর অভিযোগটি অবশ্য আদিবাসীদের তরফ থেকে নতুন নয়। আদিবাসী এলাকায় বিভিন্ন প্রকল্পে তাঁদের যেসব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়, তার বেশিরভাগটাই শাসকদলের নেতা কর্মীদের হাতেই থাকে, আদিবাসীদের হাতে তা পৌঁছায় না। এই দুর্নীতির অভিযোগ সঠিক কি না তা তদন্তের বিষয়। তবে সবকিছু যে ঠিকঠাক চলছে না, তা পরোক্ষে মেনে নিয়েছেন তৃণমূল নেতারাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আদিবাসী এলাকার তৃণমূল বিধায়ক চুড়ামনি মাহাতোকে বকাঝকা করতে দেখা গিয়েছে অতীতে।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ যখন জমছে, তখনই নিঃশব্দে এই এলাকায় বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে বিজেপি। দলের চালিকা শক্তি আরএসএস এখানে একের পর এক স্কুল খুলেছে। অনুন্নত এলাকা গুলির সেই সব স্কুলে পড়াশোনা করে অনেক আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীই। কাজেই তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে বিজেপির গ্রহণ যোগ্যতা বেড়েছে।
এ অবস্থায় ২০১৯ লোকসভা ভোটের আগে অবস্থা সামাল দিতে এক অভূতপূর্ব উপায় নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজ্যের সিভিক ভলান্টিয়ারদের আদিবাসী এলাকাগুলোতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজ হবে সরকারি সুযোগ সুবিধা ঠিকমতো আদিবাসীদের ঘরে ঘরে পৌঁছচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখা। এখন তাতে কাজ হবে. না বিজেপিতেই আরও আস্থা রাখবেন আদিবাসীরা সেটা দেখতে ২০১৯ অবধি অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।