দলের লোকেদেরই পথে বসালেন তণমূল যুব সভাপতি! বাগদা থানায় লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগ
টাকার বিনিময়ে চাকরি। দলের লোকেদের সামনেই এই টোপ ফেলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল যুবর এক সভাপতির বিরুদ্ধে।
টাকার বিনিময়ে চাকরি। দলের লোকেদের সামনেই এই টোপ ফেলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল যুবর এক সভাপতির বিরুদ্ধে। এই টোপ দিয়ে ইতিমধ্যে হিবজুর মণ্ডল নামে এই যুব সভাপতি কয়েক কোটি টাকা প্রতারণা করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তণমূল কংগ্রেসরই একদল নেতা। ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা অঞ্চল।
২০১২ সাল থেকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে হিবজুর আর্থিক প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন বলে অভিযোগ। সোমবার অর্থাৎ ২৬ নভেম্বর হিবজুর মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরও হয়েছে বাগদা থানায়। আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে একাধিক জন এই এফআইআর দায়ের করেছেন। অভিযোগকারীদের দাবি, এফআইআর দায়েরের পর থেকেই নিখোঁজ হিবজুর। পুলিশও তাঁর নাগাল পাচ্ছে না। যদিও, ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলিকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় হিবজুর এলাকায় থাকার কথা পরিস্কার করে না জানালেও তিনি বলেছেন মঙ্গলবার সকালে তিনি বিশেষ কাজে বারাসতে এসেছেন।
রাজা রামমোহন সর্দার নামে তৃণমূল-এর পঞ্চায়েত সদস্য-এর অভিযোগ তাঁর ভাই মন্ত্রী সর্দারের চাকরি করে দেবে বলে ১,৯১,০০০ টাকা নিয়েছিলেন হিবজুর। ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর তিনি অর্থ ধার হিসাবে দিয়েছিলেন দাবি করেছেন রাজা রামমোহন। তিনি জমি বিক্রি করে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার দেনা করে এই অর্থ দিয়েছিলেন বলে ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলিকে জানিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, হিবজুর তাঁকে বলেছিল যে ভাই মন্ত্রী সর্দারকে চাকরি করে দেবে। দলের কোটায় কাজ চাকরি হয়, এমনটা শুনেই হিবজুর-কে অর্থ দিতে রাজি হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন রাজা রামমোহন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে হিবজুর-এর প্রতারণা ধরা পড়লেও তাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি দেখে মুখ বন্ধ করে ছিলেন। ঘটনার সময় রাজা রামমোহন মালিপোতা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকারই তৃণমূল যুবর সহ-সভপতি পদে ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, কিসমত কারিগর নামে তৃণমূল যুবর এক অঞ্চল সভাপতিকেও দলে টেনেছিলেন হিবজুর। কিসমতও হিবজুর-এর হয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিল বলেও অভিযোগ। যদিও, সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেছেন কিসমত। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি-কে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় কিসমত আমতা-আমতা করে উত্তর দিলেও কোনও মতে সে জানিয়েছেন আর্থিক প্রতারণার এই অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না।
মালিপোতা অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি দীপক ঘোষও চাকরির জন্য ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তবে, দীপকের প্রতিক্রিয়া চাকরি না করে দিলেও আস্তে আস্তে ১০ লক্ষ টাকা শোধ দিয়েছে হিবজুর। এখনও ৫ লক্ষ টাকার বেশি তিনি পাবেন। ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির কাছে হিবজুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়়েন দীপক। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না হিবজুর চাকরি দেওয়ার নাম করে আর্থিক প্রতারণা করেছেন। তিনি জানান পরিবারেরর ৭ সদস্যের চাকরির জন্য কয়েক বছর আগে ১৫ লক্ষ টাকা তিনি দিয়েছিলেন হিবজুরকে। প্রথমে ফোন লাইন কেটে দেওয়ার পর পরে ফের একবার ফোন করে দীপক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেন। তিনি জানান, এই বছরের শুরুতেই দফায় দফায় মোট ৪৫০,০০০ টাকার কয়েকটি চেক তিনি দিয়েছিলেন। কিন্তু,অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের চেকগুলি সব বাউন্স করেছে। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না বলেও ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলি-কে জানান দীপক। দলের লোক এভাবে চূণ-কালি মাখাতে পারে তা যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না।
সোমবার বাগদা থানায় মোট ৭ জন অভিযোগ দায়ের করেন। এরমধ্যে বাগদা থানার একটি অভিযোগ-কে গ্রহণ করে বাকিগুলোকে পর্যালোচনার জন্য গ্রহণ করেছে। প্রত্যেকটি অভিযোগে লক্ষ লক্ষ টাকার অভিযোগ রয়েছে। এক অভিযোগকারীর দাবি, কম করেও এই অভিযোগে ৫০ লক্ষ টাকার প্রতারণার কথা বলা হয়েছে। কয়েক বছরে এই অঙ্কটা আনুমানিক ৪৫,০০০,০০০ থেকে ৫০,০০০,০০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
ওয়ানইন্ডিয়া বেঙ্গলির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিযুক্ত হিবজুর মণ্ডলের সঙ্গে। তাঁর পাল্টা দাবি, যারা আর্থিক প্রতারণার কথা বলছেন তারা লিখিত কোনও নথি দেখাতে পারবে? যেখানে অর্থ নেওয়ার কথা লেখা রয়েছে! হিবজুরের আরও দাবি, যে তাঁকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হচ্ছে। এতদিন ধরে কেউ কোনও কথা বলল না অথচ আচমকা থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়ে গেল? এমন প্রশ্ননও করেছেন হিবজুর। তাঁর দাবি, উপেন বিশ্বাস মন্ত্রী থাকালীন তাঁর সিএ তন্ময় চক্রবর্তীর কথায় এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলতে হয়েছিল। সভা করার নামে এই টাকা তৃণমূল যুবাকে দিয়ে তোলানো হয়েছিল। কিন্তু, সে সব সভা কখনও হয়নি। উল্টে গত বিধানসভা নির্বাচনে হেরে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন উপেন বিশ্বাস। যাঁদের কাছ থেকে তাঁরা অর্থ আদায় করেছিলেন তাঁরা এরপর সমস্যা তৈরি করেন। অনেক কষ্টে তিনি সেই অর্থ মেটাচ্ছেন বলেও দাবি করেছেন হিবজুর। বাগদা অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে তাঁকে হটানোর জন্য জেলার এক শ্রেণীর নেতারা উঠে-পড়ে লেগেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন হিবজুর। এদের মধ্যে শঙ্কর আঢ্য-র দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি। বাগদা অঞ্চলের পর্যবেক্ষক তথা বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য-র সামনে নাকি রোজ হাজিরা দিতে হয়। কিন্তু তিনি সেই পথও মারান না। আর সেই কারণে শঙ্কর আঢ্য তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছেন। নানা অভিযোগ করে ইতিমধ্যেই জেলা নেতৃত্বকে চিঠিও দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন হিবজুর।
তাঁর অভিযোগ সেই চিঠি নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাননি। সোমবার তাঁর বাড়ির সামনে থেকে বেশকিছু তাজা বোমাও উদ্ধার হয়েছে। হিবজুরের অভিযোগ তাঁকে সরাতে খুনের চক্রান্তও হয়েছে। যে কোনও দিনই তিনি খুন হতে পারেন বলে দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে হিবজুর-এর অভিযোগ, এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিভিন্ন পদে ভোটে দাঁড়াতে ও প্রধান পদ পেতেও লক্ষ-লক্ষ টাকার খেলা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ।