দেবী চৌধুরানির ডেরা থেকে বর্গভীমা মন্দির, কালী পুজোয় মেতেছে বাংলা
ঐতিহাসিক দেবী চৌধুরানীর স্মৃতি বিজড়িত জলপাইগুড়ির কালী মন্দির থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের বর্গভীমা দেবীর প্রার্থনা, কালী মায়ের পুজোয় সামিল হয়েছেন উৎসম মুখর বাংলার মানুষ। ঐতিহ্য, রীতি ও প্রার্থনার টান অনুভ
ঐতিহাসিক দেবী চৌধুরানীর স্মৃতি বিজড়িত জলপাইগুড়ির কালী মন্দির থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের বর্গভীমা দেবীর প্রার্থনা, কালী মায়ের পুজোয় সামিল হয়েছেন উৎসম মুখর বাংলার মানুষ। ঐতিহ্য, রীতি ও প্রার্থনার টান অনুভূত হচ্ছে রাজ্যের সর্বত্র। তারই কিছু নির্দশন এই লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরা হল।
৩০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য
জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ে জাতীয় সড়কের ধারে বৃদ্ধ (৪০০ বছর) বট গাছের পাশেই গর্বিত ভঙ্গিতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে তিনশো বছরের বেশি পুরনো বিখ্যাত দেবী চৌধুরানীর মন্দির। কথিত আছে, এই এলাকা নাকি আগে ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। যেখানে শুরুতে রাজ করতেন বিদ্রোহী ভবানী পাঠক। পরে এই বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে দেবী চৌধুরানীর রাজত্ব শুরু হয়। সেই ঘন জঙ্গলেও ছিল এই আদি বটগাছ। যেখানে মনসা পুজো শুরু হয় প্রথমে। তারই পাশে পরে তৈরি হয় শিব ও কালী মন্দির। ইংরেজদের শত্রু দেবী চৌধুরানী ওই মন্দিরের পিছনের সুড়ঙ্গ দিয়ে গা ঢাকা দিতেন বলে শোনা যায়।
তমলুকের বর্গভীমা
ঐতিহাসিকদের মতো পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের (তৎকালীন তাম্রলিপ্ত) এই মন্দিরটি আদতে একটি বৌদ্ধ সঙ্ঘ। বল্লাল সেনের রাজত্বে বঙ্গদেশের শক্তির আরাধকদের পৃষ্ঠপোষকতায় তা পরে মন্দিরে পরিণত হয় বলে জানানো হয়েছে। পুরাণ মতে বঙ্গদেশে মানব সম্প্রদায় যখন ভয়ঙ্কর কালাপাহাড়ের ধ্বংসলীলার সম্মুখীন, তখন রক্ষাকর্ত্রী হয়েছিলেন মা বর্গভীমা। কথিত আছে, ওড়িশা বিজয়ের পর তাম্রলিপ্তে প্রবেশ করে দেবীকে দর্শন করেই শক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন দুর্ধর্ষ কালা পাহাড়। ভীমরূপা মাতা এই দেবী একাধারে কালী ও মতান্তরে উগ্রতারা। পুরাণ মতে, ৫১ সতীপীঠের প্রথম পিঠও তমলুকের এই মন্দির। এই স্থানে সতীর বাম পায়ের নূপুর পড়েছিল বলে কথিত আছে।
মেদিনীপুরের গোপন আখড়া
মেদিনীপুর শহর থেকে কিছুটা অভ্যন্তরে লালদিঘি, আদিবাসী পল্লী, শ্মশান পেরিয়ে যেখানে গিয়ে রাস্তা বাঁক নিয়েছে, তারই একপ্রান্তে ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী বিমল দাশগুপ্তের গোপন আখড়া। যেখানে অস্থির সময়ে তরুণ বিপ্লবীদের দেশের জন্য আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাওয়ার দীক্ষা দেওয়া হত বলে শোনা যায়। সেই সময়ই এই স্থানে বেদী তৈরি করে দেবী মহামায়ার (মা কালী) ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও ওই স্থানে পুজো চলতে থাকে। পেশায় জেলে বাড় মানিকপুরের নিতাই দাসের হাত ধরে ওই বেদিতে দক্ষিণাকালীর পুজো শুরু হয়।
বোল্লা কালী মন্দির
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বোল্লা গ্রামে অবস্থিত এই কালী মন্দির। পুরাণ মতে, প্রায় ৪০০ বছর আগে জমিদার বল্লভ চৌধুরীর রাজত্বে এক মহিলা স্বপ্নাদেশে কালো পাথরখণ্ড কুড়িয়ে পেয়ে, মাতৃরূপে তা দিয়ে পুজো শুরু করেছিলেন। জমিদার মুরারী মোহন চৌধুরী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলায় পরিত্রাণ পেয়েছিলেন মা কালীর শরণাপন্ন হয়ে। মামলা জিতে জমিদার মুরারী মোহন, কালো মায়ের পুজা স্থলে দেবী কালীকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে কথিত আছে।