খবরের জের, পিছু হঠলেন পশ্চিম বর্ধমানের চেয়ারম্যান, বরাদ্দ বাড়ালেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়
চাপে পড়ে সরকারি প্রাথমিক স্কুল-এর ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর।
চাপে পড়ে সরকারি প্রাথমিক স্কুল-এর ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। আর সেই সঙ্গে স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে জারি করা সার্কুলার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন পশ্চিম বর্ধমানের জেলা প্রাথমিক স্কুল পর্ষদের চেয়ারম্যান এ কে দে। সোমবার এই সার্কুলার জারি করেছিলেন তিনি। স্কুল স্পোর্টস-এ শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় নিয়ে সোমবার থেকে লাগাতার খবর করে প্রকাশ করে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি। প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল কীভাবে পশ্চিম বর্ধমানের জেলা প্রাথমিক স্কুল পর্ষদের চেয়ারম্যান সার্কুলার জারি করে ৫০০ করে চাঁদার ফতোয়া দিয়েছেন। এমনকী, বারাসতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল স্পোর্টস-এ চাঁদা না দেওয়ায় নাম ধরে ধরে পোস্টারিং করা হয়। সে খবরও পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে তুলে ধরে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি।
এই দুই খবরে স্বাভাবিকভাবেই মঙ্গলবার শিক্ষা দফতরে হইচই পড়ে গিয়েছিল। এরমধ্যে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা স্কুল স্পোর্টস-এ চাঁদা না দেওয়ার ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষকরা দলমত নির্বিশেষে সরব। সরকারি ব্যাবস্থাপনায় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কেন চাঁদা দেওয়া হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ স্কুল স্পোর্টস-এ শিক্ষকদের চাঁদা দেওয়া নিয়ে প্রচণ্ড সরব। ১৯ নভেম্বর উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনও এই নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের কাছে সরব হয়েছিল। সে সময় শিক্ষামন্ত্রী স্কুল স্পোর্টস-এ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশও করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন এই নিয়ে তিনি পদক্ষেপ করবেন।
এমন পরিস্থিতিতে সোমবার স্কুল স্পোর্টস-এ শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা আদায়ের জন্য সার্কুলার বের করা হয়। আর সেই সার্কুলার এসআই-দের কাছে পাঠিয়ে দেন পশ্চিম বর্ধমানের প্রাথমিক স্কুল পর্ষদের চেয়ারম্যান এ কে দে। এই নিয়ে বিপুল সমালোচনা হয়। শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ থেকে এমন সার্কুলারের কড়া নিন্দাও করা হয়েছিল। চেয়ারম্যানকে ঘেরাও-এর কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নেয় মঙ্গলবার। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রধান দেবজ্যোতি ঘোষ স্কুল স্পোর্টস-এ চাঁদা না দেওয়া শিক্ষকদের সমাজের কলঙ্ক ও নিকৃষ্ট-ঘৃণ্য বলে মন্তব্য করেন। এতে শিক্ষক মহলে কড়়া প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।
শিক্ষা জগতে বেশকিছু ইস্যু নিয়ে এমনিতেই শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ জমে উঠেছে। তারমধ্যে সম্প্রতি নামখানা স্কুলে ৬ শিক্ষককে বহিরাগতদের মারধর থেকে শুরু করে বরাহনগরের শরৎচন্দ্র ধর প্রাথমিক বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষকের ছাত্রদের মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। এই স্কুলের প্রধানশিক্ষক মণীশকুমার নেজ-এর বিরুদ্ধে স্কুলে অর্থ নিয়ে পড়ুয়াদের ভর্তি থেকে শুরু করে বাইরের প্রকাশনা সংস্থার বই বিক্রি করা, স্কুল ভবনের উন্নয়নের অর্থ নয়ছয়েরও অভিযোগ ওঠে। জেলাশাসকের নির্দেশে তৈরি হওয়া তদন্ত কমিটির সামনে মণীশকুমার নেজ নিজের দোষও স্বীকার করে নেন। তবু সেই দুর্নীতিগ্রস্থ প্রধানশিক্ষক মণীশকুমার নেজ-এর বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা দফতর কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। উল্টে তাঁকে বাঁচানোর জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ। মণীশকুমার নেজ-এর শিক্ষারত্ন সম্মান পাওয়া নিয়েও নানা অভিযোগ সামনে আসছে। এই সমস্ত ঘটনাই শিক্ষক মহলে রাজ্য সরকারের সদর্থক মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে। সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে যদি শিক্ষক মহলের একটা বড় অংশ বিরূপ মনোভাব নিলে ভোটব্যাঙ্কে যে তার প্রভাব পড়বে তারও ইঙ্গিত তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় শিক্ষকদের সবচেয়ে জ্বলন্ত সমস্যা স্কুল স্পোর্টস-এ চাঁদা দেওয়ার মতো বিষয়টি।
স্কুল শিক্ষা-দফতর সূত্রে খবর শিক্ষকদের কাছ থেকে যাতে কোনওভাবেই চাঁদা না নেওয়া হয় তার জন্য পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। এই বছর স্কুল স্পোর্টস-এর জন্য রাজ্য শিক্ষা দফতর যে অর্থ বরাদ্দ করেছে তার উপরে ৪০ শতাংশ আরও বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই মর্মে সার্কুলার জারির তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর এই নির্দেশের জন্য পশ্চিম বর্ধমানের চেয়ারম্যান সার্কুলার প্রত্যাহার করেছেন কি না তা জানা যায়নি।
শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক মইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এটা আন্দোলনে জয়। রাজ্যজুড়ে শিক্ষায় অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁরা যে আন্দোলন চালাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রীর সিদ্ধান্ত তারই ফল বলে মনে করছেন তিনি। ১৯ নভেম্বর উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর যে প্রতিনিধিরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিল, তাঁরা স্কুল স্পোর্টস নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরে যে জুলুম করা হয় তার ছবিটা তুলে ধরেছিল। কীভাবে চাঁদা না দেওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নামে পোস্টার দেওয়া হয় তাও শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল। সবমিলিয়ে এটা শিক্ষক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সমস্ত সংগঠনের জয় বলেও মনে করছেন মইদুল।