তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে এবার বিস্ফোরক মমতার ক্রীড়াবিদ সৈনিক
বিধানসভা নির্বাচনের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় এবার টলিউডের দাপটের কাছে ম্লান হয়ে গিয়েছেন খেলোয়াড়রা। লক্ষ্মীরতন শুক্লা আগেই রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছিলেন। বসিরহাট দক্ষিণের দীপেন্দু বিশ্বাসকেও আগাম কিছু না জানিয়ে বাদ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রহিম নবির মতো গতবারের প্রার্থী তুষার শীলও এবারের প্রার্থী তালিকায় ব্রাত্য। মনোজ তিওয়ারি ও বিদেশ বসু, এই দুই ক্রীড়াব্যক্তিত্বই এবার প্রার্থী হয়েছেন।দীপেন্দু গতকালই যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। শুধু দীপেন্দু নয়, প্রার্থী হতে না পেরে সোনালি গুহ, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, জটু লাহিড়ী, শীতল সর্দার এবং এমনকী হবিবপুরের তৃণমূল প্রার্থী সরলা মুর্মুও গতকাল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে এবার তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েক দশকের সৈনিক তথা আমতা বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১৬ সালের তৃণমূল প্রার্থী যোগ বিশারদ, বঙ্গভূষণ তুষার শীল।
কয়েক দশকের ছায়াসঙ্গী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কয়েক দশকের সম্পর্ক তুষার শীলের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন তুষার শীল সাইয়ের জেনারেল বডি-র সদস্য হন। আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কয়লামন্ত্রী তখন কোল ইন্ডিয়া স্পোর্টসের প্রেসিডেন্ট হন তুষার শীল। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ৪১টি ফ্যাক্টরিকে নিয়ে স্পোর্টস পরিচালনা করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজনীতিতে যোগদান। দলের মুখপত্র জাগোবাংলায় নিয়মিত লেখালিখিও করতেন প্রথম থেকে। রাজ্য সরকার থেকে বঙ্গভূষণ সম্মানও পেয়েছেন।
আমতা আসনে লড়েন ২০১৬ সালে
হাওড়া জেলার আমতা আসনটি কংগ্রেসের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ষোগ বিশারদ তুষার শীলকে প্রার্থী করেন। যদিও প্রায় সাড়ে চার হাজার ভোটে তিনি হেরে যান। অন্তর্ঘাত করে হারানোর অভিযোগ উঠেছিল। হারলেও তুষার শীলকেই আমতার মানুষের পাশে থাকার দায়িত্ব দিয়ে পাঠান দলনেত্রী। সাধ্য়মতো সেই চেষ্টা করে গিয়েছেন তুষার শীল। তাঁকে রাজ্যের আয়ুষ হাসপাতাল তৈরির দায়িত্বও দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে আগেরবার যাঁদের অন্তর্ঘাতে তাঁকে হারতে হয়েছিল বলে অভিযোগ, তাঁদেরই একজন প্রার্থী হওয়ায় বেজায় ক্ষুব্ধ তুষার শীল। হাওড়া গ্রামীণের তৃণমূল জেলা যুব সভাপতি সুকান্ত পালকে এবার আমতা আসনে প্রার্থী করেছে তৃণমূল।
ব্রাত্য হয়ে ক্ষোভ
নিজের ক্ষোভ এতদিন ধরে গোপনই রেখেছেন তুষার শীল। আজ ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলার তরফে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলে তিনি তাঁর ক্ষোভ উগড়ে দিলেন। বলেন, দলনেত্রীর নির্দেশে আমি আমার কর্তব্য পালনে খামতি রাখিনি। প্রচুর ফোন পাচ্ছি। এখনও আমি আমতা গেলে কয়েক হাজার মানুষ আমার সঙ্গে থাকবেন। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে। আমি হেরে গেলেও হারিয়ে যাইনি। প্রায় পাঁচ বছর ধরে সেখানে মানুষের পাশে থেকেছি আপদে-বিপদে। আমি যোগের মানুষ। দুষ্ট চরিত্র, দুষ্ট বুদ্ধি, মিথ্যা বলা, অপরকে লাথি মারা, প্রার্থীকে হারিয়ে প্রার্থী হওয়ার লোভ আমার কোনওদিন ছিল না। ঈশ্বর যেন আমাকে সেই পথে হাঁটতে বাধ্য না করেন।
কৃষ্ণই আদর্শ
তুষার শীল বলেন, রাজনীতিকে আত্মস্থ করে নিয়েছি। রাজনীতিতে যখন এসেছি তখন হারিয়ে যাব না। জহুরির চোখ সঠিককে চিনতে ভুল করবে, এটা কাম্য নয়। কোনও কিছু সাময়িক চকচক করলেই তা আসল মনে করা ঠিক নয়। ভবিষ্যৎই সব বলবে। তবে আমার আদর্শ কৃষ্ণ। কৃষ্ণকেই আমি সবচেয়ে বড় রাজনীতিবিদ মনে করি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেইমানিও করব না। রাজনীতিতে কেউ অন্য গ্রহ থেকে আসেনি। সত্যের অপলাপ করা উচিত নয়। বর্তমান ক্ষণস্থায়ী। যে কোনও সময় অতীত হয়ে যেতে পারে, তার জায়গা নিতে পারে ভবিষ্যৎ। আমার বিশ্বাস, ঈশ্বর আমাকে যোগ্য জায়গাতেই রাখবেন। তবে দল ডাকলে প্রচারে যেতে আপত্তি নেই। কিন্তু যে আঘাত বা অসম্মানের মুখোমুখি হলেন সেটা মানতে খুবই কষ্ট হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েক দশকের সৈনিকের।
বেশিদিন ডুবে থাকব না
তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গেই ভালোবাসার সম্পর্ক, সুস্থ রাখার সম্পর্ক রয়েছে তুষার শীলের। সেই পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এখনই দলত্যাগের বিষয়ে কিছু ভাবেননি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গীদের দলত্যাগ দেখে তাঁর খারাপ লাগছে। তুষার শীল বলেন, আমি ফতনার মতো। এক জায়গায় ডোবালে অন্য জায়গায় উঠব। আবার বলছি, আমি যোগের মানুষ। বেশিদিন আমাকে ডুবিয়ে রাখা যাবে না। মানুষের বৃহত্তর স্বার্থের জন্য কাজ করার সুযোগ যেখানে থাকবে সেখানে তুষার শীলও থাকবে। ভালো রাজনীতিবিদ হিসেবেও একটা ছাপ রাখা তো দরকার।