‘ট্রিপল মিউট্যান্টে’ আতঙ্ক বাংলাতে! ভয়ঙ্কর ভাবে কি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ‘বেঙ্গল স্ট্রেন’?
আর এর মধ্যে নতুনভাবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের নয়া স্ট্রেন। চিকিৎসকরা বলছেন সেই স্ট্রেন নাকি ট্রিপল মিউট্যান্ট (triple mutant) অর্থাৎ তিনটি মিউটেশন হয়ে জন্ম হয়েছে ভাইরাসের এই নতুন রূপ।
দৈণিক করোনার গ্রাফ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের মধ্যে সংক্রমণে রেকর্ড গড়ছে ভারত। প্রত্যেকদিন আক্রান্ত হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। বাংলাতে দৈনিক করোনার সংক্রমণের হার ১২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ভোটমুখী বাংলায় পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা ভেবেই অনেকেই ভয় পাচ্ছেন। আর এর মধ্যে নতুনভাবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের নয়া স্ট্রেন। চিকিৎসকরা বলছেন সেই স্ট্রেন নাকি ট্রিপল মিউট্যান্ট (triple mutant) অর্থাৎ তিনটি মিউটেশন হয়ে জন্ম হয়েছে ভাইরাসের এই নতুন রূপ।
আর তাতেই নাকি বাংলা জুড়ে হু হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। মূলত পশ্চিমবঙ্গে এই স্ট্রেন দেখা যাচ্ছে। তাই একে 'বেঙ্গল স্ট্রেন' বলছেন বিশেষজ্ঞরা। নয়া এই স্ট্রেন নিয়ে আতংকে চিকিৎসকরা।
কি এই ট্রিপল মিউট্যান্ট ভারিয়ান্ট?
নয়া এই ভ্যারিয়ান্টে রয়েছে তিনটি মিউটেশন। এতে দুটি মিউটেশন বাদ গিয়েছে ও দুটি পরিবর্তন হয়েছে। বাদ গিয়েছে H 146, Y 145. আর পরিবর্তন হয়েছে দুটি মিউটেশনে E484K ও D614G। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হচ্ছে B.1.618. মূলত এটি বাংলাতে ছড়িতে পড়তে দেখা গিয়েছে। এই বিষয়ে দিল্লির 'কাউন্সিল অফ সাইন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটে'র বিশেষজ্ঞ বিনোদ স্কারিয়া একটি টুইট করেছেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন গত বছরের ২৫ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের এক রোগীর শরীরে প্রথম এই মিউট্যান্ট ধরা পড়েছিল, আর সম্প্রতি গত ১৬ ই মার্চ সেই স্ট্রেন ধরা পড়ে বাংলায়। আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডেও পাওয়া গিয়েছে সেই স্ট্রেন।
নয়া ভ্যাকসিন কতটা কাজ করবে তা নিয়ে সন্দেহ
বাংলার পাশাপাশি দিল্লি, মহারাষ্ট্রেও ভংকর এই স্ট্রেনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নয়া এই স্ট্রেনের ওপর ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী তা এখনও স্পষ্ট নয়, তবে এই ভ্যারিয়ান্টে রয়েছে E484K মিউটেশন, আর সেটাই ভাবাচ্ছে গবেষকদের। জানা যাচ্ছে এই মিউট্যান্ট সহজেই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেদ করতে পারে, আর তাতেই প্রশ্ন উঠছে ভ্যাকসিন এর কার্যকারিতা নিয়ে।
কতটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এই স্ট্রেন?
বিনোদ স্কারিয়া এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই স্ট্রেন সম্পর্কে এখনই বলার তেমন সময় আসেনি। কারন নয়া এই স্ট্রেন নিয়ে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বেঙ্গল স্ট্রেন নাম দেওয়া হলেও এখনও এটি অচেনা, বলছেন চিকিৎসকর। তবে বাংলায় যে এটি অনেক বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সে কথা জানিয়েছেন স্কারিয়া। সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে বাংলায় যত পরিমাণ সংক্রমণের হদিশ মিলেছে তার মধ্যে ১৫ শতাংশেই এই ভ্যারিয়ান্ট রয়েছে।
কেন ভয়ঙ্কর এই ভ্যারিয়ান্ট?
এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি এই বিষয়ে। কিন্তু প্রাথমিক গবেষণা থেকে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটি অন্যান্য ভ্যারিয়ান্টের থেকে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাত্কার দিতে গিয়ে ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির এপিডেমোলোজির অধ্যাপক ডক্টর মধুকর পাই জানিয়েছেন, এটি অনেক দ্রুত মানুষকে সংক্রামিত করতে পারে। খুব দ্রুত মানুষ এতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তবে এই সংক্রমণ একাধিকবার হতে পারে কিনা, ভ্যাকসিন এর ওপর কার্যকর কিনা, তা নিয়ে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একনজরে বাংলার করোনা পরিসংখ্যান
বৃহস্পতিবারের হিসাবে বাংলায় সাত লাখ পেরিয়ে গিয়েছে করোনা সংক্রমণ। করোনার দৈনিক আক্রান্ত প্রায় ছুঁয়ে ফেলল ১২ হাজারের গণ্ডি। বৃহস্পতিবার রেকর্ড সংক্রমণ হল বাংলায়। টেস্টিং বাড়াতেই বাংলায় করোনার সংক্রমণ আকাশ ছুঁল। দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সক্রিয়ও বাড়ছে। বাড়ছে করোনাজয়ীও সংখ্যাও। এটুকুই যা স্বস্তি। স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১১৯৪৮ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা গতদিন পর্যন্ত ছিল ৬ লক্ষ ৮৮ হাজার ৯৫৬ জন। এদিন ১১৯৪৮ জন বেড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লক্ষ ৯০৪ জন। রাজ্যে করোনা সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০৭৬৬। এদিন মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের।