রবীন্দ্রভারতীতে জাত তুলে শিক্ষকদের আক্রমণ: এ কি শিক্ষাক্ষেত্রের অরাজকতা নাকি আরও বড় কিছু বিপদ?
এক প্রস্থ সমস্যা মিটেছে সবে। "লক্ষ্মী ভাইবোনেরা" বলে ধর্মঘটি জুনিয়র ডাক্তারদের পথে ফিরিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এরপরেই দেখা গেল আরেকটি সমস্যা। এবারের ঘটনা ঘটেছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জাত এমনকি গায়ের রঙ নিয়েও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। ইস্তফা দিয়েছেন একের পর এক বিক্ষুব্ধ শিক্ষক। এই ঘটনার জেরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেখানকার উপাচার্য এবং অভিযোগকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পরে জানান যে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটলে কড়া শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কোন ছাত্র সংগঠন এই কাজ করেছে সেটি বিচার্য বিষয় নয়। যারাই করে থাকুক, শিক্ষাগুরুর প্রতি এমন আচরণ বোঝায় সমাজের অবক্ষয় কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। কড়া পদক্ষেপ অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু যদি খোদ শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে, তাহলে তা বিশেষভাবে ভাবায় বৈকি। শিক্ষামন্ত্রী যদিও কড়া সুরে জানিয়েছেন যে এমন আচরণ বরদাস্ত করা হবে না, কিন্তু তা বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত হবে?
মমতা শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা কোথায় গেল?
প্রথম ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, একথা অনস্বীকার্য। প্রেসিডেন্সি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে সেখানে উচ্চপর্যায়ের প্রতিভাদের এনে সার্বিকভাবে শিক্ষার অগ্রগতির নীলনকশা তিনি বানিয়েছিলেন। কিন্তু অচিরেই সে সমস্ত কর্মোদ্যোগ ভুলুন্ঠিত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য দিন দিন বাড়তেই থাকে। প্রেসিডেন্সিতে যাঁরা এসেছিলেন, তার অনেকেই কাজ ছাড়েন। প্রত্যন্ত স্থানে তো শিক্ষাক্ষেত্র রীতিমতো রাজনৈতিক কুস্তির আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এবারে খাস কলকাতার বুকেই দেখা গেল ফের সেই অরাজকতার নিদর্শন: শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি অবমাননা।
এ কি শুধুমাত্র রাজনৈতিক সংঘাত নাকি অন্য কিছু?
জাত তুলে আক্রমণ করার ঘটনাটিতে মনে আরও আশঙ্কা তৈরী হয় এই ভেবে যে তাহলে কি রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই রাজ্যে জাতপাতের সামাজিক সংঘাতও শুরু হল? নাকি এটিও এই রাজ্যের চিরকালীন রাজনৈতিক সংঘাতপূর্ণ আবহাওয়ারই আরেকটি দিক? সমস্যা যাই হোক, সংকেতটি ভালো নয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।