পশ্চিমবঙ্গ নামে 'পশ্চিম'-এর তাৎপর্য রয়েছে: বাবুল সুপ্রিয়র লোকহাসানো মন্তব্য সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক
নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্যে এবারে নয়া সংযোজন হয়েছে রাজ্যের নাম পরিবর্তনের বিভ্রাট। রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার রাজ্যের নাম বদলে 'বাংলা' করতে চাইলেও এনডিএ শাসিত কেন্দ্র সরকার তা চায় না।
নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্যে এবারে নয়া সংযোজন হয়েছে রাজ্যের নাম পরিবর্তনের বিভ্রাট। রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার রাজ্যের নাম বদলে 'বাংলা' করতে চাইলেও এনডিএ শাসিত কেন্দ্র সরকার তা চায় না। কেন্দ্র সরকারের মতে, রাজ্যের নাম বদলের জন্যে প্রয়োজন সাংবিধানিক সংশোধন আর সেটা যেহেতু এখনও হয়নি, তাই নাম বদলের ক্ষেত্রে এখনও সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি।
কেন্দ্রীয় সরকারের মতে, পরিবর্তিত নাম 'বাংলা' রাখলে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে গোলমাল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ব্যাপারটি পুরো অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে যেখানে সন্ত্রাসের প্রশ্নে বাংলাদেশের সঙ্গে বাংলার নানা জটিল যোগাযোগের অভিযোগ প্রায়ই ওঠে, সেখানে বিভিন্ন দরবার-মঞ্চে 'বাংলা' নাম নিয়ে বিভ্রাট তৈরী হতেই পারে। একটি জাতীয় সরকারের কাছে আবেগ নয়, বাস্তবিকতার নিরিখে বিষয়টি দেখা জরুরি, সেটা অনস্বীকার্য।
নাম বদলে ফেলেছে ম্যাসিডোনিয়া
সম্প্রতি পূর্ব ইউরোপের দুই প্রতিবেশী দেশ গ্রিস এবং ম্যাসিডোনিয়ার মধ্যে নাম বিভ্রাট দেখা যায় কারণ ম্যাসিডোনিয়া লাগোয়া উত্তর গ্রিসের একটি প্রদেশের নামও ম্যাসিডোনিয়া যার ফলে ম্যাসিডোনিয়া আইন এনে নিজেদের নাম উত্তর ম্যাসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র করে ফেলে। আমাদের এখানে বাংলাদেশকে নিজের নাম বদলাতে বলা মূর্খামি আর তাতে দু'দেশের সম্পর্কে প্রভাব পড়তে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ নামে 'পশ্চিম'-এর তাৎপর্য রয়েছে!
এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু এর পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় একটি অদ্ভুত কথা বললেন। কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রীর মতে, পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করার মানে হয় না কারণ বঙ্গের আগে 'পশ্চিম' কথাটি থাকা জরুরি কারণ তার ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। এমনকি, নিজের আগের নাম বদলের পক্ষে থাকার অবস্থানকে নিজেই অবজ্ঞা করে বলেন যে তিনি আগে যা বলেছিলেন ভুল বলেছিলেন।
নাম বদল নিয়ে বেঁকে বসেছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীও। তাঁর মতে, নামে কী এসে যায়, আসল তো কাম (কাজ)।
বাবুলের মনন-মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে
অধীরের মতামত তাও বা মেনে নেওয়া যায় কিন্তু বাবুলের 'পশ্চিম'প্রীতি বেশ হাস্যকর ঠেকে। ঐতিহাসিক তাৎপর্য বোঝাতে বাবুল কী বোঝাতে চেয়েছেন? দেশভাগের রক্তাক্ত স্মৃতি? তাহলে তো বলতে হয় অনূর্ধ পঞ্চাশ বাবুল মানসিকতায় বেশ পিছিয়ে। যেখানে পূর্ব বাংলার কোনও অস্তিত্ব আজ নেই; বাংলাদেশ নামল স্বতন্ত্র দেশটি আজ জীবনের নানা ক্ষেত্রে তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে, সেখানে আমরা 'পশ্চিম' নামক বোঝাটি বইব কেন? বাবুল কি জানেন কত মানুষের কাছে কতটা ক্ষত-কষ্ট বয়ে আনে এই 'পশ্চিম'? জার্মানি বা জাপান যদি নেতির ইতিহাসকে পরিহার করতে পারে আজকে, আমরা তাহলে তা পারি না কেন?
মমতার বিরোধিতা করতে চান, কিন্তু; কিন্তু অযৌক্তিক কথা বলবেন না
আসলে বাবুলের প্রধান লক্ষ হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করা। অধীর রঞ্জনেরও তাই। এই প্রসঙ্গে বিজেপি এবং কংগ্রেস একই সুরে কথা বলছে