'০' ছিল, হয়ে গেল '১৬২', ডবলুবিসিএস-এর দুর্নীতি রূপকথাকেও হার মানাচ্ছে
পরীক্ষায় শূন্য! এর একটা চালু নামও আছে 'রসগোল্লা'। যাঁরা এটা পেয়েছে তাঁরা কোনওদিন বাড়ির অন্দরমহল থেকে পাড়া বা স্কুলে বীরের সম্মান পেয়েছেন এমনটা শোনা যায় না।
পরীক্ষায় শূন্য! এর একটা চালু নামও আছে 'রসগোল্লা'। যাঁরা এটা পেয়েছে তাঁরা কোনওদিন বাড়ির অন্দরমহল থেকে পাড়া বা স্কুলে বীরের সম্মান পেয়েছেন এমনটা শোনা যায় না। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় এমন একজন আছেন যিনি 'শূন্য' পেলেও তা নাকি ম্যাজিকের মতো বদলে যায়। এই বদলে যাওয়া নম্বর এতটাই বিশাল যে ৫ বছরের রেকর্ডও ধুলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। বলা হচ্ছে কারোর 'শূন্য' নম্বর যে এমন জাদু থাকতে পারে তা নাকি ভাবাই যায়নি। কারণ, 'শূন্য'-র বদলে এখন যে নম্বরটা তাঁর খাতায় জ্বলজ্বল করছে তাতে বিসিএস-এ কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙে ছাড়খাড়। যাঁরা হাড়ভাঙা খাটুনি খেঁটে ডবুলবিসিএস-এর পরীক্ষায় বসেছিলেন তাঁদেরও মাথায় হাত। পরীক্ষার্থীরা একে অপরের মুখ দেখে নাকি বলছেন 'শূন্য'-টাই পেলে ভাল ছিল!
[আরও পড়ুন:বিপন্ন ডবলুবিসিএস-এর ভবিষ্যৎ! পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে চাকরি কেলেঙ্কারির পর্দা ফাঁস]
আসলে 'শূন্য' পেলে তো হবে না! তার সঙ্গে থাকতে আরও কিছু ফ্যাক্টর। যেমন ক্ষমতাসম্পন্ন এক এক ব্যক্তি খোদ পাবলিক সার্ভিস কমিশন দফতরে থাকতে হবে যিনি 'শূন্য' মহিমা বদলের দায়িত্বটা ঘাড় পেতে নিয়ে নেবেন। ডবলুবিসিএস-র দুর্নীতি নিয়ে এর আগেও বহু অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এবার যা ঘটেছে তাকে অনেকে রাতা-রাতি পুকুর চুরির সঙ্গে তুলনা করছেন। এমন ঘটনা পিএসসি-র ইতিহাসে কস্মিনকালেও ঘটেনি বলেও দাবি করা হচ্ছে। যে ভাবে খোদ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এক শীর্ষকর্তা এক মহান পরীক্ষার্থীর 'শূন্য' নম্বরকে বদলে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন তা রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের দফতরের কর্মীদের অবাক করে দিয়েছে।
ডবলুবিসিএস-এর পরীক্ষার্থীদের আসল পরিচয়ের স্থানে তৈরি হয় একটি নম্বর আইডেন্টিটি। বিষয় ভিত্তিক পরীক্ষার সঙ্গে এই নম্বর আইডেন্টিটি বদলে যায়। ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার হাতে ডবলুবিসিএস ২০১৭-র মেনস পরীক্ষার যে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে এই 'শূন্য' নম্বরের মহিমা। ইংরাজি কম্পালসারি বিষয়ের পরীক্ষার ট্যাবুলেশন শিটে পরিস্কার লেখা রয়েছে ৫৯১৯ নম্বর পরীক্ষার্থী একটিও বিভাগে প্রশ্নের উত্তর দেননি। ৫৯১৯ নম্বরের ঘরে পরপর ৫টি জায়গায় 'এনএ' লেখা রয়েছে। এর মানে 'নট অ্যাটেমটেড'। অর্থাৎ ওই পরীক্ষার্থী ফাঁকা খাতা জমা করে এসেছেন। তাই সব সব 'এনএ' লিখে দিয়েছেন এক্সামিনার।
এরপরে আরও একটি ট্যাবুলেশন শিট পাওয়া গিয়েছে। পিএসসি সূত্রে খবর এই ট্যাবুলেশন শিটটি পরিবর্তিত। এই শিটে ৫৯১৯ নম্বর পরীক্ষার্থীর ঘরে 'এনএ'-এর স্থানে যথাক্রমে ৩৪, ৩১, ৩১, ৩২ ও ৩৪ লেখা। যা মোট করলে দাঁড়ায় ১৬২। মানে ৫৯১৯ নম্বরের পরীক্ষার্থী তিনি প্রথম ট্যাবুলেশন শিটে 'শূন্য' নম্বর পেয়েছিলেন, তিনি কোনও জাদুবলে ১৬২ নম্বর পেয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা ফাঁকা খাতা জমা করেও ১৬২ নম্বর। এমন কাহিনি তো রূপকথাকেও হার মানাবে।
ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার হাতে আসা এই ট্যাবুলেশন শিট-এর উপরে লেখা রয়েছে ডবলুবিসিএস এক্সাম ২০১৭, ইংলিশ কম্পালসারি। এই ট্যাবুলেশন শিট দুটি যে ডবুলবিসিএস-মেনস ইংরাজি পরীক্ষার তাতে কোনও সন্দেহ নেই। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে যে পরীক্ষার্থী একটি প্রশ্নেরও উত্তর না দিয়ে শূন্য় পেলেন তিনি কী ভাবে পরিবর্তীত ট্যাবুলেশন শিট-এ ১৬২ নম্বর পেলেন?
এই কাহিনির সন্ধানেই সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আর বলে রাখা দরকার শূন্য নম্বরের স্থানে ১৬২ নম্বর হওয়ার ঘটনায় রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কর্মীরা খোদ এক শীর্ষ কর্তার দিকেই আঙুল তুলেছেন। প্রভাবশালী কর্তাদের মদত ছাড়া এই নম্বর বদল সম্ভব নয় বলে পিএসসি-র কর্মীদের অভিযোগ। ডবলুবিসিএস-এর নজিরবিহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা পিএসসি-র কর্মীরা ইতিমধ্যেই বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে পিএসসি-র কর্মীরা আজ যে কোনও মূল্যে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ধরে রাখতে রাস্তায় বসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলারও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু, কী ভাবে 'শূন্য' নম্বর বদলে গিয়ে '১৬২' হল সেই কাহিনি ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা তুলে ধরবে, ততক্ষণ নজর রাখুন ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার পেজে।