বেসরকারি হাসপাতালে যথেচ্ছাচার, অযথা বিল বৃদ্ধি আর গাফিলতির অভিযোগ ভুরিভুরি
বেসরকারি হাসপাতালে যথেচ্ছাচার চলছেই। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন নার্সিংহোম ও হাসপাতালে অব্যাহত বিল-দুর্নীতি।
কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি : বেসরকারি হাসপাতালে যথেচ্ছাচার চলছেই। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন নার্সিংহোম ও হাসপাতালে অব্যাহত বিল-দুর্নীতি। চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও গলদের অভিযোগ উঠছে ভুরি ভুরি। রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে নেহাতই ব্যবসায় রূপান্তরিত করেছেন এক শ্রেণির নার্সিংহোম মালিকরা।[রাজ্য সরকারের তরফে যে অভিযোগগুলি তোলা হয় নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে]
ইতিমধ্যেই বর্ধমানের পিজি নার্সিংহোমের ঘটনায় তিন মালিক-সহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে ডানকুনির সঞ্জয় রায়ের পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। রাজ্য সরকার দুই হাসাপাতালের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থার নেওয়া হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছে। তবু সম্বিৎ ফিরছে না অন্যান্য হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের। কর্তব্যে গাফলতি, বিল-কেলেঙ্কারি চলছেই।[স্বাস্থ্য পরিষেবায় নজরদারিতে হেলথ রেগুলেটরি কমিশন বিল আনছেন মুখ্যমন্ত্রী]
বেহালার জ্যোতিষ রায় রোগের বাসিন্দা রূপম পাল ভুল করে অ্যাসিড খেয়ে নিয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারি রূপমকে ভর্তি করা হয়েছি্র একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ১৫ দিনে তার চিকিৎসা খরচ ছাড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৫ হাজার। অভিযোগ সেখানে নয়। অভিযোগ, ৩০ হাজার টাকা বলে অপারেশন প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল রূপমের পরিবারকে। কিন্তু অপারেশনের বিল করা হয়েছে ৯০ হাজার। এক অপারেশনে চিকিৎসকের ফি ধার্য করা হয়েছে দু'বার।[মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না, নার্সিংহোম কর্তাদের কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর]
কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানেত চায়নি। তবে মেয়রের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিবৃত্তি ঘটে। ২০ হাজার টাকা কনসেশনের পাশাপাশি ৫৫ হাজার টাকা বকেয়া রেখেই রূপমকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রূপমের পরিবারের অভিযোগ, বকেয়া না মেটালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।[১ লক্ষ টাকার প্যাকেজে ভর্তি করিয়ে ৪০ দিনে বিল ২৫ লক্ষ! বিতর্কে অ্যাপোলো]
মুকুন্দপুরের একটি নামী হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বুকের এক্স-রে করিয়ে হাঁটুর এক্স-রে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় গাফিলতির অভিযোগ কর্তৃপক্ষের রিরুদ্ধে। চিকিৎসক এই রিপোর্ট দেখেই অবাক হয়ে যান। তারপর কর্তৃপক্ষের নজরে আনলে এই ত্রুটির বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়। তড়ঘিড়ি বুকের এক-রে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
বারাসতের দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশিকী চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পিছনেও হাসপাতালের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফলিতর অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। ৩৩ লক্ষ টাকা বিল সত্ত্বেও বাঁচানো যায়নি ওই ছাত্রীকে। ৫৮ দিন ভেন্টিলেশনে রেখে তিনবার অপারেশন হয়। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সাহায্য সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয়নি।
অভিযোগের তির হাওড়ার বাগনানের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের দিকেও। বাগনানের আন্টিলার বাসিন্দা কৌশিক দলপতি পেটে ব্যথা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে স্থানীয় একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করান। সেখানে কিডনি প্রায় অকেজো বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়। পরে কলকাতার তারাতলায় পরীক্ষা করে দেখা যায়, তিনি পুরো সুস্থ। এরপরই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় বাগনানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে।