মাননীয়া মমতাদেবী, 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনি শুনে জ্যোতিবাবু কিন্তু ধুতির খুঁট ধরে তেড়ে যেতেন না
গত শনিবার (৪ মে) আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চন্দ্রকোনা দিয়ে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় যাচ্ছে, তখন রাস্তার ধারে কিছু লোক "জয় শ্রী রাম" ধ্বনি তোলে।
গত শনিবার (৪ মে) আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চন্দ্রকোনা দিয়ে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় যাচ্ছে, তখন রাস্তার ধারে কিছু লোক 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনি তোলে। মুখ্যমন্ত্রী তক্ষুনি তাঁর গাড়ি দাঁড় করিয়ে নেমে আসেন। এবং তাঁকে নামতে দেখে ওই লোকগুলি পালিয়ে যায়। তাই দেখে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী কটাক্ষ করে বলেন 'পালাচ্ছিস কেন?' তারপর তিনি তাঁর বহুল ব্যবহৃত কথাটি আরেকবার উচ্চারণ করেন: 'হরিদাস। পরে কয়েকজনকে এই ঘটনায় আটকও করা হয়।
মোদীকে সুবর্ণ সুযোগ করে দিলেন মমতা
মমতার এই কাণ্ডটি ফুলটস বল ছুঁড়ে দেয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে। ওই ঘটনার ঠিক দু'দিন পরে ওই মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়েই মোদী নিশানা করেন মমতাকে; বলেন পশ্চিমবঙ্গে এখন "জয় শ্রী রাম" বললেই মমতা সরকারের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। তিনি পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেন পারলে মমতা তাঁকেও জেলে পুড়ুক "জয় শ্রী রাম" বলার জন্যে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাটি থেকে উঠে আসা নেত্রী, জননেত্রীও বটে। কিন্তু বিজেপি নামক রাকনৈতিক প্রতিপক্ষটির মোকাবিলা করতে গিয়ে তিনি বেশ কিছু কাঁচা পদক্ষেপ নিয়ে ফেলছেন বারেবারেই। হয়তো ভাবছেন যে বঙ্গের মাটিতে তাঁকে হারানো বিজেপির পক্ষে অসম্ভব আর তাই ধরছেন আক্রমণাত্মক ভাবমূর্তি, কিন্তু তাতে তিনি নিজের পদমর্যাদাটিই খাটো করছেন।
দক্ষ প্রশাসক হওয়া মানেই গাড়ি থেকে নেমে তেড়ে যাওয়া নয়
দক্ষ প্রশাসক হওয়ার অর্থ মানুষের দিকে গাড়ি থামিয়ে তেড়ে যাওয়া নয়। তাঁর পূর্বসূরি জ্যোতি বসু নব্বইয়ের প্রথম দিকে বাবরি ধ্বংসের সময়ে পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় হানাহানির আঁচ পর্যন্ত লাগতে দেননি; শক্ত হাতে ধরেছিলেন প্রশাসন। তাঁকে "জয় শ্রী রাম" ধ্বনির দিকে ধুতির খুঁট হাতে নিয়ে তেড়ে যেতে হয়নি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা করলেন রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসক হিসেবে, তাতে প্রতিপক্ষ তো সুযোগ পেয়ে গেলই, পাশাপাশি তিনি নিজেকে হাস্যস্পদও করলেন। সারা রাজ্যের মানুষ নিশ্চই তাঁর মতো করে, তাঁর দলের মতো করে ভাববে না বা কাজ করবে না। আর তার জন্যে পুলিশ-প্রশাসন যদি ব্যক্তিবিশেষে তাড়া করতে থাকে, আটক করতে থাকে, তাহলে তো বলতে হয় বঙ্গে এখন হীরক রাজার রাজত্ব চলছে। গণতন্ত্রের কোনও বালাই নেই। আর সেইরকম পরিবেশ সৃষ্টিতে আস্কারা দিয়ে নিজেরই ক্ষতি করছেন তৃণমূল নেত্রী, দীর্ঘমেয়াদে। ব্যাপারটাকে অবজ্ঞা করতে পারলেন না কেন উনি?
মমতার এই প্রতিক্রিয়া সংখ্যাগুরু ভোটারদের কাছে নেতিবাচক ইঙ্গিত
মুখে ধর্মীয় রাজনীতি করি না বললেও মমতার "জয় শ্রী রাম" ধ্বনি শুনে প্রতিক্রিয়া সংখ্যাগুরু ভোটারদের উপরে নিশ্চিতভাবেই পড়বে আর মোদী সেটা বুঝেই "পশ্চিমবঙ্গে জয় শ্রী রাম বললেই রোষানলে" বা "মাসুদ আজহার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তালিকাভুক্ত হলেও মমতার মুখে দেশের সমর্থনে কোনও কথা শোনা যায় না" ইত্যাদি কথা বলে সংখ্যাগুরুদের খেপিয়ে দিচ্ছেন যাতে পশ্চিমবঙ্গে মেরুকরণ হয় এবং তার ফসল বিজেপি ঘরে তোলে। ভাবতে অবাক লাগছে যে এতদিনের পোড় খাওয়া একজন রাজনীতিবিদ হয়েও মমতা কত সহজেই এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
আসলে ক্রিকেটের মতো রাজনীতিতেও বল ছাড়ার কায়দাটাও রপ্ত করা খুব প্রয়োজন।