কালা জাদুর বেতাজ বাদশা হতে গৃহবধূকে প্রলোভন দেখিয়ে নরবলি দেয় রামপদ
কালা জাদুর দুনিয়ায় বেতাজ বাদশা হওয়ার ‘স্বপ্ন' পেয়ে বসেছিল তাকে। তার জন্য দিতে হবে নরবলি। তাই পরিকল্পনামাফিক গ্রহ দোষ কাটানোর টোপ দিয়ে গৃহবধূকে ফুঁসলিয়ে নিজের ডেরায় এনেছিল ‘তান্ত্রিক' রামপদ মান্না।
তমলুক, ২১ অক্টোবর : কালা জাদুর দুনিয়ায় বেতাজ বাদশা হওয়ার 'স্বপ্ন' পেয়ে বসেছিল তাকে। তার জন্য দিতে হবে নরবলি। তাই পরিকল্পনামাফিক গ্রহ দোষ কাটানোর টোপ দিয়ে গৃহবধূকে ফুঁসলিয়ে নিজের ডেরায় এনেছিল 'তান্ত্রিক' রামপদ মান্না। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের গড়কিল্লার বাসিন্দা। তরুণীকে নিজের আয়ত্তে এনে কার্যসিদ্ধি করে সে। সময়মতো নরবলি দিয়ে 'সাধনা' পূর্ণ করে।
কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। তমলুকে মুণ্ডহীন বিবস্ত্র তরুণী খুনের তদন্ত নেমে পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল তান্ত্রিক। তাকে জেরা করেই উঠে এল এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। একেবারে গল্পের মতো এই তান্ত্রিকের কীর্তি-কাহিনি। ওই অজ্ঞাত তরুণীর পরিচয় সামনে এসে পড়তেই তদন্ত মোড় নিল অন্যপথে।
প্রথমে ওই তরুণীকে একজন নিছক যৌনকর্মী মনে করেই তদন্ত এগোচ্ছিল। কিন্তু ওই মহিলা কোনও যৌনপল্লির মহিলা নন। পার্বতী সরকার নামে বছর তিরিশের ওই মহিলার ঘর আছে, সংসার আছে, আছে স্বামী-সন্তানও। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি বেপরোয়া জীবনযাপন করছিলেন। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে আসা, অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে যাওয়া ছিল তাঁর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
বাগুইআটির সঞ্জীব সরকারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল পার্বতীর। ১৬ বছর আগে নাবালিকা অবস্থায় প্রেম করে তাদের বিয়ে। এক মেয়ে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে, ছেলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তবু সংসারে মন ছিল না তাঁর। তা নিয়েই স্বামীর সঙ্গে যত অশান্তি। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বেপরোয়া জীবনযাপন করতে থাকেন পার্বতী। নিউটাউনের হাতিয়াড়ায় তার বাপের বাড়ি। বেশ কিছুদিন ধরে স্বামীর সংসার 'ত্যাগ' করে তিনি বাপের বাড়িতে চলে আসেন। মায়ের একটি তেলেভাজার দোকানে তিনি প্রায়ই বসতেন।
সেখানেই রামপদ মান্নার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। রামপদর এলাকায় একটি সেলুন দোকান রয়েছে। এলাকায় ম্যজিসিয়ান হিসেবেই তার সুখ্যাতি ছিল। ক্রমেই পার্বতীর সঙ্গে রামপদর ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। পার্বতীর বাপের বাড়িতেও যাতায়ত শুরু করে রামপদ। পার্বতীর জীবনবৃত্তান্ত শোনার পর বশীকরণ, তন্ত্রমন্ত্র, তুকতাকের মাধ্যমে তাঁর সমস্ত গ্রহদোষ কাটানোর ফরমান দিয়ে দেয় রামপদ। সেই প্রলোভনে পা দিয়েই তমলুকে গ্রহদোষ কাটাতে যান পার্বতী।
গত শুক্রবার বিকেলে রামপদ তাঁকে তমলুকে নিয়ে আসে। ওই রাতেই নরবলি দেয় সে। তারপর নিজেদেরই পান বোরজের ধারে ফেলে দেয়। পরদিন সকালে মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়। তারপরই এই ঘটনায় রামপদ গ্রেফতার হয়। ম্যাজিসিয়ানের ফাঁদে পড়ে ওই মহিলাকে প্রাণে মরতে হল। এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত বলে পার্বতীর স্বামী সঞ্জীব সরকারের অভিযোগ।