দলের সাংসদ, বিধায়ককে 'চোর' বললেন তৃণমূল প্রার্থী, ক্ষুব্ধ আরামবাগের সাংসদ
বিরোধীরা নয়। খোদ তৃণমূলের প্রার্থী তথা জেলা সভাপতিই 'চোর' বলছেন দলেরই সাংসদ ও বিধায়ককে! এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা হুগলির পুরশুড়ায়। প্রচারে বেরিয়ে তৃণমূল প্রার্থী দিলীপ যাদবের মন্তব্যে বেজায় ক্ষুব্ধ আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার।
লাইভেই বেফাঁস
পুরশুড়ায় তৃণমূল এবার প্রার্থী করেছে দিলীপ যাদবকে। দিলীপ যাদব আবার তৃণমূল কংগ্রেসের হুগলি জেলার সভাপতি। উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার চেয়ারম্যান ও প্রশাসক ছিলেন। উত্তরপাড়া তাঁর খাসতালুক। কিন্তু সেখানে কাঞ্চন মল্লিককে প্রার্থী করেছে দল। কঠিন আসনে লড়তে জেলার সেনাপতিকেই নির্বাচনের যুদ্ধে পুরশুড়ায় পাঠিয়েছে তৃণমূল। নাম ঘোষণার পর থেকেই পুরশুড়ার বিভিন্ন এলাকা চষে ফেলছেন। প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ চলছে তাঁর অফিসিয়াল পেজ থেকে। আর গতকাল সেখানেই বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন দিলীপ যাদব। দলের সাংসদ, বিধায়ককে চোর বলতেই যিনি ছবি তুলছিলেন তিনি ক্যামেরা ঘোরান। তবু নিজের বক্তব্য জোর দিয়ে আরও একবার বলতে শোনা যায় দিলীপ যাদবকে।
সাংসদ, বিধায়ক 'চোর'!
পুরশুড়ার ডিহিবাতপুরে জনগণের দুয়ারে গিয়ে নির্বাচনে আশীর্বাদ প্রার্থনা করছিলেন দিলীপ যাদব। তৃণমূলের ইশতেহারে দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রতিগুলি ব্যাখ্যাও করছিলেন সুন্দরভাবেই। কিন্তু ৪২ মিনিটের ভিডিও-র সাত মিনিটের মাথাতেই বেফাঁস মন্তব্য করেন দিলীপ যাদব। তিনি গ্রামবাসীদের বলতে থাকেন, ভোটের পর এই এলাকায় আর কাঁচাবাড়ি থাকবে না। তখন এক বাসিন্দা বলেন, এখন যা বলছেন ভোটের পর সে কথা রাখতে এলাকায় আসবেন কিন্তু। তখনই হঠাৎ দিলীপ যাদব বলেন, আমি কাজের মানুষ। নুরুজ্জামান আর অপরূপার মতো চোর নই। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে পুরশুড়া থেকে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন এম নুরুজ্জামান। তিনি ২০১১ সালে দেগঙ্গার বিধায়ক ছিলেন। আর অপরূপা পোদ্দার ওরফে আফরিন আলি আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ।
ক্ষুব্ধ অপরূপা
ওয়ান ইন্ডিয়া বেঙ্গলির কাছ থেকেই বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। তিনি বলেন, জেলায় দলের সভাপতি দলের একটা গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ। অন্তত দল যাঁরা মন দিয়ে করেন তাঁদের কাছে। আমাকে আরামবাগের কো-অর্ডিনেটর করেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের আশীর্বাদ নিয়েই আমি কাজ করছি। দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারও করছি রোজ। ফলে আমার সম্পর্কে যখন দলের জেলা সভাপতি এই মন্তব্য করেছেন তখন তিনি কেন এই কথা বলেছেন তার উত্তর তিনিই দিতে পারবেন। আমি দেবো না।
পুরশুড়ায় কঠিন লড়াই
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী এম নুরুজ্জামান ১,০৫, ২৭৫ ভোট পেয়েছিলেন। কংগ্রেস ছিল দ্বিতীয়। ১৮ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়ে তিনে ছিল তৃতীয়। অথচ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে চিত্রটা বদলে যায়। আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার পুরশুড়া বিধানসভা ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিলেন ২৫ হাজার ৮৪২ ভোটে। বিজেপি প্রার্থী ভোট তপনকুমার রায় পান ১,০৭,৭৫৯ ভোট, অপরূপার ঝুলিতে আসে ৮১,৯১৭ ভোট। পারভেজ রহমানের জায়গায় নুরুজ্জামানকে প্রার্থী করা ও তাঁর বিধায়ক হওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা বারবারই প্রকাশ্যে এসেছে। যার প্রভাব পড়েছে লোকসভা নির্বাচনেও। আরামবাগ লোকসভা এলাকার তৃণমূল যুব সভাপতি গোপাল রায় এই পুরশুড়ারই বাসিন্দা। যদিও স্থানীয় সূত্রে খবর, বিধানসভা ভোটের প্রচারে তাঁকে বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না মেটায় দলের অনেক নেতা-কর্মী ভোটের কাজে সক্রিয় নন বলে অভিযোগ। কঠিন পিচে তাই ম্যাচ বের করতে বেশ ঘাম ঝরাতে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীকে। এই পরিস্থিতিতে দলের সাংসদ, বিধায়ককে তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি চোর বলায় গোষ্ঠী কোন্দল ফের বেআব্রু হলো বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
ছবি- ফেসবুক