
বাংলার লক্ষ্মীলাভ এবার দুর্গোৎসবে, ৫০ হাজার কোটির বাণিজ্যে ঘুরে দাঁড়াল অর্থনীতি
করোনার প্রকোপে গত দু-বছর দুর্গাপুজো হয়েছিল নমো নমো করে। আক্ষরিক অর্থেই উৎসব, আনন্দের বাইরে আতঙ্কেই দিন কেটেছে বঙ্গবাসীর। এবার সেই আতঙ্কের আবহ কাটিয়ে দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াল। অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হল বাংলায়। পুজোর বাণিজ্যে এল বিরাট সুখবর।

করোনার প্রকোপ কাটিয়ে বাংলা যখন উৎসবমুখী
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলা আবার উৎসবমুখী হয়েছে। প্রাণ খুলে পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে বঙ্গবাসী। উৎসবের আয়োজনে কোনও খামতি ঠছিল না। পুজোর থিম, বিষয় ভাবনা থেকে শুরু করে মণ্ডপসজ্জার যাবতীয় কর্মযজ্ঞ থেকে শুরু করে বিকিকিনির ব্যবস্থা ছিল কলকাতা-সহ বাংলার বিভিন্ন জেলাজুড়ে।

দুর্গাপুজোয় বাংলায় বাণিজ্য ৫০০০০ কোটি!
এবার বাংলায় এই দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সমস্ত ছোটো ও বড় ব্যবসা প্রাণ ফিয়ে পেয়েছে। এবার দুর্গাপুজোয় বাংলায় বাণিজ্যের অঙ্ক পেরিয়ে গিয়েছে ৫০ হাজার কোটির গণ্ডি। আয়োজন সংস্থা ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের তরফে তথ্য দিয়ে জানানো হয়েছে এই তথ্য। যে ৫০ হাজার কোটি বাণিজ্যের তথ্য দেওয়া হয়েছে ফোরামের তরফে, তা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবথেকে বেশি বলে দাবি করা হয়েছে।

৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলার অর্থনীতি
এবার বাংলরা দুর্গাপুজোতে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। তারপর বাংলার ঘরে লক্ষ্মী বাস করতে শুরু করেছে। কথায় আছে বাণিজ্যে বসতঃ লক্ষ্মী। সেইমতো কোজাগরী লক্ষ্মী আরাধানার দিনেই বাংলার পুজোয় লক্ষ্মীলাভের অঙ্ক প্রকাশ পয়েছে। আইআইটি খড়গপুর, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও ইংল্যান্জডের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ এক সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৯ সালের থেকে ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলার অর্থনীতি।

দুর্গাপুজোর অর্থনীতিতে বেড়েছে রাজ্যের জিডিপির হার
সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিল একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছিল, বাংলার বড় উৎসব দুর্গাপুজোয় ৪০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। আর দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে হয়েছে ৩ লক্ষ কর্মসংস্থান। সেই তথ্য পরিমার্জন করে দেখা গেল, এবার বাংলায় বাণিজ্য ছাড়িয়ে গিয়েছে ৫০ হাজার কোটি। দুর্গাপুজোয় এই অর্থনীতি রাজ্যের জিডিপির ২.৫৮ শতাংশের বেশি। এই সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলার দুর্গাপুজো আনন্দ-উল্লাসের নয়, এই দুর্গাপুজোয় বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ হয়।

তিন চারমাস ধরে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত
দুর্গাপুজোয় আগে প্রতি বছরই তিন-চারমাস ধরে চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে ফোরামের চেয়ারম্যান পার্থ ঘোষ বলেন, উৎসবকে ঘিরে জাঁকজমক তো থাকেই। তিন চারমাস ধরে প্রায় তিন লক্ষ মানুষ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে। বাংলার দু্র্গোৎসবে ৪০০টি সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত। পুজো কমিটিগুলি মাইক্রো অর্থনীতির সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সাকুল্যে পাঁচ দিনের উৎসব। তার জন্য কর্মকাণ্ড চলে তিন-চার মাস ধরে। প্যান্ডেল তৈরি, প্রতিমা তৈরি, ইলেকট্রিশিয়ান, নিরাপত্তারক্ষী, পুরোহিত, ঢাকি, ভোগ এবং রান্নায় নিযুক্ত কর্মীরা নেহাত কম নয়। এছাড়াও ঠাকুর তৈরির বিভিন্ন উপকরণ নির্মাতারাও রয়েছেন, যাঁরা এই দুর্গাপুজোকে ঘিরে সারা বছরের রুটিরুজির ব্যবস্থা করেন।

দুর্গাপুজো বাংলার অর্থনীতির জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে
তারপর দুর্গাপুজো নতুন পোশাকের সম্ভারের জন্য ফ্যাশন, টেক্সটাইল, জুতো, প্রসাধনী-সহ নানা কেনাকাটা আছে। এ ক্ষেত্রেও হয় বিপুল কর্মসংস্থান। পুজোর বহু আগে থেকেই এই ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রস্তুতি চলে। তারপর রয়েছে সাহিত্য ও প্রকাশনা, ভ্রমণ ও পর্যটন, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, চলচ্চিত্র ও বিনোদন সহ নানা ব্যবসাক্ষেত্র। সব মিলিয়ে বাংলার অর্থনীতিতে পুজোর বাণিজ্যের প্রভাব বিস্তর। এফএফডির সভাপতি কাজল সরকার বলেন, পাঁচ দিনের উৎসবে বিক্রি বেড়েছে আগের থেকে। ২০১৯-এ যে লেনদেন ৪০ হাজার কোটির ছিল, তা এখন বেড়ে ৫০ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। মহামারীর দু-বছর পর দুর্গাপুজো বাংলার অর্থনীতির জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। নতুন উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে কর্পোরেটদের মধ্যেও। স্পনসরশিপের জন্য উদার তাঁরা। প্রায় ৫০০ কোটি টাকা স্পনসর এসেছে বাংলার দুর্গাপুজোয়।
অতিবৃষ্টিতে ভুগছে উত্তরপ্রদেশ, করোনার চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ, বলছেন চাষিরা