বাংলায় বিজেপির সবথেকে বড় শত্রু কি তৃণমূল নেত্রী মমতাই! আপনি তাহলে জানেনই না
বাংলায় বিজেপির সবথেকে বড় শত্রু কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই! আপনি জানেনই না
২০২০-র শেষ থেকে ২০২১ জুড়ে ভারতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে। ২০২০-তে বিহার নির্বাচনে যেমন মহাজোটের পরীক্ষা হবে, তেমনই পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বড়সড় চ্যালেঞ্জের সামনে এনে ফেলেছে। মমতা যাঁর বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি সরব হয়েছিলেন সেই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেই এবার লড়াই সেয়ানে সেয়ানে।
বাংলায় লড়াই এবার বিজেপি বনাম তৃণমূলের
বাংলায় অ-বিজেপি দলগুলির মধ্যে নির্বাচনকালীন প্রাক-জোটের কোনও লক্ষ্মণ নেই। সিপিএম এবং কংগ্রেস নির্বাচনের আগে জোট গড়ে লড়বেন। কিন্তু প্রধান লড়াই বিজেপি বনাম তৃণমূলের। পশ্চিমবঙ্গের দুই নম্বর রাজনৈতিক দল হয়ে ওঠা বিজেপি অবশ্যই রাজ্যে ক্ষমতায় আসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
বিজেপির নিজেদের সঙ্গে নিজেদের লড়াই-ই মুখ্য
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবির বা বিজেপির মূল শত্রু কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস নয়। বাংলায় বিজেপির মূল শত্রু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নন। বাংলায় বিজেপিকে এবার সবথেকে বেশি লড়তে হবে বিজেপির সঙ্গেই। ২০২১-কে টার্গেট করে বাংলার ভোট ময়দানে নেমেছে বিজেপি। সেখানে নিজেদের সঙ্গে নিজেদের লড়াই-ই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
বিজেপি ভালো করেছে, তৃণমূলের ভোটও বেড়েছে
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভোটের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। আর বাংলায় উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমেছে বাম-ভোট। যেখানে বামেদের শক্তি বেশি, সেখানে বিজেপি ভালো করেছে। আবার তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটের হার কমেনি। বরং তৃণমূলের ভোট বেড়েছে।
অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর থাকলেও উজ্জ্বল মমতা
২০২১-এর প্রাক্কালে বাংলায় একটি বিশাল অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর রয়েছে। বামফ্রন্টের সমর্থকদের মধ্যে মতাদর্শগত পরিবর্তন হয়েছে। হিন্দুত্বের দিকে এগিয়ে পা বাড়ানোর একটা প্রবণতাও রয়েছে বাংলায়। তবে মমতার সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর ভাবমূর্তি এবং প্রশাসনের সক্রিয়তার মধ্যে নিহিত রয়েছে।
মমতা নিজস্ব একটা ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন
সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের পরে মমতা নিজস্ব একটা উন্নয়নমূলক ভাবমূর্তি তৈরি করেছেন। বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করেছেন। কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে সাইকেল বিতরণ, স্বল্প মূল্যে চাল বিতরণ, রাস্তাঘাট উন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাকে উন্নীত করার পরিকল্পনা করে গিয়েছেন। মমতার ভাবমূর্তি আর কাজ করার মানসিকতা অনেক ইনকাম্বেসি ফ্য্যাক্টরকে দূরে সরিয়ে দেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক
বাংলায় বিজেপির সমস্যা খানিকটা দিল্লির মতো
তবে সেটা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সবচেয়ে বড় সমস্যা নয়। বাংলায় বিজেপির সমস্যা খানিকটা দিল্লির মতো। ফায়ারব্র্যান্ড স্ট্রিটফাইটার এবং সক্ষম প্রশাসক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এ রাজ্যে বিশ্বাসযোগ্য মুখের অভাব রয়েছে। এই সংকটের পাশাপাশি, বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ লড়াই বিজেপির কাছে অশনি সংকেত হয়ে উঠেছে।
দিলীপ ঘোষ বনাম মুকুল রায়ের দ্বন্দ্ব কি ফ্যাক্টর
বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ বনাম মুকুল রায়ের দ্বন্দ্ব কী ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। মুকুল রায় তৃণমূলকে ভাঙার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং বিজেপিকে রাজ্যে ক্ষমতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে তৃণমূল শিবির ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও সাংঘাতিক ভাঙন দেখা যায়নি। বড় কোনও নেতৃবৃন্দ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেননি।
মোদী-শাহ কিংবা যোগীর মতো মুখ নেই বাংলায়
রাজ্য বিজেপি ইউনিট বুঝতে পেরে গিয়েছে, তারা পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে কেবল হিন্দুত্ববাদ ও বিরোধী-কর্মসূচির অ্যাজেন্ডায় নির্বাচন জিততে পারবে না। সেইসঙ্গে বিজেপি এ কথাও জানে যে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বা উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের মতো মুখ বাংলায় পাবে না।
হিন্দুত্ববাদ বা মেরুকরণের রাজনীতি ও মুসলিম তোষণ
তারপর বঙ্গ সংস্কৃতিতে বেমানান বিজেপির ভাষাগত ব্যবধান ভোট-ব্যাঙ্কে বাধা হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদ বা মেরুকরণের রাজনীতি এবং মমতার মুসলিম তোষণকে পাথেয় করে বিজেপি ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারবে না। ৩৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে বামদের অধীনে ছিল বাংলা এবং বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ইতিহাস ছিল।
ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে বেশি আগ্রহ
বাংলার ভোটাররা দিনের শেষে ফের একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে ক্ষমতায় আনতে বেশি আগ্রহী হতে পারে। উন্নয়নমূলক ধারণা নিয়ে চলা সমান্তরাল কোনও সরকারে তাদের যতটা আগ্রহ, ততটা আগ্রহ ভোট-মেরুকরণের রাজনীতির সঙ্গে নেই। বরং বেশিরভাগ মেরুকরণের বিরুদ্ধে।
মুকুল-কৈলাশ সমীকরণে চাপ বাড়ছে দিলীপের! একুশের আগে অশনি সঙ্কেত বিজেপিতে