কোথাও কোথাও মমতার গলার কাঁটা হতে পারেন তাঁর সৈনিকরাই
কোথাও কোথাও মমতার গলার কাঁটা হতে পারেন তাঁর সৈনিকরাই
অন্য কোন দল যা করেনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাই করেছেন। রাজ্যে আট দফায় নির্বাচন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। কাজেই দফায় দফায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার কোনও অসুবিধা ছিল না। দেশে এখন দেশসেবার ইচ্ছে খুব কম লোকের নেই। সব দলেই যত আসন রয়েছে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছের সংখ্যা তার কয়েক গুণ। বিজেপির তো কোথাও কোথাও ৪০-৫০ জন প্রার্থীও অপেক্ষা করে আছেন সুযোগ পেতে পারেন এই আশায়। কাজেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিলে অতৃপ্ত আত্মার সংখ্যাও খুব কম হবে না। ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখা যাবে দলের অন্দরে। যা বাইরেও বেরিয়ে আসতে পারে অনেকটাই। অবস্থা সামাল দিতে তাই তৃণমূল ছাড়া আর কোনও দলই একসঙ্গে পুরো তালিকা প্রকাশ করেনি। প্রথম দু দফার নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। তৃণমূল কংগ্রেস তালিকা প্রকাশ করলে যে এমনটা ঘটবে তার আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল অনেক দিন আগে থেকেই। নানান কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার তাঁর প্রার্থী তালিকা থেকে অনেককেই বাদ দেবেন এটা ঠিক করেই নিয়েছিলেন। অনেক বিধায়ক আগেভাগে জানতে পেরে গিয়েছিলেন এবার আর তাঁদের ভাগ্যে শিকে ছিড়বে না। তাই মওকা বুঝে তাঁরা অনেকেই বিজেপির পতাকা তলে শামিল হয়ে গিয়েছিলেন। মমতাও জানতেন আসন প্রত্যাশীরা তালিকা থেকে বাদ গেলে তাঁর দলেও ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখা দেবে। এবং তা প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসতে পারে। পারে নয় আসবে। তাও তিনি একসঙ্গেই ২৯১টা আসনের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। বহু আসনেই প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
দৃঢ় হাতে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে অনেককেই ছেঁটে ফেলতে পেরেছেন মমতা
তাঁর দলের ওপরতলা থেকে নিচেরতলায় যে নানা ধরনের অনৈতিক ও দুর্নৈতিক কাজকর্ম চলছে তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অজানা ছিল না। তা থেকে দলকে মুক্ত করতে বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি নানা পদক্ষেপ নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাতেও যে খুব একটা কাজ হয়েছে তা নয়। দলের তোলাবাজি তিনি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। এবং কে এলাকা নিজের দখলে রাখতে পারবে তাই নিয়ে রাজ্যের সর্বত্রই তাঁর দলে ব্যাপক গোষ্ঠীবাজি। সর্বস্তরে। সাধারণ মানুষ তার ফলে বিপন্ন। কিন্তু মুখ ফুটে তারা কেউ বলতে পারছে না। এতই দাপট স্থানীয় নেতাদের। মমতার কাছে এমন অজস্র অভিযোগ জমা পড়েছে। যাদের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ জমা পড়েছে তাঁরা অনেকেই মমতার অত্যন্ত প্রিয়ভাজন। অনেককেই নিজে হাতে ধরে রাজনৈতিক আঙিনায় নিয়ে এসেছেন। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তাঁরা অনেকেই ছিলেন তাঁর অত্যন্ত নিজের লোক। এঁদের প্রতি মমতার যথেষ্ট দুর্বলতাও ছিল। সব জেনেও এঁদের আগে বাদ দিতে পারেননি। প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক প্রতিটি বিধানসভার কোথায় কে কী অনৈতিক এবং দুর্নৈতিক কাজকর্ম করে চলেছেন তার বিস্তারিত তালিকা জমা দিয়েছেন। এবারে নানান কারণে অনেকেই বাদ দিয়েছেন মমতা। তবে বেশির ভাগটাই দুর্নৈতিক কারণে। প্রশান্ত কিশোরের রিপোর্টের ভিত্তিতে। এই কারণে দলের মধ্যে যে ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখা দেবে তা মমতা জানতেন। তাও।
ক্ষুব্ধরা দ্বিধায় আছেন
মমতার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা বিজেপিতে ঢুকে গিয়েছেন বা যাচ্ছেন। আর যাঁরা পাননি তাঁরা হয় প্রকাশ্যে নিজেরাই ক্ষোভ জানিয়েছেন অথবা আড়ালে থেকে অনুগামীদের এগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যাঁরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা নিশ্চিত নন যে রাজ্যে মমতা আর ক্ষমতায় আসছেন না। যদি নিশ্চিত হতেন তাহলে তাদের দাপট প্রবলভাবে বেড়ে যেত। যদি মমতার ছত্রছায়াতেই থাকতে হয় তাহলে বেশি ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখানো যে বুদ্ধিমানের কাজ হবে না এটা তাঁরা খুব ভালো জানেন। তাছাড়া দলের তরফ থেকেও বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এই সিদ্ধান্ত মেনে দলে থাকতে হলে থাকো, না হলে চলে যাও। ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখিয়ে কোনও লাভ হবে না।
নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ
নদীয়ার দত্তফুলিয়ার এক রাজনীতি সচেতন ব্যক্তির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানান জনমুখী কাজকর্মের সুবাদে যেভাবে এ রাজ্যের সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন, তাতে তাঁকে এখনই ক্ষমতা থেকে সরানো খুব সহজ ব্যাপার নয়। সরাতে গেলে আমফানের মতো একটা ঝড় দরকার। সেই ঝড় তোলার ক্ষমতা এখনও এ রাজ্যে কোনও দলেরই নেই। বিজেপি-রও নয়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বহু জনের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি মোটামুটি অনেকেরই ধারণা এবারই মমতা ক্ষমতা থেকে যাচ্ছেন না। হয়তো তাঁর দলের আসন সংখ্যা কিছুটা কমতে পারে কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মতো জায়গায় তিনি নেই। তাই দলের অনেকে বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েও আবার গুটিয়ে নিয়েছেন। বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে তাঁদের অবস্থা খুব শোচনীয় হবে। তবে নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করার মতো যাঁরা, তাঁরা কিন্তু গলার কাঁটা হয়ে মমতাকে বিব্রত করবেন। তাতেই কিছুটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে তৃণমূলের।
'মন ভালো লাগছে না...বাড়ি যেতে চাই', মমতার ইচ্ছেকে স্বীকৃতি দিয়ে বাড়ি ফেরায় ছাড় ডাক্তারদের