দিনে দুপুরে খুন-ডাকাতি ছিল বাঁ হাতের খেল! পুলিশ অফিসারের ছেলেই হয়ে ওঠল অপরাধ জগতের 'KING'
নিশ্চিন্ত দুপুর! কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘিরে ফেলা হল গোটা আবাসন। হঠাত করেই চলতে শুরু করল গোলাগুলি। আতঙ্কিত আবাসনের মানুষ। কেউ বা জানলা দিয়ে উঁকি দিলেন কেউ আবার দরজা দিলেন ভালো করে। কিন্তু হচ্ছেটা কি? সবার মনেই কৌতূহল। দ
নিশ্চিন্ত দুপুর! কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘিরে ফেলা হল গোটা আবাসন। হঠাত করেই চলতে শুরু করল গোলাগুলি। আতঙ্কিত আবাসনের মানুষ। কেউ বা জানলা দিয়ে উঁকি দিলেন কেউ আবার দরজা দিলেন ভালো করে। কিন্তু হচ্ছেটা কি? সবার মনেই কৌতূহল। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে গোলাগুলির আওয়াজ। এরপর সব শান্ত...!
এরপর অনেকেই সাহস করে বাইরে আসতে শুরু করে। কিন্তু কে লুকিয়ে ছিল তাঁদের আবাসনে? ততক্ষণে টিভির পর্দায় ব্রেকিং চলতে শুরু করেছে, এসটিএফের গুলিতে খতম পাঞ্জাবের কুখ্যাত গ্যাংস্টার জয়পাল সিং ভুল্লার।
কিন্তু কে মোস্ট ওয়াণটেড ভুল্লার?
জয়পালের শুরুটা হয়েছিল আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই। বাবা পঞ্জাব পুলিশের আধিকারিক। ছেলেকে আর পাচজনের মতোই বড় করে তোলেন। খেলাধুলোতে বেশ আগ্রহ ছিল জয়পালের। আর তাই ছোট থেকে হ্যামার থ্রোয়ার শিখতে শুরু করে জয়পাল। জাতীয় স্তরে এই খেলায় নাম ডাক হয় তাঁর।
কিন্তু একজন খেলোয়ারের পিছনে যে অনেক বড় এক অন্ধকার জগত লুকিয়ে তা কেউ বুঝে উঠতেই পারেনি। ক্রমশ সেই জয়পাল হয়ে উঠেছিল পাঞ্জাবের অপরাধ জগতের রাজা। অনেকেই বলত জয়পাল নাকি কিং অফ গ্যাংস্টার!
একের পর এক অপরাধ করে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে চোখের পলকে 'গায়েব' হয়ে যেত সে। অনেক সময়ে জয়পাল হুমকি দিত পুলিশকে এই বলে যে, ডন কো পাকড়া না মুসকিলই নেহি না মুমকিন হ্যাঁ...! সিনেমার ডায়লগ হলেও বাস্তবে এটাই ছিল সত্যি।
২০১৬ থেকে তাকে খুঁজছে পুলিশ। তার মাথার দাম ছিল ১০ লক্ষ টাকা। ফোন ব্যবহার করত না না জয়পাল। ফলে পুলিশের পক্ষ্যে তাঁর এরিয়া খোঁজা সত্যিই কঠিন ছিল।
জানা যায়, ২০১৬ তে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাস্টার রকিকে খুন করে পালায় জয়পাল সিং ভুল্লার। এখানেই শেষ নয়। রকিকে খুন জয়পালের অপরাধ জগতের হাতেখরি ছিল। এমনটাই মনে করছেণ আধিকারিকরা।
ভয়াবহ ডাকাতি, দুঃসাহসিক খুনের ঘটনার পরও তাকে নাগালে পায়নি পুলিশ। এই কয়েক বছরে একের পর এক গ্যাংস্টার ধরা পড়লেও পুলিশকে অন্ধকারে রেখেছিল জয়পাল। মোট ৪৫ টি মামলা ছিল এই গ্যাস্টারের বিরুদ্ধে।
রকিকে খুনই শেষ নয়, ২০১৭-তে চণ্ডীগড়ে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের ক্যাশ ভ্যান থেকে ১ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা লুঠ করে জয়পাল ও তার দলবল। এই ঘটনায় জড়িত ছিল তার ভাই অমৃতপাল সিং ভুল্লারও। ২০২০-তে লুধিয়ানায় দিনের আলোয় ৩০ কেজি সোনা লুঠ করে পালায় ওই গ্যাং।
এই ঘটনার পর পাঞ্জাবের 'অর্গানাইজড ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট' গ্রেফতার করে জয়পালের ভাই অমৃতপাল ও গ্যাং-এর আর এক দুষ্কৃতী গগণদীপ। সে বারও অনায়াসে পালিয়ে যায় জয়পাল। তাঁর উপর চাপ বাড়াতে একের পর এক তাঁর গ্যাঙে থাকা দুস্কৃতীদের এনকাউন্টার করতে থাকে পঞ্জাব পুলিশ।
কিন্তু তাতেও তাঁর নাগাল পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি পাঞ্জাবের জাগরাওঁতে দুই পুলিশকর্মী খুনের ঘটনায় ফের উঠে আসে জয়পালের নাম। গত ১৫ মে ভগবান সিং ও দলবিন্দরজিৎ সিং নামে দুই এএসআই-কে গুলি করে খুন করা হয়।
আর তাতেই জড়িত ছিল জয়পাল। জয়পাল ছাড়াও জসপ্রীত সিং নামে আরও এক দুষ্কৃতীর নাম উঠে আসে এই ঘটনায়। বুধবারের শ্যুটআউটে জসপ্রীতেরও মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
এদিন এই অপারেশনে এসটিএএফ সহ রাজ্য পুলিশের একাধিক আধিকারিকের সঙ্গে ছিল পঞ্জাব পুলিশও। তাঁরা ইতিমধ্যে কুখ্যাত এই দুষ্কৃতীর পরিচিত নিশ্চিত করেছে।