একাধিক তারকা প্রার্থীদের দিকে ছিল নজর! বেলা বাড়তেই জয়ের তালিকা থেকে ভ্যানিস ওদের নাম
একাধিক তারকা প্রার্থীদের দিকে ছিল নজর! বেলা বাড়তেই জয়ের তালিকা থেকে ভ্যানিস ওদের নাম
কোথাও টানটান উত্তেজনা তো আবার কোথাও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। রবিবার সকাল থেকেই ছবিটা ছিল এমনই। তবে একটু বেলা বাড়তেই ঘুরে যায় খেলা। বিজেপিকে পিছনে রেখে তড়তড় করে এগিয়ে যায় তৃণমূল। ট্রেন্ড থেকে আত্মবিশ্বাস মমতার বার্তা ছিল, চিন্তা করবেন না। আমরাই ক্ষমতায় ফিরছি। সেই মতো ২০০ এরও বেশি আসন নিয়ে ফের বাংলার মসনদে ফিরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। অন্যদিকে বিজেপিকে মাত্র ৭৭টি আসনেই আটকে থাকতে হল। তবে এই লড়াইয়ে একাধিক তারকা প্রার্থীদের দিকে নজর ছিল। বেলা বাড়তেই দেখা গেল এদের মধ্যে অনেকেরই নাম নেই জয়ের তালিকায়। কারা তাঁরা?
সায়নী ঘোষ
আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল- কংগ্রেস প্রার্থী সায়নী ঘোষ। রবিবার সকাল থেকেই জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ছিলেন সায়নী। এমনই মন্তব্য করেছিলেন যে, ৫০ দিন ধরে প্রচার করেছি। জেতার জন্যে দফায় দফায় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছি। জেতা কোনও ব্যপার নয়। কিন্তু দিনের শেষে খেলা ঘোরান বিজেপির অগ্নিমিত্রা পাল। হারতে হল তাঁকে। তবে প্রচারে কোনও খামতি রাখেননি সায়িনী। কখনও শাড়ি পড়েই ছুটে বেরিয়েছেন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে। আবার কখনও জড়িয়ে ধরেছেন। কিন্তু শেষ হাসি হাসতে পারলেন না।
যশ দাসগুপ্ত
চণ্ডীতলায় পরাজিত বিজেপির প্রার্থী অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত। বিধানসভা নির্বাচনের আগে অভিনেতা যশ দাশগুপ্ত বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। প্রবীণ নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। বিজেপিতে যোগ দিয়েই প্রার্থী করা হয় তাঁকে। হুগলির চন্ডতলা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেনঅভিনেতা। এককথায় বলতে গেলে কয়েকদিনের মধ্যেই চন্ডীতলায় যেন ঘরের ছেলে হয়ে গিয়েছিলেন যশ দাশগুপ্ত। জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের কাছে হারতেই হল তাঁকে।
পার্নো মিত্র
বরাহনগর থেকে জিততে পারেননি বিজেপির তারকা প্রার্থী অভিনেত্রী পার্নো মিত্র। বরাহনগর মানেই তাপস রায়। তৃণমূলের শক্তঘাঁটি। কিন্তু সেখানে পদ্মফোটাতে সকাল সন্ধ্যা ছুটে বেরিয়েছিলেন বিজেপির এই তারকা প্রার্থী। কিন্তু শেষবেলাতে বিপুল ভোটে তাপস রায়ের কাছে হারতে হয় পার্নোকে।
হারলেন শ্রাবন্তী
বেহালা পশ্চিমের বিজেপি প্রার্থী ছিলেন অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। তিনি এই কেন্দ্র থেকে পরাজিত। যদিও বেহালা পশ্চিমও তৃণমূলেরই শক্তঘাঁটি হিসাবে পরিচতি ছিল। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টপধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পার্থবাবুর কাছে প্রথমদিন থেকে বিজেপি কোনও ফ্যাক্টার ছিল না। তবে এই কেন্দ্রে পদ্মফোটাতে প্রথমদিন থেকে লড়াইয়ে নামেন শ্রাবন্তী। মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করেন। কিন্তু তাতেও লাভ কিছু হল না। গড় আগলে রাখলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
পায়েল সরকার
