তিন দশক পর পাহাড়ে ফুটেছে ঘাসফুল, মমতা ম্যাজিকে ‘ভ্যানিস’ মোর্চা
মমতা ম্যাজিকে পাহাড়েও ফুটল ঘাসফুল। মিরিক পুরসভা দখল করে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। মিরিকের ন’টি ওয়ার্ডের মধ্যে ছ’টিতে জয়ী হয়ে পুরসভার ক্ষমতা মোর্চার হাত থেকে ছিনিয়ে নিল তৃণমূল কংগ্রেস।
তিন দশক পর সমতলের কোনও রাজনৈতিক দল পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। মমতা ম্যাজিকে পাহাড়েও ফুটেছে ঘাসফুল। মিরিক পুরসভা দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৭-য় এই ব্যাটন বদল এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। মিরিক পুরসভার ক্ষমতা মোর্চার হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর তৃণমূল কংগ্রেস ক্রমশ পাহাড়ে বিস্তার লাভের চেষ্টা করে।
কোন অঙ্কে মিরিক জয়
মিরিক পুরসভার ১, ৪, ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড বাদে বাকি ন'টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় তৃণমূল। পাহাড়ে কোনও প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। সবক'টি আসনই তারা ছেড়ে দিয়েছিল জোটসঙ্গী মোর্চাকে। সেই মোর্চা যে এবার মিরিকে খারাপ ফল করতে চলেছে, তার আভাস আগে থেকেই মিলেছিল। বিমল গুরুং চিন্তিত ছিলেন মিরিক পুরসভা দখলে রাখার ব্যাপারে। কেননা এই পুরসভায় মোর্চার অনেক গোঁজ প্রার্থী ছিল। ফলে সুবিধা হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলের। সেই সুবিধা কাজে লাগিয়েই মিরিক দখল করল তারা।
মিরিককে পুরসভা ঘোষণা
মিরিকই ছিল তৃণমূলের পাহাড়ে ওঠার সোপান। সেই টার্গেট যে আগে থেকেই কষা ছিল, তা বোঝা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাপত্রেই। মিরিককে মহকুমা হিসেবে ঘোষণা করা তাঁর উদ্দেশ্যপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। মিরিকের উন্নয়ন যে মোর্চা আমলে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তাও তুলে ধরা হয়েছিল প্রচারে। আর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাতেই বাজিমাত।
তিন দশক পর ব্যাটন বদল
তিন দশক আগে বামেরা পাহাড়ে প্রভাব রেখেছিল। তারপর থেকেই প্রথমে সুভাষ ঘিসিং, তারপর বিমল গুরুংই দাপট দেখিয়ে এসেছেন। এবার পট পরিবর্তন হল পাহাড়ে। পাহাড়ে মোর্চাকে ধরাশায়ী করে জয়ী হল তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার ছুটে গিয়েছেন পাহাড়ে। পাহাড়ে নিজের আধিপত্য কায়েম করেই ছাড়লেন তিনি। মিরিক দিয়েই শুরু হল তাঁর জয়যাত্রা।
গোর্খাল্যান্ড ইস্যু ব্যর্থ
পাহাড়ে সর্বত্র গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে ঝড় তুলেছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বিমল গুরুংয়ের সেই পৃথক গোর্খাল্যান্ড ইস্যু কোনও কাজই করেনি মিরিকে। বরং মমতার প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভরসা রেখেছেন মিরিকের মানুষ। ভোট হয়েছে বঙ্গভঙ্গ ইস্যু বনাম উন্নয়ন ইস্যুতে। শেষমেশ মমতার উন্নয়নের বার্তাকেই সিলমোহর দিয়েছে পাহাড়বাসী।
অন্য তিন পুরসভাতেও ফুটেছে ফুল
মিরিকে হারলেও পাহাড়ের চার পুরসভায় তিনটিতে দাপট অব্যাহতই রেখেছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পংয়ে বিমল গুরুংয়ের উপরই ভরসা রেখেছিলেন পাহাড়বাসী। তিনটি পুরসভাতেই প্রাধান্য রেখে জয় পায় মোর্চা। তবে তিনটি পুরসভাতেই ঘাস ফুল ফুটেছে। দার্জিলিংয়ে একটি, কার্শিয়াংয়ে তিনটি ও কালিম্পংয়ে দু'টি ওয়ার্ডে জয়ী হয় তৃণমূল।
মমতার হাত ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাহাড়ে
এতদিন পাহাড়ে একপেশে ভোট হয়ে এসেছে বলে অভিযোগ ছিল। কোনওদিন গণতান্ত্রিক পথে ভোট হয়নি। উন্নয়ন হয়নি। এবারই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পাহাড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় বলে ব্যাখ্যা দার্জিলিংয়ের তৃণমূল কংগ্রেস।