যারা তোমার মূর্তি ভেঙেছে তুমি তাদের ক্ষমা করে দিও, চোখের জলে আকুতি ওঁদের
প্রতিদিন তার দিন শুরু হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে প্রণাম করে। সারাদিন তার সেবা করেন তিনি। বুধবার তিনি তাঁর ঈশ্বরকে প্রণাম করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।
তাঁর দিন শুরু হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে প্রণাম করে। সারাদিন তার সেবা করেন তিনি। বুধবার তিনি তাঁর ঈশ্বরকে প্রণাম করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। বলেছেন, ''যারা তোমার মূর্তি ভেঙেছে তারা জানে না তারা কী অপরাধ করেছে। সব বাঙালির হয়ে আমি ক্ষমা চাইছি। যারা তোমার মূর্তি ভেঙেছে তুমি তাদের ক্ষমা করে দিও।"
মন খারাপ, চোখে জল
যে গ্রামে বিদ্যাসাগরের জন্ম, সেই বীরসিংহ গ্রামে তাঁর জন্মভিটেতে বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরের কেয়ারটেকার দিলিপ বন্দ্যোপাধ্যায়। যখন থেকেই শুনেছেন যে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে, তখন থেকেই তাঁর মন খারাপ। চোখের জল বাধ মানছে না। চোখের জল মুছতে মুছতেই নিজের কর্তব্য পালন করে চলেছেন তিনি।
বিদ্যাসাগর মহাশয় ঈশ্বর
তাঁর কথায়, "আমার কাছে বিদ্যাসাগর মহাশয় একজন ঈশ্বর। যখন শুনলাম তাঁর মূর্তি ভাঙা হয়েছে তখন আর চোখের জল আটকাতে পারিনি।" এখানে দশ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছেন তিনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিলীপবাবুর কাজ সব কিছুর দিকে নজর রাখা, কেউ এলে তাকে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো।
এই লজ্জা রাখার জায়গা নেই
এদিন সকাল থেকেই দিলীপবাবুর মতো মনখারাপ বীরসিংহ গ্রামের অন্যান্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে লজ্জায় মুখ লুকোতে পারছেন না বিদ্যাসাগরের গ্রামের মানুষেরা। তাঁরা বলছেন-"এই লজ্জা রাখার জায়গা নেই। আমরা তাঁকে অনুসরণ করতে পারি না। তাহলে তাঁর মূর্তি ভাঙার অধিকার আমাদের কে দিল? সব রাজনৈতিক দলের উচিত রাজনীতির ওপরে উঠে ঐক্যমত পোষণ করে প্রকৃত তদন্তের দাবি করা।
শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা
বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা স্থানীয় গ্রন্থাগারের সম্পাদক হরগোবিন্দ দোলুই রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই আহ্বান জানালেন সকলকে। এলাকার বাসিন্দা তথা লাইব্রেরিয়ান অরুণকুমার ঘোষ বলেন, "এটা খুবই লজ্জার ব্যাপার। তিনি শুধু শিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা নেননি সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা ছিল অতুলনীয়।
উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক প্রশাসন
তিনি বলেন, যেভাবে অবমাননা করা হয়েছে বিদ্যাসাগরের, তাঁর মূর্তি ভাঙা হয়েছে, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। এদিন বিকেলে বিদ্যাসাগরের জন্মভূমিতে এসেছিলেন নদিয়ার হরিণঘাটার গীতা মণ্ডল। তিনি বলেন, যারা ভাঙে তারা চিরকাল ভাঙে। যারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে তাদের আর কী বলব, তাদের বলার মতো আমাক কোনও ভাষা নেই।
কোনদিন ভাবতেই পারিনি
এই গ্রামের অরিন্দম ঘোষ বর্তমানে টালিগঞ্জে বি ফার্ম স্টুডেন্ট। আগে পড়তেন বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয়ে। তিনি বলেন, যে স্কুলে আমি পড়েছি তা বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠা করেন। আর তার মূর্তি এখন ভাঙা হল। বিদ্যাসাগরের মূর্তি যে কেউ কোনদিন ভাঙতে পারে তা কোনদিন ভাবতেই পারিনি। এদিন বিকালে মূর্তি ভাঙ্গার প্রতিবাদ জানিয়ে বীরসিংহ গ্রামে মিছিল করেন গ্রামের বাসিন্দারা। সকালে মেদিনীপুর শহর-সহ নানা জায়গায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে মিছিল বের হয়।