পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনের ফলাফল:তৃণমূল-বিজেপি সহ বাম-কংগ্রেসের ভোট শতাংশ একনজরে
মহুয়া মৈত্র বলছেন, করিমপুরে নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজিতে ভোট করাই বাড়তি মাইলেজ দিয়েছে তৃণমূলকে। অন্যদিকে, 'হার জিত ভোটে লেগেই থাকতে পারে'।
মহুয়া মৈত্র বলছেন, করিমপুরে নির্দিষ্ট স্ট্র্যাটেজিতে ভোট করাই বাড়তি মাইলেজ দিয়েছে তৃণমূলকে। অন্যদিকে, 'হার জিত ভোটে লেগেই থাকতে পারে'। তবে নেতানেত্রীদের বক্তব্য পাল্টা বক্তব্যের মধ্যেই বাংলার রাজনীতিতে আরও একবার প্রসঙ্গিক হয়ে উঠল ২০১৯ সালে কালিয়াগঞ্জ, করিমপুর,খড়গপুর সদরের উপনির্বাচন। লোকসভা ভোটের ৬ মাসের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্কের হিসাবে পাল্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে জমি ধরে রেখেছেন,তাতে অনেকেই 'পিকে ম্যাজিক' খুঁজে পেয়েছেন। এমন এক প্রেক্ষাপটে নজর রাখা যাক এই তিন কেন্দ্রের নির্বাচনে কোন দলের কত ভোট শেয়ার হয়েছে।
তৃণমূলের ভোট শেয়ার কত?
খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জে বিজেপি-তৃণমূল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও, শেষ বলে ছয় হাঁকিয়েছেন তৃণমীল প্রার্থীরাই। করিমপুর যদিও প্রথম থেকেই তৃণমূলকেই এগিয়ে রাখে। তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের ভোট শেয়ার ৪৭.৫০ শতাংশ।
তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট অঙ্ক
উল্লেখ্য, এই ভোট শতাংশে ভর দিয়ে নিয়ে ২১ বছর পর ফের একবার দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের জমি দখল করেছে তৃণমূল। ২৪১৪ ভোটে জিতেছেন প্রার্থী তপনদেব সিংহ। অন্যদিকে, খড়গপুরের যে জমিতে ঘাসফুল কোনও দিনই ফোটেনি , সেখানে এবার সবুজ নিশান সদর্পে উড়িয়ে ২০৮৩৫ ভোটে জয় ছিনিয়ে নেন প্রদীপ সরকার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদিয়ার করিমপুরে মহুয়া মৈত্রর খাসতালুক। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ ১০২৬৩৩ ভোট পেয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন সমীন্তবর্তী জেলা নদিয়ার মাটিতে আজও ঘাসফুলেরই দাপট রয়েছে।
বিজেপির ভোট শেয়ার
লোকসভা ভোটে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের যাবতীয় হিসাব পাল্টে বিজেপি বাড়িয়ে নিয়েছিল প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট শেয়ার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে ৪২ এ ৪২ এর ডাক দিয়েছিলেন , সেখানে বিজেপি ১৮ টি আসন দখলে রেখেছিল। সেই জায়গা থেকে ৬ মাস পরে এই ৩ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির ভোট শতাংশ দাঁড়াচ্ছে, ৩৯.৩১ শতাংশ।
বিজেপি প্রার্থীদের ভোট অঙ্ক
কালিয়াগঞ্জে তৃণমূলকে জোরদার লড়াই দিয়েও শেষে ৯৫০১৪টি ভোটেই থেমে যায় প্রার্থী কমলচন্দ্র সরকারের রথ। অথচ এই কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে দেবশ্রী চৌধুরী ৫৬, ৭৬২টি ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এবার আসা যাক দক্ষিণে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নদিয়ার করিমপুরে যদিও বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার প্রথম থেকেই পিছিয়ে থেকে শেষ করেছেন ৭৮৫৬০ ভোটে। অন্যদিকে, বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের কেন্দ্র খড়গপুর সদরেও বিজেপির প্রার্থী নিকটবর্তী তৃণমূল প্রার্থীকে দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনায় চরম চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। দিলীপ শিবিরের আঁতুর ঘর খড়গপুর সদর বিজেপি প্রার্থীকে দিয়েছে ৫২০৪০ শতাংশ ভোট।
সিপিএম-এর পরিস্থিতি
যে রাজনৈতিক শক্তি বাংলাকে ৩৪ বছর শাসন করেছে, সেই বামপন্থী দলগুলির চরম পরাজয় দেখা যায় লোকসভা ভোট ২০১৯ এ। বাংলার বুকে সিপিআইএম একটিও আসন দখল করতে পারেনি ৬ মাস আগের ভোটে। সেই সময় তাদের ভোট শেয়ার ছিল ৬.২৮ শতাংশ। আর এদিন, তিন আসনের উপনির্বাচনে সিপিআইএম-এর ভোট শেয়ার দাঁড়ায় ৩.২৩ শতাংশ। এমনই তথ্য দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনের তথ্য।
তিন কেন্দ্রে সিপিএম এর ভোট অঙ্ক
এদিনের নির্বাচনে একমাত্র করিমপুর কেন্দ্রেই বাম কংগ্রেস জোটের তরফে শুধুমত্র সিপিএম প্রার্থী লড়াই করেছে। প্রার্থী হিসাবে গোলাম রব্বি এখানে সেভাবে বাম শিবিরকে খুশি করতে পারেননি। নদিয়ার এই কেন্দ্রটিতে সিপিএম এর ঘরে ভোট এসেছে ১৮৪১৮ টি।
কংগ্রেসের ভোট শেয়ার
লোকসভা ভোটে ছয় মাস আগেই কংগ্রেসের ঘরে এসেছিল রাজ্য থেকে ২ টি আসন। সেক্ষেত্রে তাদের ভোট শেয়ার ছিল ৫.৬১ শতাংশ। আর লোকসভা ভোটের পর ৩ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাংলা থেকে কংগ্রেস জোট পেয়েছে ৭.২০ শতাংশ। প্রসঙ্গত, সেক্ষেত্রে এলাকায় জোটের বাম ভোটও পড়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে । বিষয়টি নিয়ে মতামত দিতে গিয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা তথা বর্তমান তৃণমূল সাংসদ মানস ভুইঞা জানিয়েছেন, বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটই হাত শিবিরকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
কংগ্রেসের ভোট অঙ্ক
রায়গঞ্জের কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে লোকসভা ভোটেও বিজেপির দাপট বেশি ছিল। সেই লড়াইকে সামনে নিয়ে এখানে বাম -কং জোটের প্রার্থী গীতশ্রী রায়ের ঝুলিতে এসেছে ১৮৮৫৭ টি ভোট। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৮ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে, খড়গপুরে বাম কংগ্রেস জোটের তরফে দাঁড়িয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। সেখানে হাত শিবির ভোট পেয়েছে ২২ ৬৩১টি।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে নোটার ভোট কত?
তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচন সাফ বার্তা দিচ্ছে যে এই ভোটে মেরুকরণের ভোটব্যাঙ্ক প্রাসঙ্গিক ছিল। কারণ নোটাতে ভোট পড়েছে মাত্র ০.৯৬ শতাংশ।