শেষ পর্যন্ত কি বাংলা নিজের মেয়েকেই চাইছে....নাকি?
পশ্চিমবঙ্গে আট দফার ভোট শেষ হতেই বিভিন্ন ভোট সমীক্ষা সংস্থা তাদের যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তার বেশিরভাগই সেই ইঙ্গিত দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃতীয়বারের জন্য এ রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ত
লিখলেন অশোক বসু: পশ্চিমবঙ্গে আট দফার ভোট শেষ হতেই বিভিন্ন ভোট সমীক্ষা সংস্থা তাদের যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তার বেশিরভাগই সেই ইঙ্গিত দিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃতীয়বারের জন্য এ রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে দু-তিনটি সংস্থার সমীক্ষায় একদম উল্টো ছবি।
তারা বলেছে দুশোর কাছাকাছি আসন নিয়ে প্রথমবারের জন্য এরাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি। আর তৃণমূলের আসন সংখ্যা হতে পারে কমবেশি একশো। অমিত শাহ প্রথম থেকেই যা দাবি করে আসছেন তারই যথার্থ প্রতিচ্ছবি এই সমীক্ষা রিপোর্টগুলিতে।
এ রাজ্যে ভোট শুরু হয়েছে ২৭ মার্চ, শেষ হল ২৯ এপ্রিল। প্রতিটি দফার ভোট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সমীক্ষা সংস্থাগুলি তাদের ফলাফল প্রস্তুত করার জন্য মাঠে নেমে পড়েছিল।
প্রতি দফার ভোট শেষ হওয়ার পর সেই দফার সমীক্ষা ফল প্রস্তুত করে গুটিয়ে রাখতে হয়েছিল তাদের। অষ্টম দফা ভোট শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে সেগুলি প্রকাশ করার কোনও উপায় ছিল না।
ভোট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সংস্থাই প্রায় এক সঙ্গে তাদের সমীক্ষা ফল ঘোষণা করে দিয়েছে। ভোট সমীক্ষার একটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে। এই সংস্থাগুলি সেই পদ্ধতি মেনেই ভোট সমীক্ষা করে থাকে।
তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষায় ফল আলাদা আলাদা হয়। দেখা যায় কোনও সংস্থা তার সমীক্ষা ফল অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিয়েছে। আবার কোনও কোনও সংস্থার সমীক্ষার ফলের সঙ্গে ভোটের ফল একদমই মেলেনি।
তবে বেশিরভাগ সংস্থা সমীক্ষার যে ফল দেয় ভোটের ফল মোটামুটি তার কাছাকাছি থাকে। সেই হিসেবে মনে হচ্ছে এই বিধানসভা নির্বাচনে জিতে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
আমরা কিন্তু এই ইঙ্গিত ভোটের অনেক আগেই দিয়ে রেখেছি*
আমি ভোট বিশেষজ্ঞ নই। কোনও বিজ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতি অবলম্বন করে আমি ভোটের সমীক্ষা করি না। রাজনীতির বাইরে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমি আমার ধারণা তৈরি করি। তবে ২০১১ সাল থেকে জনমতের ভিত্তিতে ভোটের সম্ভাব্য ফল কী হতে পারে তার আভাস দিয়ে আসছি।
এতদিন পর্যন্ত সেই আভাস প্রতিবারই মোটামুটি ৯০ শতাংশ মিলে গিয়েছে। এবারও ২ জানুয়ারি একটি লেখায় আমি লিখেছিলাম, তখনও পর্যন্ত রাজ্যের যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে তৃণমূল কংগ্রেস দু'শোর বেশি আসন নিয়ে আবার ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে।
যদিও বিজেপি তখন জোরদার একটা হাওয়া তুলে দিতে পেরেছে। তা সত্ত্বেও আমার মনে হয়েছিল তৃণমূল দু'শোর বেশি আসন পাবে। নিতান্ত যদি না হয় তাহলে অন্তত ১৭০ থেকে ১৮০টি আসন তারা দখল করবে। এখানেও ২৮ ফেব্রুয়ারি আমার যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, সেখানেও আমি ওই একই কথা বলেছিলাম।
তৃণমূল কংগ্রেস এবারের বিধানসভা ভোটে দু'শোর বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরতে চলেছে। ততদিনে বিজেপির ঢক্কানিনাদ শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করতে শুরু করে দিয়েছে এই দফায় আর বোধহয় তৃণমূলের পক্ষে ফিরে আসা সম্ভব হবে না।
তখনও আমি বলেছি খুব কম হলেও তৃণমূল কংগ্রেস ১৭০ থেকে ১৮০টা আসন পাবে। আমি এখনও আমার এই সিদ্ধান্তে অবিচল রয়েছি। বরং এখন মনে হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস দু'শোর বেশিই আসন পাবে।
বিভিন্ন সংস্থার ভোট সমীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা যাচ্ছে, দলগুলির প্রাপ্ত আসনের সংখ্যায় তফাত থাকলেও সকলেই বলেছে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাচ্ছে তৃণমূলই। তবে জন কি বাত ও আরও একটি সংস্থা নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা দিয়েছে বিজেপিকে।
ইঙ্গিত যদি ফলে পরিণত হয়, তা হবে জনমনের যথার্থ প্রতিফলন*
এখানে আমার সর্বশেষ প্রতিবেদন বেরিয়েছে ১০ এপ্রিল। তারপর কোভিড প্রভাবের মধ্যেও যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করে কলকাতা সংলগ্ন কয়েকটি জেলায় ঘুরেছি। দুই মেদিনীপুর এবং জঙ্গলমহল ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের আর কোথাও বিজেপির তেমন প্রভাব ছিল না।
উত্তরবঙ্গে কিছুটা ছিল। কোভিডের কারণে উত্তরবঙ্গে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমার মনে হয়েছে উত্তরবঙ্গে গোড়ার দিকে বিজেপির যতটা হাওয়া ছিল পরের দিকে তা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে।
আর দক্ষিণবঙ্গে কিছুটা উত্তর ২৪ পরগনা ছাড়া আর কোথাও বিজেপি তাদের প্রভাব ছড়াতে পারেনি। কাজেই এইসব এলাকার ভোট নিয়ে লিখতে গেলে সেই থোড়-বড়ি-খাড়া খাড়া-বড়ি-থোড় হয়ে যেত। তাই বলতে গেলে এড়িয়ে গিয়েছি। তবু তার মধ্যেও দু-একটি ক্ষেত্রে স্রোতের বিপরীতমুখী ফল হতে পারে বলে আমার মনে হয়েছে।
যেমন হুগলি জেলায় তৃণমূলের প্রবল আধিপত্য সত্ত্বেও চুঁচুড়া থেকে লকেট চট্টোপাধ্যায় জিতে বেরিয়ে আসতে পারেন। আবার কৃষ্ণনগরে সমস্ত হিসেব অনুযায়ী মুকুল রায়ের পক্ষে জয় শুধু ফল ঘোষণার অপেক্ষা। কিন্তু তার মধ্যেও একটা চোরা টান আমি লক্ষ্য করেছি।
জয়ের সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ থাকা সত্ত্বেও কোনও কারণে মুকুল রায় হেরেও যেতে পারেন। তবে ভোট সমীক্ষা সংস্থার ইঙ্গিত যদি ফলে পরিণত না হয় তাহলে তা যথার্থ জনমনের প্রতিফলন হবে না।