বাংলায় ৫০ বছরে ৫ গুণ বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় প্রবণতা, সমীক্ষায় উঠে এল সেই ভয়াবহ তথ্য
বাংলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বেড়েছে পাঁচগুণ। ১৯৭০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বছর বছর দুর্যোগের মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাকে।
বাংলার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বেড়েছে পাঁচগুণ। ১৯৭০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বছর বছর দুর্যোগের মুখে পড়তে হচ্ছে বাংলাকে। দক্ষিণবঙ্গে ১৫টি জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে। যার জন্য শুধু ঝড় নয়, উপকূল তছনছ হয়ে যাওয়ায় তৈরি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি।
সমুদ্র-ঝড় আটকাতে ম্যানগ্রোভ অরণ্য
সমুদ্র-ঝড় বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশামুখী হওয়ার কারণে উপকূলীয় প্রতিরক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। এমতাবস্থায় সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণকে যেমন অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, তেমনই অন্য উপকূলবর্তী অঞ্চলকে বাঁচাতেও ম্যানগ্রোভ অরণ্য বা সুন্দরী গাছের বনাঞ্চল তৈরি জরুরি।
৫০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি সাত গুণ বেড়েছে
পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের হটস্পট পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা। এছাড়া উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০০৫ সালের পর ঘূর্ণিঝড় প্রবণতা দ্বিগুণ হয়েছে এবং ঘূর্ণিঝড়ের ভেদশক্তিও দ্বিগুণ হয়েছে। গত ৫০ বছরে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি সাত গুণ বেড়েছে।
দুই ঘূর্ণিঝড় ভারতের দুই উপকূলে আঘাত করেছে
ভারতের পূর্ব উপকূলের বঙ্গোপসাগরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। ঘূর্ণিঝড় বেশি মাত্রায় হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতাও বেড়েছে, অবিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাত এবং বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন তাউকটে ও ইয়াস নামে দুটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল। দুই ঘূর্ণিঝড় ভারতের দুই উপকূলে আঘাত করেছে।
ঝড়ের প্রভাবে বন্যার ঘটনা, খরার প্রবণতাও দ্বিগুণ
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে যে, ১৯৭০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রতিবছর পশ্চিমবঙ্গে ৭০ লক্ষের বেশি লোককে প্রভাবিত করেছে। শুধু ঝড়ের ফলে বিধ্বস্ত হয়নি, ঝড়ের প্রভাবে বন্যার ঘটনা ঘটেছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খরাজনিত পরিস্থিতি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গে গত দশ বছরে খরার প্রবণতাও দ্বিগুণ বেড়েছে।
বছর বছর ঝড়ের তাণ্ডবলীলা বাংলার উপকূলে
বাংলায় এখন বছর বছর ঝড়ের তাণ্ডবলীলা চলছে। যে ঝড়ই সৃষ্ট হচ্ছে, তা-ই সুপার পাওয়ারে পরিণত হচ্ছে। ফলে উপকূলবর্তী এলাকা তছনছ করে দিচ্ছে। একবছর আগে আম্ফানে তছনছ হয়ে গিয়েছিল বাংলার উপকূল। এবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ওড়িশার বুকে হানা দিলেও, তার ঝাপটায় বাংলার উপকূলবর্তী জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
২০২০-তে বাংলার বুকে হানা দিয়েছিল আম্ফান, একুশে ইয়াস
২০২১-এ প্রাক বর্ষা মরশুমেই পর পর দু-দুটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেল। দুটি ঘূর্ণিঝড়ই ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনে পরিণত হল। এবং ভারতীয় উপকূলে দুটি ঘূর্ণিঝড়ই সাংঘাতিক রূপ নিল। ২০২০-তে বাংলার বুকে হানা দিয়েছিল আম্ফান। তা সুন্দরবন-সহ সংলগ্ন উপকূলবর্তী অঞ্চলকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। ২০২১-এ প্রাক বর্ষা মরশুমে তাউকটে গুজরাটে এবং ইয়াস বাংলা-ওড়িশা উপকূল তছনছ করে দিল।
তাউকটের সাতদিনের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে হানা ইয়াসের
ভারতের পশ্চিম উপকূলে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল তাউকটে। কেরল থেকে শুরু করে কর্নাটক, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট উপকূল বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে তাউকটের দাপটে। তারপর সাতদিনের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে হানা দেয় আর এক ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন ইয়াস। ইয়াস বাংলা ও ওড়িশার উপর আছড়ে পড়ে। ওড়িশা সামলায় ঝড়ের দাপট, জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায় দিঘা, মন্দারমণি, শঙ্করপুর, তাজপুর, গঙ্গাসাগর-সহ বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলি।
তিন দশক ধরে ঘূর্ণিঝড়ের চরিত্রে পরিবর্তন
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, গত তিন দশক ধরে ঘূর্ণিঝড়ের চরিত্রে পরিবর্তন এসেছে। তারই জেরে আয়লা থেকে আম্ফান, তাউকটে থেকে ইয়াসরা মহা শক্তিধর হয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এমন আরও ঝড় ধেয়ে আসবে বলেই মত আবহবিদদের। তার কারণ জলবাযু পরিবর্তন। আর এর থেকে সতর্কতা ও সময়ানুগ প্রস্তুতি ছাড়া পথ নেই। সেই সতর্কতার মধ্যেই পড়ে ম্যানগ্রোভ বা সুন্দরী গাছের বনাঞ্চল তৈরি করা।