অভিনেত্রী পায়েল সরকার ছিলেন বেহালার পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। এই কেন্দ্র থেকেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তা করেনি বিজেপি। এই অবস্থায় দল ছাড়েন শোভন বৈশাখী দুজনেই। আর তাঁদের না থাকাটাই কি বড় ফ্যাক্টার হয় বিজেপির? শোভনের শক্ত ঘাঁটিতে সহজ জয় স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের। পরাজয় মেনে নিতে হয় পায়েলকে।
সায়ন্তিকা বন্দোপাধ্যায়
বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে পরাজিত তৃণমূল- কংগ্রেস প্রার্থী- অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দোপাধ্যায়।
রুদ্রনীল ঘোষ
প্রথমে বাম। এরপর তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। ভবানীপুর কেন্দ্র রুদ্রনীলকে প্রার্থী করে বিজেপি। জয়ের ব্যপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এই ওয়ার্ডে গত লোকসভা ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর সেটাই তাঁর জয়ের ব্যপারে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছিল তাঁকে। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'গড়' আগলানোর দায়িত্ব ছিল শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়ের কাঁধে। ফুল মার্কস পেয়ে সেই পরীক্ষায় পাশ করলেন দলের ইতিহাসের 'প্রথম' বিধায়ক। গণনা কেন্দ্র পেরিয়ে উচ্ছ্বাস নামল রাজপথে। ধীরে ধীরে পার্টি অফিসে ফিরলেন রুদ্রনীল।
কৌশানি মুখোপাধ্যায়
অভিনেত্রী কৌশানি মুখোপাধ্যায় কৃষ্ণনগর কেন্দ্রর তৃণমূল- কংগ্রেসের প্রার্থী। তিনি পরাজিত বিজেপি-র মুকুল রায়ের কাছে
বাবুল সুপ্রিয়
টালিগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সঙ্গীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি পরাজিত টিএমসি-র অরূপ রায়ের কাছে।
দেবদূত ঘোষ
টালিগঞ্জ কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী দেবদূত ঘোষ পরাজিত টিএমসি-র অরূপ রায়ের কাছে।
লকেট চট্টোপাধ্যায়
বিজেপি-র হয়ে চুঁচুড়া কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। এই নির্বাচনে তিনি পারজিত। তবে তাঁর হেরে যাওয়া অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। কারন হুগলিতে অনেকটাই এগিয়ে ছিল বিজেপি। গত লোকসভার নিরিখে। এরপরেও তাঁর হেরে যাওয়া বড় ধাক্কা বিজেপির কাছে।
তনুশ্রী চক্রবর্তী
শ্যামপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপি-র প্রার্থী ছিলেন অভিনেত্রী তনুশ্রী চক্রবর্তী। তিনিও হেরে গিয়েছেন।
অঞ্জনা বসু
বিজেপি-র হয়ে সোনারপুর দক্ষিণের প্রার্থী হয়েছিলেন অভিনেত্রী অঞ্জনা বসু। কিন্তু তিনি পরাজিত। এই কেন্দ্র থেকে লাভলি মিত্র বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন। জেতার ব্যাপারে লাভলি জানিয়েছেন, আমরা একই পেশা। অঞ্জনাদির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে সবসময়।
পাপিয়া অধিকারী
উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী করেছিল পাপিয়া অধিকারীকে। বাম মনভাবাপন্ন হিসাবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। ভোটের দিন তাঁকে মারধর পর্যন্ত করা হয়। শুধু তাই নয়, ভোটের আগেও তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু এরপরও লড়াইয়ে নেমেছিলেন। হাড্ডাহাড্ডি ফাইট। কিন্তু শেষ হাসি হাসতে পারলেন না তিনি।