ছাই সরিয়ে বাঁচার চেষ্টা! দুঃস্বপ্নের রাতে নিঃস্ব বাগবাজারের ৭০০ ঝুপড়িবাসী, নিশ্চিহ্ন ১০০ বাড়ি
শেষ পর্যন্ত ২৭টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় প্রায় দুই ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে বাগবাজারে আগুন৷ তবে সেই দুঃস্বপ্নের রাত পোহাতেই যেন আরও ভারী হয়ে উঠল ৭০০ জনের মন। বিধ্বংসী আগুনের জেরে ১০৮টি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। শীতের রাতে সর্বস্ব হারিয়ে মানুষ রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। ফোন মারফত পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে গোটা এলাকাকে
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছটা নাগাদ বাগবাজার মহিলা কলেজের সামনের ঝুপড়িতে ভয়াবহ আগুন লাগে৷ প্রকট শব্দে পরপর পাঁচটি সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ হয়৷ সঙ্গে সঙ্গে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে গোটা এলাকাকে৷ ঘটনাস্থানে পৌঁছায় দমকলের ২৭টি ইঞ্জিন৷ ঘিঞ্জি বস্তিতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাদ যায়নি সারদা মায়ের বাড়িও। বাড়ির একাংশে আগুন লেগে বেশ কিছু নথি পুড়ে যায়। যদিও স্বস্তি, কোনও হতাহতের খবর নেই। দু'ঘণ্টা পর ২৭টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
উত্তেজিত জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে
একে উত্তর কলকাতার ঘিঞ্জি এলাকা। তার উপর বস্তিতে ঢোকার মুখের রাস্তাও সংকীর্ণ। আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে দমকলের ইঞ্জিন পৌঁছায়। দমকলকে দেখেই উত্তেজিত জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের অভিযোগ, সময়মতো খবর দিলেও দমকল পৌঁছায়নি। দু'পক্ষের মধ্যে বচসা বাধে। দমকল কর্মীদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
উত্তুরে হাওয়ার দাপটে আগুন পাশের বহুতলেও ছড়িয়ে পড়ে
এদিকে ততক্ষণে উত্তুরে হাওয়ার দাপটে আগুন পাশের বহুতলেও ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে আগুন লাগার পরপরই বস্তিতে একের পর এক সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে থাকে। প্রাণ ভয়ে মানুষ এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে। অবশ্য সময়মতো বস্তি থেকে বেরিয়ে আসে মানুষজন। তাই প্রাণে রক্ষা। কিন্তু চোখের সামনে ঘর থেকে আসবাব, প্রয়োজনীয় নথি-পত্র ছাই হতে দেখে অনেকে হাউ হাউ করে কেঁদেছে।
দমকল কর্মীদের উপর চড়াও হয় সাধারণ মানুষ
এদিকে আগুন লাগার পর দেরিতে আসায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্থানীয় মানুষ৷ দমকল কর্মীদের উপর চড়াও হয় সাধারণ মানুষ৷ তাঁদের সরাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় বাগবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা৷ বাগবাজারের সারদা মায়ের বাড়ি অক্ষত থাকলেও উল্টোদিকে অবস্থিত উদ্বোধন অফিস ও লাইব্রেরি পুড়ে গিয়েছে৷
বাগবাজারে যান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম
ঘটনাস্থানে গিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের মুখে পড়েন স্থানীয় কাউন্সিলর বাপী ঘোষ এবং রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা৷ আগুনের খবর পেয়ে গঙ্গাসাগর থেকে দ্রুত রওনা দেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বস্তিতে বসবাসকারীদের মহিলা কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় । রাতে সেখানেই তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মন্ত্রী জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর বৃহস্পতিবার থেকে পুনরায় বস্তি নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
বাগবাজারে সংরক্ষিত প্রতিষেধক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি
এদিকে আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বাগবাজারের কেন্দ্রীয় মেডিকেল স্টোরে সংরক্ষিত করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক অক্ষত রয়েছে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। যদিও এই ঘটনার জেরে প্রতিষেধক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।