বিজেপির আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক ছিনিয়ে নিতে মমতা টানটান স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ময়দানে! কিছু তথ্য একনজরে
মেদিনীপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি জানিয়েছিলেন নন্দীগ্রাম থেকে তিনি লড়াই করবেন। তাঁর কাছে ভবানীপুর বড় বনো হলেও, নন্দীগ্রাম মেজবোন। শহরের বাইরে গিয়ে জেলা দখলে তৃণমূলের তরফে কার্যত মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন 'লিডিং ফ্রম দ্য ফ্রন্ট' কাকে বলে। একই সাথে মমতার পাখির চোখ যে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে তা স্পষ্ট হয়েছে তাঁর সাম্প্রতিক পুরুলিয়া সফরে। কতটা তাৎপর্যপূরণ মমতার ক্যাম্পের কাছে এই আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক? লোকসভা ভোটের পর থেকে বিধানসভা পর্যন্ত রাস্তায় তৃণমূল- বিজেপির মধ্যে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক ঘিরে স্ট্র্যাটেজির লড়াইও বেশ প্রকট! একনজরে এই প্রেক্ষিতে দেখা যাক কিছু তথ্য।

ফোকাসে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক ও মমতা
বাংলায় মোট আদিবাসী জনসংখ্যা ৫২,৯৬,৯৬৩ জন। যা মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ।আর এই ৫ শতাংশ ভোটই নিদের পক্ষে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া মমতা শিবির। কারণ লোকসভায় এই ভোট ব্যাঙ্কের অনেকটা দখল করেই বিজেপি ভোট চ্যালেঞ্জ পার করেছিল। আর বিধানসভায় বিজেপির পায়েত তলার মাটি কাড়তে হলে জঙ্গলমহল ও আশপাশের বেল্টে মমতাকে জোরালো থাবা বসাতে হবে। আর তার প্রস্তুতিতে যে মমতা শিবিরের তোড়জোর তুঙ্গে তা পুরুলিয়া সফরে একের পর এক ঘোষণাই বলে দিয়েছে।

মমতার ঘোষণা ও আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক
পুরুলিয়া থেকে সদ্য সামাপ্ত সফরে প্রায় ৪০ টি পরপর প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মমতা। ৩৩ টি ঝাড়গ্রামের, পুরুলিয়ার ২ টি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১ টি করে প্রকল্প তাতে রয়েছে। প্রসঙ্গত, জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া,পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু আসন মমতাকে লোকসভায় নিরাশ করেছে। নিরাশ করেছে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুর দুয়ারের আসনগুলিও। এই আসনগুলিতে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক একটি বড় ফ্যাক্টর। বলা হচ্ছে, হুগলী ও বীরভূমের মতো জেলাও আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হতে পারে বিধানসভা ভোটে। আর তার আগে মমতা যেমন প্রকল্পের ঘোষণা , উন্নয়নের বার্তা, রাস্তা, বিদ্যুতের মান উন্নয়নের দিক ভাষণে তুলে ধরছেন, তেমনই বিজেপি নেতাদের মধ্যাহ্ন ভোজ কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না।
আর তার নেপথ্যে রয়েছে আদিবাসী ভোট দখলের লড়াই।

৮৪ আসনের সংরক্ষণ ও ভোট চ্যালেঞ্জ
মূলত , ২৯৪ আসনের মধ্যে ৮৪ টি আসনে সংরক্ষণ রয়েছে বাংলায়। এই আসনগুলি এসসি ও এসটি প্রার্থীদের জন্য। আর বিজেপি ও তৃণণূল দুই পক্ষই চাইছে যে এই ৮৪ আসনে যেন ১০০ শতাংশ স্ট্রাইক রেট নিয়ে খেলা যায়! তাহলেই বাংলায় নীলবাড়ি দখলের লড়াই সহজ হবে। এই আসনগুলি যেসমস্ত লোকসভা আসনের ছাতার তলায় রয়েছে, সেখানে ২০১৯ ভোটে বিজেপির রমরমা দেখা গিয়েছে। পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, বীরভূমের ওবিসি, এসসি ও এসটি ভোটের বড় অংশ বিজেপির দখলে গিয়েছে বলে পরিসংখ্যান দাবি করছে। আর এই ভোট বিজেপির থেকে ছিনিয়ে নিতে তৎপর মমতা।

জঙ্গলমহল ও মমতার সামনে আরএসএস ফ্যাক্টর?
প্রসঙ্গত, জঙ্গলমহলে সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ, আদিবাসী ও ক্রিস্টিয়ান সম্প্রদায়ের বহু মানুষের বাস। আদিবাসীদের বিভিন্ন গোষ্ঠী সেখানে বসবাস করেন। আর এই রকমের একটি জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাওবাদী সমস্যা দূর করার পর থেকেই দ্রুত উন্নয়নের রাস্তাও নেন। সরকারিভাবে একাধিক কাজের দিকে উদ্যোগী হন। কিন্তু এদিকে, জঙ্গলমহলে বিভিন্ন বিহার সংলগ্ন জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হতে থাকে। বাঁকুড়া , পুরুলিয়ায় লোকসভা ভোটে ধাক্কা খায় তৃণমূল। কারণ ততদিনে এই এলাকায় আরএসস পোক্ত হতে শুরু করেছে। এসেছে ,ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা, শিবসেনার মতো দল। আদিবাসী বলয়ে হিন্দুদের মন জয় করতে গেরুয়া শিবির একাধিক পদক্ষেপ নেয়। আসে বৈষ্ণবী কল্যাণ আশ্রম।

মমতার মাস্টারস্ট্রোক
পিছিয়ে থাকেননি মমতা। এলাকার ভোটব্যাঙ্ক দখলে তিনিও নেন উদ্যোগ। রামকৃষ্ণ মিশনকে তিনি সরকারি জমি দান করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপজাতি, আদাবাসী এনজিওর সঙ্গে সংযুক্ত হন। জঙ্গলমহলের ময়দানে নামান পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। আর এবার মমতার এই সমস্ত পদক্ষেপ কতটা মন ভরাচ্ছে ভোটারদের , তার জবাব মিলবে একুশের ভোটে। আর সেই জবাবের রঙ কী হয় , সেদিকে তাকিয়ে বাংলা।
মমতা-মোদীরা কবে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন! ভোটের মরশুমে দেশে টিকাকরণ নিয়ে কোন সম্ভাবনার ইঙ্গিত