আব্বাস 'কাঁটা'য় বিদ্ধ বাম-কংগ্রেস জোটের ভবিষ্যৎ কী? 'সফল' ব্রিগেডেও থেকে গেল প্রশ্ন
ব্রিগেডের মঞ্চে বাম ধর্মনিরপেক্ষ সংযুক্ত মোর্চার ঐক্যের ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল সিপিএম ও তার সহযোগীরা। কিন্তু কংগ্রেসের অসহযোগিতার বিষয়টি তুলে সূর্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরীদের অস্বস্তি বাড়ালেন ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের নেতা আব্বাস সিদ্দিকী। পাশাপাশি আব্বাস সিদ্দিকীর সংযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধর্মনিরপেক্ষদের অনেকেই।
বামেদের ব্রিগেড না আব্বাসের?
রবিবাসরীয় ব্রিগেডে আব্বাস সিদ্দিকীর বক্তব্য শুনে অনেকেরই হয়ত সেদিন মনে হয়েছিল, এই ব্রিগেড বামেদের নয়, আইএসএফ-এর। ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ছিল মূলত আব্বাস সিদ্দিকীর দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের শক্তি দেখানোর মঞ্চ। এদিন জমায়েতের সিংহভাগ ছিল ভাইজানের সমর্থক। কাজেই ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের জমায়েত থেকে আব্বাস সিদ্দিকী কি বার্তা দেন তা শোনার জন্য সাধারণ মানুষের যথেষ্ট আগ্রহ ছিল।
বাংলার ঐক্যের সুর আব্বাসের গলায়
রবিবার মঞ্চে উঠে আব্বাস বার্তা দেন মুসলিম মানেই ভারত বিরোধী নয়। তিনি ঘোষণা করেন, 'আমরা ভারতীয়, আর এই পরিচয়ের জন্য আমরা গর্বিত।' একইসঙ্গে বাংলা ঐক্যের সূত্রে তিনি বলেন, 'এই বাংলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম-সহ বিভিন্ন মনীষীদের বাংলা। এখানে সাম্প্রদায়িকতার জন্য কোনও জায়গা নেই।'
'তোষণ বা কারও ভিক্ষার দান চাই না'
এদিন আব্বাস সিদ্দিকীর আক্রমণের লক্ষ্য হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি স্পষ্ট ভাষায় এই মঞ্চ থেকে বার্তা দিয়েছেন, তোষণ বা কারও ভিক্ষার দান চাই না। চাই অধিকার। তবে আব্বাসের হঠাৎ ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তসলিমা নসরিন, আনন্দ শর্মারা। সাধারণ ভোটারদের মনেও বাম জোটের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, তা খুব একটা অবাক করা হবে না বলে আশা করছেন বিরোধীরাও।
আব্বাস কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাম-কংগ্রেসের জন্য
বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও হারাতে হবে৷ আবার রুখে দিতে হবে বিজেপিকেও৷ এই দ্বিমুখী লক্ষ্য সফলের ডাক দিয়েই রবিবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জন সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল৷ আয়োজক ছিল বাম-কংগ্রেসের জোট৷ পরে তার সঙ্গে যুক্ত হয় ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ৷ এবং বিরোধীদের অভিযোগ, এই আইএসএফ-ই বাম-কংগ্রেস জোটের ধর্মনিরপেক্ষতার তকমাটা খসিয়ে দিয়েছে।
ব্রিগেডের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন
ব্রিগেডের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল রবিবারের পর৷ বিশেষ করে এই ব্রিগেডের সভা নিয়ে কংগ্রেস কতটা আন্তরিক সেই প্রশ্নও উঠছে কোনও কোনও মহল থেকে৷ কারণ, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা তো ছিলেন না৷ উল্টে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের কাউকে হেভিওয়েট বলা যায় না৷ রণদীপ সুরজেওয়ালা, জিতিন প্রসাদের মতো নেতারা তো ভাষণই দিলেন না৷ যিনি দিলেন, সেই ছত্তীশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল তেমন পরিচিত মুখ নন৷
আব্বাসকে নিয়ে অখুশি কংগ্রেস
তার উপর আব্বাসকে নিয়ে কংগ্রেস যে অখুশি, সেটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, এদিনের মঞ্চ থেকে বাম নেতাদের হাবভাবেই স্পষ্ট যে ভোটের বৈতরণী পার করতে তাঁরা আইএসএফকে কতটা ভরসা করছেন৷ পাশাপাশি কংগ্রেস যে বিষয়টিকে ভালো ভাবে নিচ্ছে না, সেটাও স্পষ্ট হল৷