সব স্বপ্ন এক লহমায় শেষ রেললাইনে, শর্ট ফিল্ম-শ্যুটের মারণ নেশায় তছনছ ৩ জীবন
ছাত্রাবস্থা থেকেই তিলে তিলে নিজের স্বপ্নকে লালিত করতেও শিখেছিল ওঁরা তিন বন্ধু। আর তা করতে গিয়েই ডেকে আনল বড় বিপদ। যার হাত থেকে শেষ রক্ষা আর হল না।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছিল ওঁরা। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিলে তিলে নিজের স্বপ্নকে লালিত করতেও শিখেছিল ওঁরা তিন বন্ধু। আর তা করতে গিয়েই ডেকে আনল বড় বিপদ। যার হাত থেকে শেষ রক্ষা আর হল না। রেললাইনে দাঁড়িয়ে শর্ট ফিল্মের শ্যুটিং করতে গিয়েই সব স্বপ্ন শেষ। ক্যামেরা শ্যুট করতে গিয়েই এক বন্ধু চোখের সামনে দেখল, তাঁর দুই বন্ধুকে ট্রেনে খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেল। ছবি করতে গিয়েই নিজেরাই ছবি হয়ে গেলেন চোখের সামনে। ঘটনায় আহত হয়ে এখন শুধু হতাশা সৌম্যদীপের চোখে।
স্বপ্ন ছিল তাঁরা শর্ট ফিল্ম বানাবে। তা ইউটিউবে আপলোড করে ভবিষ্যতের ফিল্ম গড়ার স্বপ্নকে উচ্চ শিখরে তুলে ধরবে। সেই কারণেই বছর উনিশের তিন তরুণ শ্যুটিং ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বেলঘরিয়া স্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সিসিআর ব্রিজের সামনে রেললাইনকে। সুনীল সুরেন্দ্রনাথ কলেজের বাণিজ্য শাখার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর শৈশব আর সৌম্যদীপ বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র।
তাঁদের শর্ট ফিল্মের বিষয় ছিল, পরীক্ষায় ফেল করে এক বন্ধু আত্মহত্যা করতে গিয়েছেন। আর আর বন্ধু তাঁকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এই দুই বন্ধু চরিত্রে অভিনয় করছিলেন সুনীল আর শৈশব। শ্যুটিং করছিলেন সৌম্যদীপ। অভিনয়ের নেশায় তাঁরা এতটাই বুঁদ হয়েছিলেন যে, খেয়ালই নেই পিছনে এসে গিয়েছে আপ বজবজ-নৈহাটি লোকাল। ট্রেনের হর্নও কর্ণগোচর হয়নি তাঁদের। তারপরই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। সব স্বপ্ন নিমেষেই শেষ।
এর আগেও একাধিক শর্ট ফিল্ম বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেছে ওঁরা। কিন্তু এবার যে এমন সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে যাবে, ভিডিও-শ্যুটের নেশায় কল্পনাও করেননি কেউ। সৌম্যদীপ জানান, ১৫ মিনিটের শ্যুটিং-এর ফাঁকে আর একবার ট্রেন এসেছিল, আমরা আগেই সরে গিয়েছিলাম। এবার কেউ বুঝতে পারিনি আপ লোকাল এসে গিয়েছে। সব শেষ হয়ে গেল! কিছুতেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারছিলেন না সৌম্যদীপ। চোখের সামনেই যে প্রিয় দুই বন্ধুকে শেষ হয়ে যেতে দেখেছে সে। সেই জ্বালা যে জীবনেও ভুলতে পারবে না সৌম্যদীপ।