পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটে বিজেপির সামনে 'সম্ভাবনা' কতদূর, কিছু ফ্যাক্টর একনজরে
প্রচারের নতুন ঘরানা থেকে হাইভোল্টেজ দলবদল। একাধিক ইস্যুকে সঙ্গে নিয়ে ২০২১ এর বাংলার নির্বাচনী ময়দানে কার্যত তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিজেপি। যে দলকে ২০১৬ সালে কার্যত রাজ্যরাজনীতিতে সেভাবে তাৎপর্যের জায়গায় রাখেননি বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক। এবার ভোটের আগে রাজ্যরাজনীতির 'টাফ ফাইট' এ বিজেপি কীভাবে হাওয়া তাদের পক্ষে নিয়ে আসতে পারে তা নিয়ে চলছে বহু চুলচেরা বিশ্লেষণ। বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক একাধিক ফ্যাক্টরকে রাজ্যে বিজেপির উত্থানের কারণ হিসাবে তুলে ধরেছে। সেই খাতে বিজেপির পালে হাওয়া দিয়েছে , এমন কয়েকটি ফ্যাক্টরে নজর রাখা যাক।
বাংলায় তৃণমূল ও বিজেপির উত্থান
প্রসঙ্গত, এক বিশ্লেষণধর্মী আর্টিক্যাল বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ফুঁসে ওঠা ক্ষোভই বিজেপিকে রাজ্যে স্বাগত জানিয়ে দিয়েছে। এদিকে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে গ্রাউন্ড লেভেলে সম্পর্কের ছিন্ন হতে শুরু করাও একটি ফ্যাক্টর বলে মনে করছে কিছু মহল। বাংলার যখন ধীরে ধীরে মমতা বিরোধিতা বা তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভের মেঘ জমা হয়েছে, তখন বাইরে থেকে মোদী সুনামী তুঙ্গে ওঠে ২০১৯ লোকসভা ভোটে। যা বিজেপিকে বাংলায় জমি দখলে সাহায্য় করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নীতি, স্ট্র্যাটেজি থেকে সরেনি বিজেপি!
প্রসঙ্গত, ২০২১ ভোট মেরুকরণের নির্বাচন। আর তা বিজেপির হিন্দুত্ববাদে জোর দিয়ে প্রচার শানানোর ঘটনা দিয়েই আরও বেগ পেয়েছে রাজ্যে। বাংলায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোট। রাজনৈতিক বিশ্লেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, এই ৩০ শতাংশ কার্যত বাদ দিয়েই বিজেপি প্রচার পারদ শানাচ্ছে। উল্লেখ্য, ভোটব্যাঙ্ক নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে দেখা যায়নি বিজেপিকে। হাবেভাবে বিজেপি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে বাকি ৭০ শতাংশ ভোট নিয়েই তারা বাংলা দখলের আশায় রয়েছে। আর সেই জায়গা থেকেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদায় এদিন প্রচার পারদে শান দিচ্ছেন যোগী আদিত্যনাথ।
৭০ শতাংশ ভোটব্যাঙ্ক ফ্যাক্টর ও বিজেপি
২০১৯ লোকসভা ভোটে বিজেপির ভোচ শেয়ার ছিল ৪০.৬৪ শতাংশ। সেই জায়গা থেকে যদি ৭০ শতাংশকেই নিজের ভোটের হিসাবে বিজেপি ধরে নেয়, তাহলে ৭০ এ ৬০ শতাংশ ভোট বিজেপিকে নিজের দিকে আনতে হবে। বিশ্লেষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, যদি বিজেপির পক্ষ থেকে মুসলিম ভোট একেবারেই বাদ দেওয়া যায়, তাহলে ২৯৪ থেকে ৬০ থেকে ৮০ টি আসন বিজেপির এমনিই কেটে যেতে পারে। ২০০ আসন দখলের লক্ষ্যে সেক্ষেত্রে বিজেপির পাখির চোখ ২৩৪ থেকে ২১৪ টি আসন হতে পারে। যা কার্যত জিততেই হবে বিজেপিকে। তাও আবার তৃণমূলের মতো প্রতিপক্ষকে হারিয়ে। ফলে 'কিন্তু','যদি' ফ্য়াক্টর সেক্ষেত্রে থেকেই যাচ্ছে।
বাম কংগ্রেস জোট কতটা প্রভাব ফেলবে?
বিজেপির অন্দরমহল সূত্রের দাবি, তৃণমূল, আর বাম-কংগ্রেসের শক্তি দুটি ভাগে বিভাজিত হওয়ার তারা সুবিধা পেতে পারে। সেক্ষেত্রে মিমের আগমন ও আব্বাসদের পার্টি তৃণমূলের থেকে মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ছিনিয়ে যেমন নেবে, তেমনই বিজেপি বিরোধী কিছু ভোট অন্তত কংগ্রেস ও বামেদের খাতায় যাবে। যা আখেরে বিজেপিকে লাভের গুড় দিতে পারে।
দুর্বল থেকে বলীয়ান হওয়ার কাহিনী
প্রসঙ্গত, বিজেপি রাজ্যে সেভাবে ২০১৯ সালের লোকসবা ভোটের আগে ছাপ ফেলতে পারেনি। তবে ২০১৯ সালে মুকুল রায়ের মতো হেভিওয়েট বিজেপিতে যায়, ততদিনে নেতৃত্বে দিলীপ ঘোষ। ক্রমেই শিরোনাম কাড়তে থাকে বিজেপি। এরপর ২০২১ ভোটের আগে তৃণমূলের তাবড় নেতা শুভেন্দু থেকে রাজীবরা বিজেপিতে প্রবেশ করে সংগঠনের হাত যেমন শক্ত করে, তেমনই বাড়িয়ে দেয় 'বিস্তার'। দলের এই বিস্তারের দিকেই তাকিয়ে ছিল নেতৃত্ব। যা ২০১৯ লোকসভা থেকে মুকুল, দিলীপ, কৈলাস, অর্জুনরা শুরু করেন। আর ২০২১ এর আগে তা ফুলে ফেঁপে ওঠে। এরপর প্রচার পারদে শান দিয়ে বিজেপি মমতার গড় দখল করতে পারে কি না, তার উত্তর তোলা আছে সময়ের দরবারে।