পশ্চিমবঙ্গ: বিজেপি থাবা বসিয়েছে উত্তর ও পশ্চিমে; তৃণমূলের আশা দক্ষিণেই
লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব একটি ঘটনা হয়ে থাকবে। ফলাফলের প্রবণতা যা দেখা যাচ্ছে, তাতে ভরতীয় জনতা পার্টি রাজ্যের মোট ৪২টির মধ্যে ১৬টিতে এগিয়ে;
লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব একটি ঘটনা হয়ে থাকবে। ফলাফলের প্রবণতা যা দেখা যাচ্ছে, তাতে ভরতীয় জনতা পার্টি রাজ্যের মোট ৪২টির মধ্যে ১৬টিতে এগিয়ে; শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস সেখানে ২৫টিতে এগিয়ে। সকালের দিকে এই লড়াইটি ১৯-১৯ এ আটকে ছিল। বামফ্রন্ট একটি আসনেও এগিয়ে নেই আর কংগ্রেস মাত্র একটিতে এগিয়ে।
পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। এ যাবৎ কোনও লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে গেরুয়াবাহিনী একটি কি দু'টি আসনের বেশি পায়নি। সেখানে যদি তারা এবারে ১৬টিতে জিততে পারে, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল যে ২০২১ সালের পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে থাকবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই।
একটু গভীরে দেখলে দেখা যাবে রাজ্যে বিজেপি প্রধানত এগিয়ে রয়েছে উত্তর এবং পশ্চিমপ্রান্তে। তৃণমূলের সেখানে মূল ঘাঁটি দক্ষিণবঙ্গ।
উত্তরে মমতার বারংবার যাওয়াটাও কাজে এল না এবারে
এই প্রবণতার ব্যাখ্যা বুঝতে অসুবিধে হয় না। উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের সেভাবে শক্তি গঠিত কোনওদিনই হয়নি। মমতা নিজে অসংখ্যবার পাহাড়ে গেলেও সেখানকার স্থানীয় রাজনৈতিক শক্তি গোর্খাল্যান্ড জনমুক্তি মোর্চা নিয়ে তাঁর একটি জাতিগত দ্বন্দ্ব বাধে। নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে মমতা বিভাজনের রাজনীতি করে মোর্চার কোমর ভেঙে দিলেও তৃণমূলের রাজনৈতিক জোর যে তাতে বেড়েছে এমন বলা যায় না। অন্যদিকে, দার্জিলিং অঞ্চলে বিজেপি গত কয়েকটি লোকসভা নির্বাচনে জিতে এসেছে এবং যদিও তাদের সাংসদরা গোর্খাল্যান্ডের বিষয়ে কিছু করে উঠতে পারেননি, কিন্তু স্থানীয় মমতা-বিরোধিতার আবেগের সুফল বিজেপি পেয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে প্রথাগতভাবে কংগ্রেস ও বামেরা দাপট দেখিয়ে এসেছে এবং আজকে তাদের প্রবল অবক্ষয়ের সময়ে মমতা-বিরোধী ভাবাবেগে উপকৃত হয়েছে বিজেপিই। গত বিধানসভা নির্বাচনেও তারা অনেক জায়গাতেই ভালো করেছিল আর এবারে সেই শক্তি আরও কিছুটা বাড়িয়ে নিল বিজেপি।
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমপ্রান্তে বিজেপি সুফল কুড়িয়েছে এবারে। বিজেপি-শাসিত ঝাড়খণ্ডের লাগোয়া এই অঞ্চলে অবাঙালি এবং আদিবাসী ফ্যাক্টরগুলি কাজ করেছে। জঙ্গলমহলে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি তৃণমূলের গড়ে ভালোই থাবা বসিয়েছিল। শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ইত্যাদির কারণেও যে পদ্মবাহিনী লাভবান হয়েছে সে নিয়ে সন্দেহ নেই।
একমাত্র দক্ষিণে তৃণমূল এখনও শক্তিশালী
একমাত্র দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূল নিজেদের দাপট বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে কারণ বামেদের মহাপতনের পর থেকেই এই অঞ্চল তৃণমূলের প্রভাবে রয়েছে। শহরাঞ্চল এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই অঞ্চলে বিজেপির নেতৃত্ব এবং সংগঠনের যথেষ্ট দৌর্বল্য রয়েছে। শহুরে ভদ্রলোক শ্রেণীর কাছে বিজেপি সেভাবে হয়তো এখনও পৌঁছতে পারেনি এবং সাংগঠনিক দিক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও এগিয়ে রয়েছেন অনেকটাই।
[আরও পড়ুন: ছত্তিশগড়ে ধাক্কা! প্রাথমিক ফলে পর্যুদস্ত কংগ্রেস]
[আরও পড়ুন:রাজস্থানে অটুট 'রাজে'-দূর্গ ! বিজেপির মোদী-আঁধিতে তোলপাড় মরুরাজ্য]