ভূতের ভয়ে ভিটে-মাটি ছেড়ে পালিয়েছে সবাই, বাঁকুড়ার এ গ্রামে শ্মশানের নিস্তব্ধতা
এ গ্রামে এখন শুধুই আতঙ্ক বিরাজ করে। মাত্র এক বছরের মধ্যে বদলে গিয়েছে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির এই ছোট্ট গ্রাম।
সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। গাছ-গাছালি ঘেরা বাড়ি-ঘর, মাটির চালাবাড়িতে গোবর নিকোন উঠোন, তুলসি-মন্দির। মোরগের ডাকে এখানে ভোর হত, সকালের রোদ বাঁশ বাগানের ফাঁক দিয়ে এসে পড়ত মাটির বারান্দাগুলোতে। কিন্তু এখন শুধুই আতঙ্ক বিরাজ করে গ্রামে। মাত্র এক বছরের মধ্যে বদলে গিয়েছে বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির এই ছোট্ট গ্রাম।
গ্রামের নামটি চালিবাড়ির ডিহি। গঙ্গজলঘাটির বড়জুড়ির তিন কিলোমিটার দূরে এই গ্রামের অবস্থান। এখন গোটা গ্রামেই শ্মশানের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। দিনের বেলাতেই গা ছমছম করে। রাত নামলে তো কথাই নেই। পুরো গ্রামই যে শুনশান। ১৬টি পরিবারের বাস ছিল এই গ্রামে। তাঁরা এখন ভিটেমাটি ছেড়েছে ভূতের ভয়ে।
না, ভূত দেখেননি কেউ, কিন্তু মনে বিরাজ করছে ভূতের ভয়। রাত নামলেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতেন সবাই। বাড়ি থেকে বাইরে পা ফেলার উপায় নেই। ভূতের ভয়ে সন্ধ্যা নামার পরই শুধু মনে হয় পিছনে কে যেন আসছে। আট থেকে আশি- এই ভীতিমুক্ত নন কেউই। একে একে সবাই তাই গ্রাম ছেড়েছে। ভিটেমাটি ছেড়ে ওঁরা এখন পরবাসী।
কিন্তু কেন এমনটা ঘটল? বছর খানের আগের ঘটনা। গ্রামের এক কিশোর খুন হয়েছিল এক অভিশপ্ত সন্ধ্যায়। তারপর থেকেই গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এই ভীতি। একে একে সবার মনে বিরাজ করতে থাকে ভূতের ভয়। তা এমনই জাঁতাকলের মতো বসে যায় যে, বাড়ি ছাড়তেও পিছপা হননি তাঁরা।
এখন ব্লক প্রশাসন তৎপর হয়ে উঠেছে ঘরছাড়াদের গ্রামে পেরাতে। ভূতের আতঙ্ক তাঁদের মন থেকে মুছে ফেলাই এখন চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের। তাই নিয়ম করে চলছে সচেতনতা শিবির। সেই শিবির কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটাই এখন দেখার। চালিবাড়ি ডিহির ১৬ পরিবার মনের অন্ধকার দূর করে আলোয় ফিরতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার।