রাত পোহালেই সব জনস্রোত মিলে যাবে সাগরসঙ্গমে মকরসংক্রান্তির পূণ্যস্নানে
রাত পোহালেই সব জনস্রোত মিলে যাবে সাগরসঙ্গমে। অপার সাগরের জলরাশির সেই কলতান ভেদ করে সাগরতীরে শোনা যাচ্ছে মানবগর্জন। আসমুদ্রহিমাচলের মানুষ রাত পোহালেই সাগর সঙ্গমে মিলিত হবেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ১৩ জানুয়ারি : রাত পোহালেই সব জনস্রোত মিলে যাবে সাগরসঙ্গমে। অপার সাগরের জলরাশির সেই কলতান ভেদ করে সাগরতীরে শোনা যাচ্ছে মানবগর্জন। আসমুদ্রহিমাচলের মানুষ রাত পোহালেই সাগর সঙ্গমে মিলিত হবেন। আগামীকাল মহাপুণ্যস্নান। তীর্থস্নানের জন্য তিনদিন আগে থেকেই গঙ্গাসাগরের বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ছে মানুষের ঢেউ। শুক্রবার সকালে সেই ঢেউ সুনামির চেহারা নিয়েছে।
কাকদ্বীপের হারউড পয়েন্ট, লট নং ৮ ঘাট হয়ে লঞ্চে চেপে কচুবেড়িয়া। তারপর যেদিকেই চোখ যায় শুধু মানুষের প্লাবন। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। প্রতিদিনই একজন করে মন্ত্রী বা জনপ্রতিনিধি আসছেন। দেখভাল করছেন প্রস্তুতির। সাগরমেলার মতো জাতীয় মহোৎসব বলে কথা। কোথাও খামতি রাখতে চাইছে না প্রশাসন।
শুক্রবার পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় গঙ্গাসাগরে উপস্থিত হয়ে খতিয়ে দেখান প্রস্তুতি। রাত পোহালেই শনিবার সকাল থেকে শুরু হবে পূণ্যস্নান। চলবে রবিবার সকাল পর্যন্ত। তারপর পূণ্যর্জন করে ঘরে ফেরার পালা পূণ্যর্থীদের। নানা বেশে হাজির হাজার হাজার সাধু-সন্ন্যাসী। আর দেশ-বিদেশের কত মানুষ এই একটা দিনের জন্য গঙ্গাসাগরে উপস্থিত। নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের মধ্যেও কোথায় যেন তাঁরা সবাই একই পথের পথিক। এই গঙ্গাসাগরই সবাইকে মিলিয়ে দিয়েছে সুনির্দিষ্ট পথে।
জাতীয় এই মহোৎসহ উপলক্ষে বাহারি আলোয় সেজেছে কপিল মুনির আশ্রম তথা মন্দির। কপিলমুনির মন্দিরের মাথায় লাগানো হয়েছে লাউড স্পিকার। নতুন রঙের প্রলেপ পড়ছে মন্দিরের চূড়ায়। তারপর স্বচ্ছতার লক্ষ্য চলছে সাফাই অভিযান। প্লাস্টিক মুক্ত আর নির্মল মেলা উপহার দিতে প্রশাসনের সঙ্গে কোমর বেঁধেছেন স্থানীয়রাও।
শনিবার মকর সংক্রান্তির পূণ্যতিথিতে সাগরের জলে ডুব দিয়ে কপিল মুনির মন্দির পর্যন্ত যান পুণ্যার্থীরা। সেই পথের দু'ধারে বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়েছে। এতদিন পেটের ভাত জোগাতে অস্থায়ী পসরা সাজিয়ে পুজোর সাজি, ডালা বিক্রি করে এসেছেন স্থানীয়ি শিবরাম ভুঁইয়া, বিষ্ণুপদ ঘোড়ুই, লক্ষ্মীময়ী মণ্ডলরা। এখন সেই জায়গায় পাকাপাকি স্টল। প্রায় দেড়শ স্টল থাকছে এবার।
তবে নোটের খাঁড়া ঝুলছে এখনও। মেলায় তো পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মেলায় কি আদৌ সেভাবে কেনাকাটা হবে? তা-ই ভাবাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তবে বিশ্বাস এই তীর্থের অপার মহিমায় গঙ্গা-সাগরের সঙ্গমে পূণ্যস্নানে ধুয়ে যাবে সমস্ত কালিমা।
এবারই প্রথম গঙ্গাসাগরে পাঁচটি হাসাপাতল ইউনিটের পাশাপাশি একটি আইসিইউ ইউনিটও করা হয়েছে। সুব্রতবাবু এদিন বলেন, পরিচ্ছন্নতার বিচারে এবার সাগর মেলা দাতীয় স্তরে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এবার প্রায় ১৮ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হবেন পূণ্যার্জনের লক্ষ্যে।