নার্সিংহোমের আড়ালে শিশুপাচার চক্র, বিস্কুটের বাক্সে উদ্ধার ২ সদ্যোজাত
ভরসার নার্সিংহোমেই শিশু পাচার চক্রের রমরমা। দু’বছরের বেশি সময় ধরে নার্সিহোমের আড়ালে চলছে শিশু কেনবেচার গর্হিত ব্যবসা।
উত্তর ২৪ পরগনা, ২২ নভেম্বর : ভরসার নার্সিংহোমেই শিশু পাচার চক্রের রমরমা। দু'বছরের বেশি সময় ধরে নার্সিহোমের আড়ালে চলছে শিশু কেনবেচার গর্হিত ব্যবসা। সোমবার রাতে পুলিশ ও সিআইডি-র যৌথ অভিযানে প্রকাশ্যে চলে এল এই চাঞ্চল্যকর ব্যবসার রহস্যঘন কাহিনি। শিশু পাচার চক্রের পাণ্ডা নাজমা-সহ ন'জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করল সিআইডি। বিস্কুটের বাক্স থেকে মিলল দুই সদ্যোজাতও।
মাত্র দু'লাখ টাকা ফেললেই মিলত পুত্রসন্তান। আর কন্যা সন্তান চাইলে তারও অর্ধেক দামেই পাওয়া যেত। ফর্সা হলে তার দর একটু চড়া। উত্তর ৪ পরগনার বাদুড়িয়া নার্সিংহোমে এই চক্রের মূল পাণ্ডা এক মহিলা। নাম তার নাজমা। নার্সিংহোম থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে তার ওষুধ দোকান। এই ওষুধ দোকানেই ডিল হত শিশু পাচারের।
বাদুড়িয়ার সোহান নার্সিংহোম। এই সেবাসদনের আড়ালেই হারিয়ে গিয়েছে কত শিশুর পরিচয়। কোনও মা সুস্থ সন্তান প্রসব করলেও তাঁর বাড়ির লোকজনকে মৃত সন্তান প্রসবের কথা জানিয়ে, তাঁর সুস্থ শিশুকে চড়া দামে বিক্রি করে দেওয়া হত। অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে এই নার্সিংহোমে অবিবাহিতারা সন্তানের জন্ম দিতেন। জন্মের পর সেই সন্তানকেও মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হত।
সিআইডি-র কাছে গোপন খবর ছিল। সেইমতো তাঁরা বাদুড়িয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে। গতরাতে আচমকা হানা দেয় ওই নার্সিংহোমে। নিছক অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই নয়, একাবারে বমাল ধরা পড়ল এই পাচারকারীরা। নার্সিংহোমে বিস্কুটের বাক্স থেকে উদ্ধার হল দুই সদ্যোজাত। শিশু দুটিকে উদ্ধার করে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নাজমা ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে নার্সিংহোমের মালিক আশাদুল জামাল-সহ আটজনকে। পুলিশ জানিয়েছে, জামালের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনারই হাবড়ায়। ধৃত অন্যরা হল প্রভাত সরকার, ঝন্টু বিশ্বাস, উৎপল ব্যাপারী, সত্যজিৎ সাহা, আমিরুল বিশ্বাস ও বাগবুল বৈদ্য। এরা প্রত্যেকেই উতত্র ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
আদালতে পেশ করে ধৃতদের সিআইডি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি জানতে চাইছে, ধৃতদের সঙ্গে কোনও আন্তঃরাজ্য শিশু পাচার চক্রের যোগ রয়েছে কি না।