যদি কাটমানি ইস্যু তৃণমূলের কৌশল হয়ে থাকে, তাহলে 'দলের ৯৯.৯৯ শতাংশ সৎ' কাঁদুনি গাইতে হচ্ছে কেন?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কাটমানি ফেরত দিন" নির্দেশে এখন বঙ্গীয় রাজনীতিতে মহা শোরগোল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'কাটমানি ফেরত দিন' নির্দেশে এখন বঙ্গীয় রাজনীতিতে মহা শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের প্রতি রাখা একটি বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ জারি করেন এই প্রসঙ্গে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষরা মনে করছেন এবারের লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে নেত্রী এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন; যাতে দু'বছর পরেই হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে তাঁর দলের ভাবমূর্তি চাঙ্গা হতে পারে জনমানসে। কেউ কেউ আবার এই কাটমানি প্রসঙ্গে রাজনৈতিক কৌশল উপদেষ্টা প্রশান্ত কিশোরের হাত রয়েছে বলেও মনে করছেন। এ মাসের শুরুর দিকেই নবান্নতে প্রশান্তর সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা এবং তার পরে নানা পর্যায়ে প্রশান্ত এবং তাঁর দলবল এখন সক্রিয় বলে শোনা যাচ্ছে। লক্ষ্য: সামনের বিধানসভা নির্বাচনের আগে জমি তৈরী করা।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে হচ্ছে কেন?
ঘটনা হচ্ছে, যদি কাটমানির প্রসঙ্গটি সত্যি একটি কৌশল হিসেবে ধরে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তৃণমূল নেতৃত্ব, তবে দলের মহাসচিবের "দলের ৯৯.৯৯ শতাংশ কর্মীই সৎ" ধরনের মন্তব্য করতে হচ্ছে কেন? তাহলে কী বলতে হবে যে মমতার কাটমানি মন্তব্যের পরে এখন দলের মধ্যেই ধোয়াঁশা সৃষ্টি হয়েছে? অন্যান্য নেতারা জানেনই না পুরো ব্যাপারটা আর জানলেও সমর্থন করেন না? উল্টে তাঁরা যাতে দলের কর্মী-সমর্থকরা মুখ ঘুরিয়ে না নেন, তাঁর চেষ্টা করছেন?
কাটমানি ইস্যুর টাইমিং নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে
কাটমানি ফেরত দেওয়ার আদেশটি নীতিগতভাবে সমর্থনযোগ্য হলেও এর রাজনৈতিক টাইমিং নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। গত ২৩ মে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পরে তৃণমূল কংগ্রেসকে আর রাজ্য রাজনীতির একচ্ছত্র অধিপতি বলা চলে না। যেই দাপট তারা গত আট বছরে দেখিয়ে এসেছে একপেশে ভাবে, তা এই মুহূর্তে আর নেই। রাজ্যে বিজেপির উত্থানে এখন তৃণমূলের অনেক অসন্তুষ্ট নেতা-কর্মী-সমর্থক বিকল্প মঞ্চের খোঁজ পেয়ে গিয়েছেন। তাই এখন "কাটমানি ফেরত দিন" বললে মমতার বজ্র নির্দেশও কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যায়। অতিরিক্ত হুমকি-ধমকি নিঃসন্দেহে বিজেপির পাল্লা ভারী করবে এই সময়ে, তৃণমূলে আরও বড় ভাঙন ধরবে।
এই পরিস্থিতিতে আরও অস্থির হতে পারে পরিস্থিতি
মমতা মৌচাকে ঢিল মেরে নিজের দলের পায়ের তলার মাটিই কিছুটা হলেও আলগা করে দিয়েছেন। দলের অন্য নেতারা কাঁদুনি গেয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছেন ঠিকই, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান অদূর ভবিষ্যতে তাঁর নিজের দলের অস্তিত্বের সঙ্কট বাড়াতে তো পরেই, পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে তৈরি করতে পারে এক অস্থির আবহাওয়াও। যা নিমেষে আইনের শাসনকে বিপর্যস্ত করতে পারে।
কাটমানি ফেরত দিন বলে হুঙ্কার না ছেড়ে যদি মমতা একটি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতেন দলের দুর্নীতিগ্রস্তদের ধরতে, তাহলে ফল বেশি ভালো দিত। অতীতে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির সময়েও অভিযুক্ত সংস্থার এজেন্টদের যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল সাধারণ মানুষের টাকা ফেরতের দাবির সামনে, এখন তৃণমূলের অনেক নেতা-হোতাদেরও সেই অবস্থাই হবে। আর তাতে আরও বিপাকে পড়বে দিদির নিজের দলই।
প্রশান্ত কিশোর কী করছেন জানা নেই। কিন্তু এত্ত বছরের স্থিতাবস্থার পরে আচমকা জোরে ঝাঁকুনিতে উল্টে পড়তে পারে গণেশই।