ডাক্তারদের পাশে এবারে এগিয়ে এল সুশীল সমাজ; এক দশক আগে এইভাবেই বঙ্গে পরিবর্তনের ঘন্টা বেজেছিল
সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে চলছে বেনজির নৈরাজ্য। জুনিয়র ডাক্তারদের বেধড়ক মারধরের প্রতিবাদে সমস্ত চিকিৎসক মহল কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে যার ফলে স্তব্ধ রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা।
সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে চলছে বেনজির নৈরাজ্য। জুনিয়র ডাক্তারদের বেধড়ক মারধরের প্রতিবাদে সমস্ত চিকিৎসক মহল কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে যার ফলে স্তব্ধ রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা। রোগী এবং তাঁদের পরিজনদের জোড়হাতে আকুতিতেও মন গলছে না ধন্বন্তরীদের। একে তো বারংবার তাঁদের উপরে হামলার ঘটনায় ডাক্তাররা যারপরনাই ক্ষুব্ধ, তার উপরে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে জুনিয়র ডাক্তারদের হুমকি দিয়েছেন এবং অবিলম্বে কাজে যোগ না দিলে হোস্টেল ছাড়া করার শাসানি দিয়েছেন, তাতে হিতে আরও বিপরীত হয়েছে।
অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনরা এগিয়ে এলেন
এই অবস্থায় শুক্রবার প্রখ্যাত অভিনয়-ব্যক্তিত্ব অপর্ণা সেন এনআরএস হাসপাতালে বিক্ষোভ অবস্থানকারী ডাক্তারদের কাছে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন তাঁদের দাবিটি মাথা ঠান্ডা করে শুনতে। তিনি বলেন যে ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলির তাঁর উপরে অভিমান হয়েছে কারণ তিনি তাঁদের কাছে আসেননি। তিয়াত্তরের অপর্ণা মমতার অনুরোধ করেন একজন অভিভাবক হিসেবে তিনি যেন এই সময়ে প্রতিবাদী ডাক্তারদের সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনে একটা ব্যবস্থা নেন। এখানে উল্লেখ্য যে কয়েকদিন আগেই এই অপর্ণা সেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় কথায় "জয় শ্রীরাম" স্লোগান দেওয়া মানুষের দিকে তেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন।
আরেক অভিনয়-ব্যক্তিত্ব কৌশিক সেনও বক্তব্য রাখেন অকুস্থলে। নিজের সহজাত ভঙ্গিমায় তিনি বলেন যে ক্লাবগুলিকে টাকা না দিয়ে হাসপাতালগুলোকে দেখভাল করলে বেশি ভালো হতো। এছাড়াও বিভিন্ন অভিনেতা, চিত্র পরিচালকরাও প্রতিবাদীরা ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, সর্বস্তরে পঞ্জীভূত ক্ষোভের উদ্গীরণ শুরু হয়েছে।
সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ
সুশীল সমাজের এই ভূমিকা অনস্বীকার্য। এক দশক আগে নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিচালনার ফলে ১৪জন কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় সেসময়ের ক্ষমতাসীন বামেরাও একই রকম প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তুমুল ছিছিক্কারের মুখোমুখি হয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পাশাপাশি সিঙ্গুরে তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি ঘটনা নিয়েও বামেদের শেষ যাত্রা শুরু হয়। আর প্রতি ক্ষেত্রেই ছিল সুশীল সমাজের প্রত্যক্ষ সমর্থন। এবারে সিনেমাহলে ছবি আটকে দেওয়া ইত্যাদি নানা কারণে সৃষ্টিশীল সমাজের মধ্যেও জমছিল অসন্তোষ। এনআরএস কাণ্ডের পরে সেটিও যেন একটি বেরোনোর জায়গা পাচ্ছে।
ইতিহাস ফের চোখের সামনে?
কতকটা ইতিহাসের প্রত্যাবর্তন বলেই মনে হচ্ছে এনআরএস কাণ্ড। এই প্রতিবাদে কেউ অনশন-ধর্মঘট ডাকেননি; অর্থাৎ এই প্রতিবাদের মধ্যে গান্ধীবাদী কোনও পরিকল্পনা নেই এবং সেভাবে কোনও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াই এই আন্দোলন ক্রমেই দানা বাঁধছে সর্বস্তরে। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পরে বামেদেরও একইভাবে পতনের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেবারে সামনে দাঁড়িয়ে সেই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মমতা স্বয়ং। আর এবারে তিনি মুখোমুখি সেই একই চ্যালেঞ্জের।
[আরও পড়ুন:আরজি কর হাসপাতালে দলে দলে চিকিৎসকদের গণইস্তফা, চিকিৎসা সঙ্কট আরও ঘনীভূত বাংলায় ]