লালগড়ের বাঘ চলেছে কোথায়, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
বাঘ বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাঘ সাধারণত যে ধরনের জঙ্গলে থাকতে ভালবাসে লালগড়ের জঙ্গল তেমন। এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি লালগড়ের জঙ্গলকে ট্রানজিট রুট হিসাবে ব্যবহার করছে।
লালগড়ের জঙ্গলে মাও নয় এখন বাঘ পড়েছে। আর তাতেই তটস্থ এলাকার মানুষ। কিন্তু, লালগড়ের জঙ্গলে এই বাঘা বাবাজি কি পাকাপাকি আস্তানা গাড়তে বসেছেন? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
যদিও, বাঘ বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাঘ সাধারণত যে ধরনের জঙ্গলে থাকতে ভালবাসে লালগড়ের জঙ্গল তেমন। এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি লালগড়ের জঙ্গলকে ট্রানজিট রুট হিসাবে ব্যবহার করছে। আসলে তার লক্ষ ঝাড়গ্রাম বা দক্ষিণ বাঁকুড়ার সুতানের জঙ্গল। সুতানের জঙ্গলে অবশ্য হাতির ভালোরকম যাতায়াত আছে। জঙ্গলের বেশকিছু গ্রাম আছে সেখানে প্রচুর গবাদি পশু আছে। এছাড়াও এই জঙ্গলে প্রচুর পরিমানে হরিণও আছে। যা বাঘের প্রিয় খাদ্য।
তাহলে লালগড়ের জঙ্গলে বাঘটি এখনও রয়েছে কেন? বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘ দীর্ঘদিন ধরে পথ চললে একটা জায়গাকে সে জিরোবার স্থান হিসাবে ব্যবহার করে। এই সময়ে সে এখানে খাবার সংগ্রহ করে। পেটপুরে খাবার খেয়ে দিন কয়েক জিরিয়ে নিয়ে চলতে শুরু করে। লালগড়ের জঙ্গলে যে বাঘ পড়েছে তা সামনে আসে শুক্রবার। কিন্তু, লালগড়ে বিগত কয়েক দিন ধরেই নানাভাবে গবাদি পশুরা জখম হয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞদের কথা মানলে লালগড়ের বাঘের কিন্তু জিরিয়ে নেওয়ার সময় শেষ হয়ে এসেছে। সুতরাং, সে তার গন্তব্যের দিকে এগিয়ে গেলও যেতে পারে।
যদিও, বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন জানিয়েছেন, বাঘ ধরতে একটি দল লালগড়ে গিয়েছে। বাঘ ধরা পড়লে তার মতিগতি বুঝে ও দিল্লির অনুমতি পেলে বক্সায় পুনর্বাসন দেওয়ার কথা চিন্তায় আছে। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা জানিয়েছেন, 'শনিবার সকাল থেকে খাঁচা পাতার তোড়জোড় শুরু হবে।'
কিন্তু, লালগড় জঙ্গলে কোথায় থেকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এল? এর কোনও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিংহ জানিয়েছেন, 'গত ৫০-৬০ বছরে ওই এলাকায় বাঘের দেখা মেলেনি। ফলে, এই মুহূর্তে কিছু বলা অসম্ভব।'
লালগড়ের জঙ্গলে বড় বড় পায়ের ছাপ এবং ৭টি গরুর মৃত্যু, ৩টি গরুর জখম হওয়া নিয়ে বনদফতরের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দারা। এরপরই ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয় লালগড়ের জঙ্গলে। ক্যামেরাবন্দি ছবি দেখে চক্ষু চড়কগাছ বন দফতরের। কারণ, ক্যামেরায় ধরা পড়া প্রাণীটি একটি বিশাল আকারের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ক্য়ামেরায় ওঠা প্রথম ছবিটি ২ মার্চ ভোর ৪.২৮টায়। শেষ ছবিটি সকাল ৬.১৫টায়। মানে বোঝাই যাচ্ছে এই সময়টায় বাঘটি শিকারের চেষ্টায় ছিল।
বন্যপশু বিশেষঞ্জদের মতে, দলমা হাতিদের রুট ধরে লালগড়ে বাঘের ঢুকে পড়াটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পালামউ-এর জঙ্গল থেকে বাঘটি সিমলিপালের জঙ্গল দিয়ে লালগড়ের দিকে ঢুকে পড়তে পারেও বলে মনে করছেন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ওড়িশার সিমলিপাল থেকে গরুমহিষানি-দুমারিয়া হয়ে সুর্বর্ণরেখা হয়ে কংসাবতী পেরিয়ে আসতে পারে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। এছাড়াও আরও দুটি রুট আছে। ঝাড়খণ্ডের পলামু থেকে পূর্ব সিংভূম-হাতিবাড়ি হয়ে লালগড়ে জঙ্গলেও ঠিকানা গাড়তে পারে বাঘটি। অন্য আরএকটি রুট রহচ্ছে ঝাড়খণ্ডের দলমা থেকে বেলপাহাড়ির কাঁকরাঝোড় হয়ে লালগড়ের পথে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সরিস্কা অভয়ারণ্য থেকে বাঘ রাজস্থানের ভরতপুর পক্ষী অভয়রারন্যেও গিয়েছে এমন রেকর্ডও আছে। মহারাষ্ট্রের নাগজিরার জঙ্গল থেকে জয় নামে একটি বাঘ ১৫০ কিলোমিটার দূরের উম্বেদ কারহান্ডলায় এসেছিল। অসমের কাজিরাঙা থেকে মানস পর্যন্ত ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে।