একুশের ভোটে বাংলায় ফ্যাক্টর ২ কোটি মুসলিম ভোট! মমতার চিন্তা বাড়াচ্ছে মিম
একুশের বাংলায় নির্বাচনী উত্তাপ তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিজেপি এবার রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জার হিসেবে বিধানসভা নির্বাচনের লড়বে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নয়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসালিমেন বা মিম। মিম এবার তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসাতে আসছে বাংলায়।

বাংলাকে টার্গেট করে নয়া সমীকরণ তৈরি মিমের
প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের নির্বাচনের আশ্চর্যজনকভাবে কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে মিম। পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের পাঁচ আসনে তাঁরা জয়যুক্ত হয়েছে। এবার বাংলাকে টার্গেট করে ইতিমধ্যেই নয়া সমীকরণ তৈরির চেষ্টা করছেন মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। বাংলায় পা দিয়েই তিনি হুগলি জেলার ফুরফুরা শরিফের বিশিষ্ট পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করেছেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জেলাগুলিতে ফ্যাক্টর হবে মেরুকরণ
সংখ্যালঘুদের ভোট সর্বদা পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এসেছে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে বাংলায় ২.৪৬ কোটি মুসলমান রয়েছে। তারা রাজ্যের জনসংখ্যার ২৭.০১ শতাংশ। এর মধ্যে ভোটার প্রায় ২ কোটি। বাংলার তিনটি জেলায়- মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হল মুসলিম। এই তিনটি জেলা বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থিত।

রাজ্যের ১০০ থেকে ১১০ আসনে নির্ণায়ক শক্তি সংখ্যালঘুরা
সংখ্যালঘু ভোট রাজ্যের প্রায় ১০০ থেকে ১১০ আসনে নির্ণায়ক শক্তি। এর মধ্যে ৪৩টি অবস্থিত ওই তিনটি জেলায়। অতীতে, পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তার প্রধান কারণ ছিল মুসলিম ভোট দৃঢ়ভাবে আটকে রাখা। তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে রয়েছে এখন এই ভোটব্যাঙ্ক। তাই মিমের হানা এবার তৃণমূলের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। রাজ্যের ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ভোটব্যাঙ্কই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কাছে বড় অস্ত্র। আবার হিন্দুভোট অক্ষুন্ন রাখতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরোহিত-ভাতা চালু করেছিলেন।

তৃণমূলে ভাঙন আর মিম ভোট কাটা, পোয়াবারো বিজেপির
আর এর মধ্যে ওয়াইসির দল রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে নিশ্চিত। বিজেপি সাম্প্রতিককালে বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাকে দলে যোগদান করিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলে ভাঙন আর মিম ভোট কাটার জন্য বাংলায় পা দেওয়ায় বিজেপির পক্ষে পোয়াবারো বলাই যায়।

সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যায় পৌঁছতে মাত্র ২৭ আসনে পিছিয়ে বিজেপি!
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ১৮টি লোকসভা আসনে জিতেছে। লোকসভা ভোটের নিরিখে রাজ্য বিধানসভার ১২১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তৃণমূল কংগ্রেস ২২টি লোকসভা আসনে জয়ী হয়েছিল। আর লোকসভা নির্বানের নিরিখে বিধানসভার ১৬৩টি আসনে এগিয়েছিল। সুতরাং এই ভিত্তিতে গেরুয়া ব্রিগেড এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যায় পৌঁছতে ২৭ আসনে পিছিয়ে রয়েছে।

অধিকারী পরিবারের প্রভাব অখণ্ড মেদিনীপুরের ৩৫টি আসনেই
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বর্তমানে আসনসংখ্যার এই সমীকরণটি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। আরও পরিবর্তিত হতে পারে। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগদানের ফলে তৃণমূল অনেক আসনে পিছিয়ে পড়বে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত। অধিকারী পরিবারের প্রভাব অখণ্ড মেদিনীপুরের ৩৫টিরও বেশি আসনে রয়েছ বলে অভিমত।

ধর্মীয় ভিত্তিতে ভোটের মেরুকরণ হলে ক্ষতি তৃণমূলেরই
ধর্মীয় ভিত্তিতে ভোটের মেরুকরণ হতে পারে এবার। ওয়েইসির দল মিম এবার বাংলায় এই ধর্মীয় ভোট মেরুকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ধর্মীয় ভিত্তিতে ভোটের মেরুকরণের ফলে সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের একটি অংশ মিমের পক্ষে যেতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তা হলে তৃণমূলেরই ক্ষতি।

নয়া সমীকরণে হাওয়া ঘুরেছে পাহাড়-সমতলেও, গুরুং কতগুলি আসন দেবেন মমতাকে