পাহাড় চুড়োয় আতঙ্ক, মোর্চার হিংসায় পুজোর ভ্রমণে বাড়া ভাতে ছাই
মোর্চার ‘শাসন'-এ পাহাড় এখনও জ্বলছে। পর্যটনের এই ভরা মরশুমে পাহাড় থেকে পর্যটকরা ফিরে গিয়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। পুজোতেও পর্যটকশূন্য হওয়ার আশঙ্কা পাহাড়ে।
পর্যটনের ভরা মরশুমে পাহাড় পর্যটকশূন্য! সেই ক্ষত কি মেরামত করা সম্ভব হবে আসন্ন পুজোর মরশুমে? বুকিং বাতিলের বহর দেখে মাথায় হাত পড়েছে ট্যুর অপারেটরদের। পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনে তৈরি হওয়া ক্ষত মেরামতের কোনও সম্ভাবনা এখনই দেখছেন না পর্যটকরা। তাই এখন থেকেই পুজোয় ভ্রমণের পরিকল্পনায় বদল আনতে চলেছেন অনেকেই। দার্জিলিংয়ের বুকিং বাতিল করে অনেক পর্যটকই সিকিমমুখী হতে চলেছেন।
মোর্চার 'শাসন'-এ পাহাড় এখন জ্বলছে। পর্যটনের এই ভরা মরশুমে পাহাড় থেকে পর্যটকরা প্রায় সকলেই ফিরে গিয়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। পাহাড়ে অশান্তির কালো মেঘ এখনই সরার কোনও লক্ষণ দেখছেন না পর্যটকরা। ট্যুর অপারেটরা এখনই আশাহত করছেন না ঠিকই, কিন্তু পর্যটকরা আর ভরসা রাখতে পারছেন না। বেশিরভাগ পর্যটকই সংশয়ে পড়ে পুজোর ভ্রমণ-পরিকল্পনা থেকে আপাতত বাদ রাখছে দার্জিলিংকে।
পর্যটকদের এহেন সিদ্ধান্তে পুজোতেও পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন। অনেক ট্যুর অপারেটরের বুকিং একশো শতাংশই বাতিল হয়ে গিয়েছে। ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের তরফে জানানো হয়েছে, পুজোর মরশুমে বিদেশ থেকে বহু পর্যটক দার্জিলিংয়ে আসেন বেড়াতে। তাঁদের অধিকাংশেরই বুকিং হয়ে যায় তিন-চারমাস আগে থেকেই। পাহাড়ে অশান্তির খবরে এবার তাঁরা আর পাহাড়ে আসতে চাইছেন না। বাঙালি পর্যটকরাও এবার দার্জিলিংবিমুখ অশান্তি এড়াতে।
ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মনে করা হচ্ছে, পাহাড়ে অশান্তির আগুন যদি পুজোর মরশুমেও জ্বলতে থাকে, তবে ৭০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হতে পারে। ট্রাভেল এজেন্টরা আরও সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও ক্যানসিলেশন ফি নেওয়ার ব্যবস্থা নেই।
হোটেল বুকিং বা্তিল করলে পর্যটকদের ২০০০-২৫০০ টাকা ক্যানসিলেশন ফি দিতে হচ্ছে। বিমান বা ট্রেনের বুকিং বাতিল করলেও ক্যানসিলেশন ফি দিতে হয়। তাই ট্রাভেল এজেন্টরা বলছেন, আমাদের বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ভরা মরশুমে পর্যটকশূন্য পাহাড়। পুজোই তাঁদের শেষ ভরসার জায়গা ছিল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, সেই আশাও শেষ হতে বসেছে।
পুজোর বাকি আর তিনমাস। দূরপাল্লার ট্রেনে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা এখন তিন-চারমাস আগে থেকেই করা যায়। উত্তরবঙ্গমুখী কোনও ট্রেনেই সংরক্ষিত আসন ফাঁকা নেই। তাদের বেশিরভাগই পাহাড়ে যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেছেন। ট্যুর অপারেটরদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, সেই বুকিংও বাতিল হয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
এমতাবস্থায় আগামীদিনে পাহাড়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই অপারেটররা পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করতে চাইছেন। তবে ট্রাভেল এজেন্ট অফ বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সিংহরায় বলেন, পাহাড়ের পরিস্থিতি যদি এখনই শান্ত হয়ে যায়, তাহলে নতুন করে আর সমস্যা তৈরি হবে না। কিন্তু ফের গন্ডগোল হলেই ব্যবসা লোকসানের মুখে পড়তে বাধ্য। এখনও তিনমাস বাকি পুজোর। আশা করছি পুজোয় সুষ্ঠুভাবে দার্জিলিং ঘুরতে পারবেন পর্যটকরা।
পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতির যদি কোনও পরিবর্তন না হয়, তবে দার্জিলিংয়ের বিকল্প হিসেবে মানুষ সিকিমমুখী হতে শুরু করবে। সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিন পর দার্জিলিংকে হারিয়ে সিকিম পর্যটন ব্যবসায় লাভবান হবে বলেই মনে করছেন ট্যুর অপারেটররা।