বিজেপির হয়ে নবান্ন যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে আব্বাস-বাম বন্ধুত্বই!
কোন ছকে লোকসভার সাফল্য ছাপিয়ে বিধানসভায় ক্ষমতা দখল করবে বিজেপি? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই একের পর এক তৃণমূলী হেভিওয়েটদের ভাঙিয়ে নিয়ে এসেছিল বিজেপি। আর এই প্রশ্নের আর্ধেক জবাব এবার দিয়ে দিল বাম-আব্বাস বন্ধুত্ব। লোকসভা নির্বাচনে বাম থেকে রাম হওয়া ভোটারদের পাকাপোক্ত ভাবে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাতে যেন একপ্রকার বাধ্য করতে পারে এই 'ধর্মনিরপেক্ষ' জোট।
বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি
আব্বাস-সেলিমদের জোটের মুখ হিসাবে তুলে ধরে আক্রমণে নেমেছেন বিজেপি নেতারা। এই পরিস্থিতিতে ধর্মনিরপেক্ষ জোট নিয়ে যে মেরুকরণের ছক কষতে বিজেপি শুরু করে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। এর আগে সিপিএম থেকে আসা ভোটারদের বিধানসভা নির্বাচনে নিজেদের শিবিরে ধরে রাখা নিয়ে রীতিমতো সংশয় তৈরি হয়েছিল বিজেপির অন্দরে। তবে বিজেপির এখন আশা, আব্বাসকে দেখেই আর পুরোনো দলে ফিরে যাবে না।
ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিতে চায় বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ
এদিকে জোট নিয়ে টালবাহানা, দর কষাকষির অধ্যায় পেরিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিতে চায় বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ। এই প্রথম রাজ্যে তারা যৌথ কর্মসুচি পালন করতে চলেছে। প্রথমবার বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসএফ রাস্তায় নেমে কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাবে।
বাম-কংগ্রেসের জনমুখী আন্দোলন
বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস ইতিমধ্যেই যৌথ বেশকিছু আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছে। এবার ৬ মার্চ ডিজেল-পেট্রল-কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটের সময় মিছিল করবেন এই তিন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। তিন দলের সংযুক্ত মোর্চার আহ্বানে মহামিছিল হবে এন্টালি মার্কেট থেকে মহাজাতি সদন পর্যন্ত।
কোনও ইস্যুতেই দমবে না বিজেপি
পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে হু হু করে। ২০১৪ সালে পেট্রলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৬৬ টাকা, ডিজেলের দাম ছিল ৪৮ টাকা। এখন তা যথাক্রমে ১০০ টাকা এবং ৯০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। রান্নার গ্যাসের দাম এই সময়কালে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বাজারে মাছ, মাংস, ভোজ্যতেল, ডিম, ডাল, মশলা-সহ প্রায় সব কিছুরই দাম সাংঘাতিক বেড়েছে। এদিকে এই কথাগুলি মানুষের হলেও বিজেপি এগুলো নিয়ে মাতামাতি করবে না বা জবাবও দেবে না। এই ইস্যুগুলিকে বাইপাস করে বিজেপি খেলবে মেরুখরণের খেলা। তাই জনমুখী এই ইস্যুগুলি নিয়ে জোট যতই সঙ্গবদ্ধ, তত সুবিধা পাবে বিজেপি।
যৌথ আন্দোলন
একদিকে অর্থনৈতিক মন্দা ও অতিমারী পরিস্থিতিতে মানুষের আয়-রোজগার কমেছে। মজুরি হ্রাস পেয়েছে। বেকারদের কাজের সুযোগ কমেছে। অন্যদিকে বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিনযাপন করছেন। এরই প্রেক্ষিতে আগামী শনিবার রাজ্যের সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্র এলাকায় বিকেন্দ্রীভূতভাবে এবং কলকাতায় কেন্দ্রীয়ভাবে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ-এর ডাকে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ও কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলনে নামার আবেদন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু।
বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ বন্ধুত্বে লাভ বিজেপির
বিধানসভা কেন্দ্র ভিত্তিক মিছিল সংঘটিত হবে এবং কলকাতায় ওই দিন বিকেল সাড়ে তিনটে এন্টালি বাজারের সামনে জমায়েত হয়ে একটি মিছিল হবে, যা মহাজাতি সদন পর্যন্ত যাবে। কিন্তু জনমুখী এই দাবি নিয়ে এখন চিন্তিত নয় বিজেপি। কারণ তাদের হাতে জোট বিরোধী অস্ত্র তুলে দিয়েছে স্বয়ং আব্বাস। পাশাপাশি তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট কেটে আব্বাস যে আখেরে বিজেপির লাভ করে দেবে, তাও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।